পাকিস্তানের সংসদ ভেঙে দেয়া ছিল ভুল: প্রধান বিচারপতি
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের সংসদ ভেঙে দেয়া ছিল ভুল: প্রধান বিচারপতি

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দেশটির প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে এর পর কী করা উচিত। এখন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল (এজিপি) খালিদ জওয়াদ খান পরামর্শ দেবেন আদালত কোনো প্রক্রিয়ায় সামনে এগোবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের উচিত জাতীয় স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখা।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দায়ের হওয়া মামলায় শুনানিতে এ কথা বলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, আজই এ বিষয়ে আদালত রায় দেবে।

গত ৩ এপ্রিল পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি তা বাতিল করে দেন। ডেপুটি স্পিকারের দেয়া ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি পাশাপাশি এই বেঞ্চে আর যে বিচারপতিরা আছেন তারা হলেন- ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।

এদিন সকালে বিচারপতি আখতার ও বিচারপতি মান্দোখেল সুয়ো মোটো মামলাটির শুনানি শুরু করেন।

শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের রায়ে ডেপুটি স্পিকারে স্বাক্ষর নেই কেন? রায় দিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার কিন্তু স্বাক্ষর দেয়া স্পিকারের। এ ছাড়া ওইদিন সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন এই বিচারপতি।

বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল আরও প্রশ্ন করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কি উপস্থিত থাকা উচিত ছিল না? তার প্রশ্নের উত্তরে সরকারি আইনজীবী স্বীকার করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে থাকা উচিত ছিল।

আইন বিশেষজ্ঞদের ধারণা সুপ্রিম কোর্ট থেকে চারটির কোনো একটি সিদ্ধান্ত পারে। এগুলো হলো-

১. আদালত পার্লামেন্ট পুনর্গঠন এবং আবার অনাস্থা প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপনের নির্দেশ দিতে পারে।

২. এটি নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারে, যা ইমরান খানের দল জোর দিচ্ছে।

৩. ইমেরান খান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন প্রমাণিত হলে তার ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে আদালত বাধা হয়ে উঠতে পারে।

৪. আদালত সংসদীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আগের দিন বুধবার শুনানিপর্বে পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী আলী জাফর অনাস্থা ভোটের আগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভাঙার দায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের কাঁধে চাপিয়েছেন। সেদিন বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, কেন প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ ভাঙার কারণ জানতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রীর কাছে? জবাবে জাফর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মানা প্রেসিডেন্টের কাছে বাধ্যতামূলক।

এর আগে পাকিস্তান পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি বৈঠকের অজুহাত দিয়ে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এড়িয়েছিলেন ইমরান। সরকারের প্রস্তাব মেনে গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংসদ মুলতবি ঘোষণা করেছিলেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট গত ৬ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির সেই বৈঠকের বিবরণলিপি তলব করে সরকারের কাছে।

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী জোটের তরফে পেশ হওয়া অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটির কথা থাকলেও ডেপুটি স্পিকার সুরি তা খারিজ করে দেন। তার যুক্তি ছিল, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব আসলে সংবিধান-বিরোধী এবং তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এ নিয়ে কোনও ভোটাভুটি হতে দিতে পারবেন না তিনি। এর পরেই ইমরানের সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আলভি। তার প্রতিবাদে রাতেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা নেতৃত্ব। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে গত ৪ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট।

Source link

Related posts

থাই প্রধানমন্ত্রীকে মাস্ক না পরায় ৬০০০ বাথ জরিমানা, ৪৮ প্রদেশে বিধিনিষেধ

News Desk

প্রতিশোধ নিতেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালায় রাশিয়া: ইউক্রেন

News Desk

ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি, টানা ৬ মাস যুদ্ধ চালানোর ক্ষেপণাস্ত্র আছে হামাসের হাতে

News Desk

Leave a Comment