মহামারির ইতিহাস অনেক পুরোনো। যখন থেকে ঘটনা লিপিবদ্ধ করা বা ইতিহাস রচনার শুরু, সেই সময় থেকেই মহামারির অস্তিত্ব জানা যায়। মানবসভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, সংক্রামক রোগ তত ভয়ংকর হয়েছে। গত কয়েক হাজার বছরে অসংখ্য মহামারি এই পৃথিবীতে এসেছে। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষান্তও হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির আগে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমরা মোটেই ভাবতাম না যে আমাদেরও এই রোগ হতে পারে। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষ যেসব ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে ছিলেন তার কিছুটা আমাদের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রফেসর স্টিভেন রিলের সার্বিক সহযোগিতায় লুসি রজার্স এর এক গবেষণায় দেখানো হয়, জেসমিনের (ছদ্মনাম) পূর্বপুরুষরা কীভাবে নানা সময় ঘটে যাওয়া মহামারি মোকাবেলা করেছে। তার পূর্বপুরুষরাও বহু মহামারি থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। এসময় তারা কী কী রোগের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তা নির্মূলে কী কী ভূমিকা কার্যকরী হয়েছিল তা তুলে ধরা হয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, অতীতের কিছু ভয়ংকর মহামারির ধরণির বুক থেকে দূর হওয়ার কাহিনি।

জাস্টিনিয়ান প্লেগ

৫৪১ সালে এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুরুটা হয়েছিল মিসর থেকে। এরপর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও সেখান থেকে পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই প্লেগ। ৫৪১ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনপোলে এই মহামারি পৌঁছায়। সম্রাট জাস্টিনিয়ান ওই সময় রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাইজেন্টাইনকে একীভূত করার পরিকল্পনা করছিলেন। মহামারির তাণ্ডবে তা আর হয়নি। এই সম্রাটের নাম থেকেই মহামারির নামকরণ হয়েছিল। কনস্টানটিনপোল থেকে এই রোগ ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও আরব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই প্লেগের মূল বাহক ছিল ইঁদুর। বলা হয়ে থাকে, ভয়ংকর এই মহামারিতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকে আবার বলেন, এতে নাকি বিশ্বের তৎকালীন মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

জাস্টিনিয়ান প্লেগ
ছবি: artstation.com

কিন্তু এই মহামারি কীভাবে ‘নাই’ হলো? যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর দেপল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক থমাস মকাইটিস বলছেন, মানুষ তখন বুঝতে পারেনি যে কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করবে। তাই একপর্যায়ে অসুস্থ লোকদের এড়িয়ে যাওয়া শুরু করে সুস্থরা। যতটুকু জানা যায়, একপর্যায়ে এই রোগের প্রকোপ কমে আসে। যারা বেঁচে ছিল, তাদের মধ্যে ওই রোগের প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছিল।

ব্ল্যাক ডেথ

পৃথিবীর মানুষকে প্লেগ ভুগিয়েছে অনেক। জাস্টিনিয়ান প্লেগের ৮০০ বছর পর আবার আসে প্লেগের মহামারি। ১৩৪৭ সালে এটি ইউরোপে আঘাত হানে। পরবর্তী চার বছরে প্রায় ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই মহামারিতে। এটি ছিল একধরনের বুবোনিক প্লেগ। নাম পেয়েছিল দ্য ব্ল্যাক ডেথ। এ ক্ষেত্রেও রোগের বৈজ্ঞানিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না মানুষ। তবে বুঝতে পেরেছিল যে জনঘনত্ব বেশি হলে রোগ ছড়ায় বেশি। এই মহামারির সময়েই প্রথমবারের মতো নাবিকদের আলাদাভাবে রাখার চল শুরু হয়েছিল। তারা সুস্থ—এটি নিশ্চিত হওয়ার পরই ছাড়া হতো।

ব্ল্যাক ডেথ
ছবি: dakghar24.com

ব্ল্যাক ডেথের দিনগুলোতেই কোয়ারেন্টিনের ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। রোগ নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে জাহাজের নাবিকদের ৪০ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার নিয়ম শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর রাগুসাতে। পরে এই নিয়ম পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের নিয়ম চালু হওয়ার বিষয়টি মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন

ব্ল্যাক ডেথের পরও স্বস্তি মেলেনি লন্ডনের। পরবর্তী প্রায় ৩০০ বছর ধরে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্লেগের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ইংল্যান্ড। ১৬৬৫ সালে সবচেয়ে মারাত্মক বুবোনিক প্লেগ মহামারি আকারে লন্ডনে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাত্র সাত মাসে লন্ডনের প্রায় ১ লাখ অধিবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। এই সময়টায় আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন প্রভৃতিতে অভ্যস্ততা তৈরি হয়। শুরু হয়েছিল আক্রান্তদের চিহ্নিত করার কাজ। এমনকি আক্রান্তের পরিবারের সদস্য হলেও পৃথক চিহ্ন বহন করতে হতো। রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ বা সর্বস্তরের জনসাধারণকে ঘরে থাকার চল শুরু হয়েছিল লন্ডনে। প্রাথমিকভাবে রোগের উৎস হিসেবে কুকুর-বিড়ালের কথা ভাবা হয়েছিল। রোগের আতঙ্কে তখন নির্বিচার শহরের কুকুর-বিড়াল মেরে ফেলা হয়েছিল। লন্ডনের পুরো জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল গ্রেট প্লেগের দিনগুলোয়।

দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন
ছবি: dailyhunt.in

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একপর্যায়ে রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সব অসুস্থ লোকের বাড়িতে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। মৃতদের লাশ জোর করে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এসব পদক্ষেপেই একসময় এই ভয়ংকর প্লেগ পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূর হয়েছিল।

গুটিবসন্ত

ইউরোপ, এশিয়া ও আরব অঞ্চলে গুটিবসন্ত অনেক আগে থেকেই প্রাণঘাতী ছিল। তবে তা ছিল কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। এসব অঞ্চলে অনেকের শরীরে ওই রোগের প্রতিরোধক্ষমতা জন্মেছিল। কিন্তু নতুন উপনিবেশগুলোর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে গুটিবসন্ত ছিল একেবারেই নতুন রোগ। ফলে ১৫ শতকে সেখানে যখন ইউরোপীয়রা যাওয়া শুরু করে, তারা একই সঙ্গে রোগের জীবাণুও পৌঁছে দিতে থাকে। বিশেষ করে মেক্সিকো ও আমেরিকায় গুটিবসন্ত চূড়ান্ত আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। কারণ, এই অঞ্চলের আদিবাসীদের শরীরে গুটিবসন্তের কোনো প্রাকৃতিক প্রতিরোধক্ষমতা ছিল না।

গুটিবসন্ত
ছবি: gettyimages.com

গুটিবসন্তই প্রথম মহামারি, একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যার ইতি ঘটেছিল। গুটিবসন্ত মহামারি হিসেবে দেখা দেওয়ার প্রায় শতাব্দীকাল পর এডওয়ার্ড জেনার নামের একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক গুটিবসন্তের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেন। তাঁর দেখানো পথ ধরেই গুটিবসন্তের কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা খুব দীর্ঘ ছিল। অবশেষে ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীকে গুটিবসন্তমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে।

কলেরা
ছবি: zeenews.com

প্লেগের মতোই কলেরাও মানুষকে ভুগিয়েছে অনেক। কলেরা রোগের প্রথম মহামারির শুরুটা হয়েছিল রাশিয়ায়, ১৮১৭ সালে। সেখানে এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি, ভারত ও আমেরিকাতেও কলেরা ছড়িয়ে পড়েছিল মহামারি আকারে। ওই সময় সব মিলিয়ে ২২–২৩ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। পরবর্তী আরও দেড় শ বছর ধরে কলেরা বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল।

জন স্নো নামের এক ব্রিটিশ চিকিৎসক প্রথম কলেরা রোগের বিস্তারের সঙ্গে দূষিত পানির যোগসূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। গবেষণা করে তিনি দেখিয়েছিলেন, যেসব এলাকায় কলেরায় মৃত্যুর হার বেশি, সেখানে পানি দূষিত ছিল। পরে জন স্নোর নিরলস চেষ্টাতেই লন্ডনের পানির পাম্পগুলোর হাতল সরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এবং ম্যাজিকের মতোই এর পর থেকেই কলেরার সংক্রমণ ওই অঞ্চলে কমে আসতে থাকে। এ ঘটনার পরই
বিশ্বের নগরগুলোর স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা রক্ষার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। আর জন স্নোকে এখন আধুনিক রোগতত্ত্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
অবশ্য উন্নত দেশগুলোতে কলেরা পুরোপুরি নির্মূল করা গেলেও, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা এখনো আছে। কারণ, সেসব দেশে পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব রয়েছে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা

বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারি দেখা গেছে যখন তার ‘গ্রেট-গ্রেট গ্র্যান্ড-প্যারেন্ট’ অর্থাৎ তার বৃদ্ধ প্রপিতামহ/প্রমাতামহী বেঁচে ছিলেন। স্প্যানিশ ফ্লু নামে পরিচিত ইনফ্লুয়েঞ্জার সবচেয়ে প্রাণঘাতী মহামারি দেখা দেয় ১৯১৮ সালে। এতে সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জা
ছবি: bbc.com

অনেকটা আজকের এই নতুন মহামারি করোনাভাইরাসের মতোই রোগীকে আলাদা করে রাখা কিংবা কঠোর কোয়ারেন্টিনের মাধ্যমে এই ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার কমিয়ে আনা সম্ভব। ১৯১৮ এবং ১৯২০ সালের মধ্যে পর পর দুটি মহামারির পর H1N1 ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসে। কিন্তু এর একটি কম মারাত্মক জীবাণু এখনও প্রতি বছর বহাল তবিয়তে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে প্রাণ হারায় এক লক্ষ মানুষ। এটা এখনও প্রতি মৌসুমেই দেখা দেয়। সোয়াইন ফ্লু H1N1 ভাইরাসের একটি রূপ। ২০০৯ সালে এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৯% লোককে সংক্রমিত করেছে। এছাড়াও আমরা মৌসুমি ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে পারি। এখনও প্রতি বছর এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

এইচআইভি/এইডস

হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) মানবদেহের তরল পদার্থ যেমন রক্ত, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। সারা বিশ্বে এই রোগে এপর্যন্ত ৩.২ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এইচআইভি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় । অধ্যাপক রাইলি বলছেন, এইচআইভি হচ্ছে ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী‌ এক ভাইরাস।’ কারণ দীর্ঘদিন ধরে এটা বিস্তার লাভ করে এবং এতে মৃত্যুর হার খুবই উঁচু। এটা খুব দ্রুত ছড়ায় কারণ মানুষ জানতেই পারেনা যে তার এইচআইভি হয়েছে। তবে এই রোগ চিহ্নিত করার পদ্ধতি উন্নত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বাড়ার ফলে মানুষের যৌন আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে এবং মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপদ ইনজেকশন ব্যবহারও বেড়েছে। এর ফলে এইচআইভির বিস্তার কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এরপরও শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই এইডস হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬,৯০,০০০ মানুষ প্রাণত্যাগ করেছে।

এইচআইভি/এইডস

যদিও এইচআইভির কোন প্রতিকার নেই, কিন্তু কেউ যদি এমন দেশে থাকেন যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত এবং যেখানে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ সহজলভ্য সেখানে জ্যাসমিনের মতো কেউ এতে আক্রান্ত হলেও দীর্ঘ জীবন পেতে পারবেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।

সার্স এবং মার্স

২০০২ সালে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ‘সার্স’ এবং ২০১২ সালে ‘মার্স’ ভাইরাস দুটিও এক ধরনের করোনাভাইরাস। সার্স ভাইরাসটি বাদুড় থেকে খাটাশে সংক্রমিত হয়েছিল। পরে তা খাটাশের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এসব ব্যক্তির হাঁচি-কাশি যেসব বস্তুতে লেগেছিল, সেসবের সংস্পর্শে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সার্সে আক্রান্তদের ৯% এবং মার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৫% মারা গেছেন।

তবে বর্তমানে চীনসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি আগের ভাইরাসগুলোর তুলনায় নতুন হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নামকরণ করেছে নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯-এনসিওভি।

এই ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত ৮১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন হংকং, একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং একজন জাপানের নাগরিক। আর বাকিরা সবাই চীনের নাগরিক। বিশেষজ্ঞদের কাছে এই ভাইরাসটি নতুন বলেই এই মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। এই ভাইরাস নিয়ে ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ তাদের বিমান বন্দরে চীন থেকে আগতদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। এসব পদক্ষেপের পরে সারা বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশের মোট ২৪ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাস

আমাদের জীবদ্দশায় আমরা নতুন সার্স করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হচ্ছি যা শ্বাসযন্ত্রের রোগ কোভিড -১৯। ২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের একটি বিবর্তিত সংস্করণ হলো করোনাভাইরাস। রোগ বিশেষজ্ঞরা এ ভাইরাসকে অনন্য হিসাবে বিবেচনা করেছেন। তবে এর লক্ষণগুলির পরিসীমা জানা গেছে, লক্ষণ ছাড়াই মানুষের শরীরে উচ্চ স্তরের সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম এ ভাইরাস। এ কারণে অনেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক রিলে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

করোনাভাইরাস
ছবি: npr.org

যদিও করোনার ভ্যাকসিন এবং কার্যকর চিকিৎসার জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বিশাল অংশের জন্য ঝুঁকিটি সত্যই রয়ে গেছে। জেসমিনও আমাদের মতো এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং এখন আমাদের কমিউনিটিতে করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো সৃষ্ট মহামারিগুলির দীর্ঘ লাইনে।

ঐতিহাসিক রোগের প্রভাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বড় মহামারিতে প্রায় ১০ কোটি মানুষের প্রাণ গেছে। সময়ের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা যেহেতু যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, জনসংখ্যা কম হলে ঐতিহাসিক রোগের প্রভাব আরও বেশি হতো বলে জানিয়েছে হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।

ভাইরাস ট্রান্সমিশন, জনস্বাস্থ্য প্রচারণা, নতুন চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার পূর্ববর্তী সংকটগুলো নিরসনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান মহামারিটির জন্য শেষ খেলাটিও একই ধরণের পদক্ষেপের সংমিশ্রণ থেকে আসতে পারে।

একটি ‘নিরাপদ, অত্যন্ত কার্যকর’ ভ্যাকসিন তার সমাপ্তি আনতে পারে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক রিলে। এর পরিবর্তে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটির সাথে অভ্যস্ততা আরও ভাল হতে পারে। ‘অবশ্যই পাঁচ বছরের মধ্যে, আশা করি খুব তাড়াতাড়ি, আমাদের কাছে সত্যিই একটি ভাল ভ্যাকসিন থাকবে যা পুরো বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হবে বা আমরা পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ছোট ছোট মহামারী সাথে কীভাবে বাঁচতে হয় তা শিখব’, জানান এই অধ্যাপক।

করোনাভাইরাস
ছবি: news18.com

গুটি বসন্ত নির্মূলের প্রমাণ থেকে বলা যায়, যখন বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় একত্রিত হয়, তখন দুর্দান্ত কিছু সম্ভব হয়। উচ্চ পর্যায়ের অবিস্মরণীয় ট্রান্সমিশনের কারণে যদিও নতুন করোনাভাইরাসটি নির্মূল অনেক বেশি জটিলতর চ্যালেঞ্জ, তারপরও অধ্যাপক রিলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, পৃথিবীতে এর আগে আর কখনও এরকম একটি ভাগাভাগি প্রকল্প হয়নি, তবে আশা করি এটি এক পর্যায়ে একটি সমন্বিত সাফল্য হয়ে উঠবে।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো , বিবিসি নিউজ

Related posts

মার্গারেট থ্যাচার: ব্রিটেনের ইতিহাসে একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী

News Desk

জাতিসংঘে জাতির জনকের মহৎকণ্ঠ

News Desk

বাংলাদেশে ২২৪ কিমি গতিবেগের ঘূর্ণিঝড়, নিহত ৫ লাখ মানুষ

News Desk

Leave a Comment