Image default
আন্তর্জাতিক

বাস্তবতার পথেই হাঁটছে পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

শীতল যুদ্ধের পর এই প্রথম পরমাণু বিপর্যয়ের ভয় পাচ্ছে সারা বিশ্ব। আলোচনার মধ্যমণি এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ডেমোক্রেটিক পার্টির এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পুতিনের ইঙ্গিতকে হালকা করে দেখার কারণ নেই। তার কথাকে রসিকতা ভাবা উচিত নয়। গত শুক্রবার বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি বন্ধে বিশ্বকে এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বাইডেন নন, সমগ্র বিশ্বেই আজ শঙ্কায় পড়েছে- আরেকটি হিরোশিমা-নাগাসাকির ভয়াবহতা দেখার জন্যে। বরং এর চেয়ে আরো বেশি ভয়াবহতার শঙ্কায় রয়েছে বিশ্ব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ১৯৬২ সালে কিউবার মিসাইল সংকটের পর রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া এরই মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্র ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে। পুতিন পশ্চিমাদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষা করতে তিনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত। এবং এটা ‘ধাপ্পা’ নয়। পুতিন তার প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পারমাণবিক শক্তি বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র পুতিনের হাতে: আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যার দিক দিয়ে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র সবচেয়ে বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের হিসাব বলছে, মস্কোর হাতে বর্তমানে আনুমানিক ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ৫ হাজার ৪২৮টি। তবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র এত বেশি যে সেগুলো দিয়ে পুরো বিশ্ব কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে। দেশ দুটির হাতে বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশ রয়েছে। যে কোনো সময় হামলা চালানোর জন্য ১ হাজার ৪৫৮টি পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন রেখেছে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র মোতায়েন রেখেছে ১ হাজার ৩৮৯টি। এই অস্ত্রগুলো যুক্ত রয়েছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম), সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমানে।

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের বিবেচনা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বহু এগিয়ে রাশিয়া। দেশটির হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ গুণ রয়েছে এ অস্ত্র। কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ‘কৌশলগত’ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর সক্ষমতা বড় পারমাণবিক বোমার চেয়ে বেশ কম। বড় বোমাগুলো নিমেষে মস্কো, ওয়াশিংটন ও লন্ডনের মতো বড় শহরগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে।

বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নেবে: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ও সিআইএর সাবেক প্রধান ডেভিড পেট্রাউস বলেন, মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে ওয়াশিংটন ও এর মিত্র ন্যাটো জোট ইউক্রেনে সব রুশ সেনা ও সমরাস্ত্র এবং কৃষ্ণসাগরে মস্কোর সব নৌবহর ধ্বংস করবে। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল লিওনিড রেশেতনিকভ দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বিষয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য, প্রশিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে এরই মধ্যে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো। এ অংশগ্রহণ যদি আরো বাড়তে থাকে, তবে এটি বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে, যে যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে পারমাণবিক অস্ত্র।

ক্রমশই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে: ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে একসময় যে পরমাণু যুদ্ধকে অসম্ভব ভাবা হতো, তা এখন বিশ্ববাসীর কাছে বাস্তব মনে হচ্ছে। পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আর কেউই অসম্ভব বলছে না। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে একটি পারমাণবিক ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি ‘অবিশ্বাস্যরকম বাস্তব’। ইউক্রেন যুদ্ধ এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়া কতটা কঠিন।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদনে বলছে, স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আগামী বছরগুলোয় বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংখ্যা বাড়বে।

যে ক্ষতি হতে পারে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় ১৫ কিলো টনের বোমায় মারা যায় ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ। আর পারমাণবিক অস্ত্র এখন এক হাজার কিলো টনের বেশিও হতে পারে। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের পর অনেক অগ্নিগোলক দেখা যায় এবং বিস্ফোরণের ঢেউ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ভবনসহ অন্য অবকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে।
পুতিনের ‘না’ হতে পারে ‘হ্যাঁ’: নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং নোভোয়া গেজেটা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ মনে করেন, পুতিন ‘কোনোদিনই করবেন না’ বলে যা ভাবা হয়েছিল এমন কাজই তিনি করেছেন। তিনি কোনোদিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করবেন না, তিনি সেটা করলেন। তিনি ডনবাসে যুদ্ধ শুরু করবেন না, সেটাই করলেন। ইউক্রেন দখল করতে পুরোদমে তিনি কোনোদিনই হামলা চালাবেন না নিশ্চয়ই? কিন্তু তিনি সেটাও করলেন। যারা বলেন- তিনি কখনোই শুরুতে পারমাণবিক বোমার বোতামে চাপ দেবেন না, উনি তা-ই করবেন।

রাশিয়া ছাড়া একটি পৃথিবীর কি প্রয়োজন : ২০১৮ সালে এক তথ্যচিত্রে প্রেসিডেন্ট পুতিন মন্তব্য করেছিলেন, কেউ যদি রাশিয়াকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তার জবাব দেয়ার আইনি অধিকার আমাদের রয়েছে। পৃথিবী এবং মানবজাতির জন্য সেটা হবে একটা মহাবিপর্যয়। আমি রাশিয়ার একজন নাগরিক এবং রাষ্ট্রপ্রধান। আমি মনে করি, রাশিয়া ছাড়া একটি পৃথিবীর কি প্রয়োজন আছে আমাদের?

পুতিন কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন: মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলজেনহাওয়ার মনে করেন, পুতিনের সামনে তেমন কোনো পথ খোলা নেই। রাশিয়ার জন্য একটি বিকল্প হতে পারে ব্রিটেন এবং ডেনমার্কের মাঝামাঝি নর্থ সি এর কোনো এক যায়গায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে- তাতে কী ঘটে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। আর রাশিয়াতে শাসকই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সেখানে ক্রেমলিনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

মারা যাবে ব্রিটেনের ৯০ শতাংশ মানুষ: যদি পারমাণবিক যুদ্ধ হয় তবে ব্রিটেন মারাত্মক ধ্বংসের মুখে পড়বে। নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পারমাণবিক সংঘাত হলে দুর্ভিক্ষে ৫ বিলিয়ন মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। তবে অস্ট্রেলিয়া এবং আর্জেন্টিনা এই বিপর্যয় থেকে বেঁচে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। আর যুক্তরাজ্যের ৯০ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যাবে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম মেট্রো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়।

Source link

Related posts

নাইজেরিয়ায় নৌকাডুবে ৭৬ জন নিহত

News Desk

পাঁচ হাজার গাড়ি চুরির পর ধরা পড়লেন তিনি

News Desk

ঢাকায় দূতাবাস স্থাপনের ঘোষণা আর্জেন্টিনার

News Desk

Leave a Comment