ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে গোপন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। জেরুজালেম পোস্ট এ বিষয়টি জানতে পেরেছে। তারা বলেছে, ইরান নিয়ে সপ্তাহান্তে অর্থাৎ শুক্রবার পুরো এক ঘন্টা জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ইয়োসি কোহেন। শনিবার দিনশেষে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে চ্যানেল ১২। তাতে বলা হয়েছে, অন্যান্য মিটিংয়ের বাইরেও দু’জনের মধ্যে শুক্রবার এই আলোচনা হয়েছে। এই মিটিংয়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে বা নিশ্চিত কোনোটাই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র জানান, মাউন্ট মেরোন বিপর্যয়ে শোক জানাতে কোহেনের সঙ্গে অপরিকল্পিত আরেকটি বৈঠক প্রায় বাতিলই করেছিলেন বাইডেন। এই বর্ণনা থেকে এটাই মনে হয় যে, ওই মিটিংকে তেমন তাৎপর্য দিয়ে দেখা হয়নি।
তাছাড়া এটাকে অধিক সৌজন্যমূলক একটি সময় বলে মনে করা হয়েছে। এই সত্য-পরবর্তী বৈশিষ্ট্যগুলোর পর এবং বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ন্যূনতম একজন কর্মকর্তা বৈঠকটিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জেরুজালেম পোস্ট জানতে পেরেছে যে, একটি পূর্ণাঙ্গ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এর ব্যাপ্তি ছিল এক ঘন্টা। এটা কোনো সংক্ষিপ্ত সময়ের সৌজন্য সাক্ষাত হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে শুধু শুভেচ্ছা জানানোর মতো ঘটনা হতে পারে না। জেরুজালেম পোস্ট জানতে পেরেছে, এই বৈঠকে ইরান ইস্যু নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা হয়েছে। এতে জো বাইডেন ও ইয়োসি কোহেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম বার্নস। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন ইয়োসি কোহেন।
ফেব্রুয়ারিতে কোহেন মনে করেছিলেন তিনি ইসরাইলি একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে। আগামী ৬ই জুন তিনি মোসাদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন। তার আগেই তিনি ইরান বিষয়ক প্রকল্পে একজন ম্যানেজারের মতো ভূমিকা পালন করতে পারবেন। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান মায়ার বেন শাব্বাত ইরান পলিসিকে নিজের আয়ত্তে নিতে একরকম লড়াই করেন। আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আভিভ কোহাভি দৃশ্যত আরো বিস্তৃত ভূমিকা নেয়ার পর তার ওই সফর দু’মাসের জন্য বিলম্বিত হয়। এর ফলে কোহেনের সামনে সম্ভাবনা মিইয়ে আসে। এ জন্য সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্নসের সঙ্গে শুধু সাক্ষাত করতে যাওয়ার কথা কোহেনের। অন্যদিকে বেন শাব্বাত এবং কোহাভি অন্য অনেক মিটিংয়ে অংশ নেয়ার কথা।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোহেনের বৈঠক নিয়ে কেউই কথা বলছেন না। নভেম্বরে নির্বাচিত হওয়ার পর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলি কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাত করেননি বাইডেন। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল ইস্যুসহ ইরান নিয়ে সুলিভানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বেন শাব্বাত। তবে শেষ মুহূর্তে ইয়োসি কোহেন হয়তো তার আকাঙ্খাকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এবং কক্ষচ্যুত বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে নিয়েছেন। এর কোনোটার উদ্দেশ্যই এটা নয় যে, বর্তমান ইরান নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তন আবশ্যক। কোহেনের সঙ্গে আলোচনায় বাইডেন টিম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্জন করেছে বলে বলা হচ্ছে।