সময় পাল্টাচ্ছে, বদলাচ্ছে গানের ধরন বদলে গেছে গান শোনার মাধ্যম। এখন ইউটিউবকে গান শোনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে অনেকে। নতুন গান, নতুন গানের ধরনকে সানন্দে গ্রহণ করছে শ্রোতারা। ইউটিউবের কল্যাণে উঠে আসছে নতুন নতুন শিল্পী। কিছুদিন আগে যেমন আরমান আলিফ তার ‘নেশা’, ‘অপরাধী’ গান দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তার শুরু ইউটিউব থেকেই। আরমান আলিফের মতো বেশ কিছু নতুন শিল্পীর আগমন ঘটে যারা নিজেদের গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছে। তাদেরই একজন সামস্ ভাই!

শ্রোতাদের কাছে তিনি ‘সামস ভাই’। পুরো নাম শাহরিয়ার আহমেদ সাকিব। চাঁদপুরের মতলবে বেড়ে ওঠা সাকিব বন্ধুদের নিয়ে টুকটাক গান করতেন। পোশাকী নাম হিসেবে বেছে নিলেন ‘সামস ভাই’। ঘরের স্টুডিওতে বানানো সামসের গানগুলো দর্শক শ্রোতারা লুফে নিলেন। এরপর ঈগল মিউজিকের ব্যানারে রিলিজ হয় ‘ঘুম ভালোবাসি’ এই গানটি তাকে পরিণত করে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় গায়কে। ব্যস সেই থেকে শাহরিয়ার আহমেদ সাকিব হয়ে গেলেন সামস ভাই।

ইউটিউবে এক কোটি-অর্ধ কোটি ভিউ হওয়া বাংলা গানের তালিকা করলে একেবারে উপরের দিকেই থাকবে সামস এর নাম। নিজের চেষ্টা, প্রবল ইচ্ছা আর শ্রোতাদের সমর্থনই শামসকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সামসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুরের মতলবে। তার স্কুল ও কলেজ জীবন কাটে সেখানেই। এসএসসি শেষ করেছেন ২০১৪ সালে ও এইচএসসি ২০১৬ তে। ছোটোবেলা থেকেই সামস নিজের মতো করে গলায় তুলতে পারতেন যে কোনো গান। স্কুলের প্রোগ্রামে গান গেয়ে জিতেছেন পুরষ্কার। এই পুরষ্কারের কারণেই নিজের মনের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী হওয়ার বাসনা তৈরি হয়। এরপর কলেজে পড়াকালীন নিজের ঘরেই ছোটোখাটো স্টুডিও সেট আপ করলেন। নিজের ইচ্ছা আর বন্ধুদের অণুপ্রেরণায় ঘরে বসেই গান তৈরি শুরু করলেন।

এরপর সেগুলো নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করলেন। তখনও সামস ভাবতে পারেননি কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে তার জন্য। সামসের তৈরি কনটেন্টগুলো ইউটিউব-ফেসবুক-টিকটক-লাইকির মাধ্যমে দ্রæত ছড়িয়ে পড়লো সারা দেশে। শ্রোতারা সেগুলো গোগ্রাসে গিলতে লাগলেন। মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে লাগলো তার গান। ঈগল মিউজিক তখন অপরাধী গানের পর তুমুল জনপ্রিয় একটা ধারা তৈরি করে ফেলেছে। সামসের ঘরের স্টুডিওতে বানানো গানগুলো তাকে নিয়ে এলো ঈগল মিউজিক পর্যন্ত। পরের গল্পটা কেবলই সাফল্যের। চাঁদপুরের শাহরিয়ার আহমেদ সাকিব হয়ে ওঠলেন বাংলাদেশের সামস ভাই!

নিজের সাফল্যের গল্পটা জানাতে গিয়ে সবার আগে ¯্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। এরপর বললেন- ‘প্রাইমারি স্কুল থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। সেখানে বেশ ভালোই গাইতাম। তাই যে প্রতিযোগিতাই হতো না কেন, আমি প্রথম হতাম। মূলত সেখান থেকেই গায়ক হওয়ার অনুপ্রেরণা। তারপর কলেজ জীবনের শুরুর দিক থেকে গানের রেকর্ডিং, ধীরে ধীরে বাসায় স্টুডিও সেটআপ করা, বাসাতেই গান গাইতাম, রেকর্ডিং করতাম। নিজের ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতাম। আর সেখান থেকেই আজকের এই পর্যায়ে আসা।’

কখনো ভেবেছিলেন এ পর্যায়ে আসতে পারবেন? শুনে হাসলেন সামস। জানালেন, ‘ঠিক এরকম করে ভাবা হয়নি। তবে মনের ভেতর একটা স্বপ্ন ঠিকই ছিল। আমি ভাগ্যবান যে আমি এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।’ নিজের নামের পাশে ভাই শব্দটা অনেকে সহজভাবে নিলেও অনেকে আবার মানতে চায় না। এই ব্যাপারটাতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সামস বলেন, ‘তখন কলেজে পড়ি। এতো শত ভেবে কিছু করতাম না। ঘরে বসে নিজের স্টুডিওতে গান বানাতাম। বন্ধুরা মিলে অনেকটা মজার ছলেই সামস এর সঙ্গে ভাই যোগ করে গানগুলো ছেড়ে দিই। এভাবে এই নামেই সবার কাছে পরিচিতি পাবো ভাবিনি। আবার পরিচিতি পাওয়ার পর নামটা বদলে ফেলার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই সামস ভাই নামেই একের পর এক গান রিলিজ হতে থাকে। আমি আসলে খুব পরিকল্পনা বা ইচ্ছে করে এমন নাম ধারন করিনি।’

শ্রোতা মহলে তুমুল প্রশংসিত সামস এর মধ্যেই গেয়েছেন ঈগল মিউজিক, সাউন্ডটেক, সংগীতার মতো বড় বড় অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে। সামসের গানের ভিডিওর চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। এমনকি নতুন ও সদ্যপ্রকাশিত অনেক চ্যানেল আলোচনায় এসেছে সামসের গানের কল্যাণেই। বেশ কিছু টেলিভিশন নাটকেও স্থান পেয়েছে তার গান। এভাবেই সংগীতাঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছেন সামস ভাই। ৩০০ এর বেশি গান গেয়েছেন, যার মধ্যে ২০টি গান অন্যের লেখা ও সুর করা। বাকি সব গান সামস নিজেই লিখেছেন ও সুর করেছেন।

অনেকে বলেন সামসের অনেক গানই কাছাকাছি সুরের। এ ব্যাপারটায় আপত্তি আছে সামসের। তিনি বলেন, ‘খেয়াল করে দেখবেন আমার গানগুলো একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নের। আমি আমার গায়কীর কথা মাথায় রেখে নিজের মতো সুর করি। শ্রোতাদের পছন্দের কথাও মাথায় রাখি। আমার নিজের চ্যানেলের ইদানীং এর গানগুলো শুনে দেখবেন আমি বারবার নিজেকে ভাঙছি। পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। তবে এটা ঠিক অল্প সময়ের মধ্যে তিন শতাধিক গান করার কারণে অনেকে একটু আধটু মিলিয়ে ফেলছেন। সেটা কেবলই আমার নিজস্ব স্টাইল ও প্যাটার্নের কারণেই।’

নিজের বর্তমান অবস্থা ও অডিও ইন্ডাস্ট্রির মূল্যায়ন করতে বলা হলে নিজের হতাশার কথা প্রকাশ করেন সামস। ‘একজন গায়ক হিসেবে প্রায়ই বিব্রত হতে হয়। মনে হয় শিল্পী হওয়াটা যেন পাপ। ইন্ডাস্ট্রি জুনিয়রদের মূল্যায়ন করতে চান না। ভাইরাল বলে দূরে ঠেলে দেয়। এই ভাইরাল শব্দটির প্রতি আমার ঘোর আপত্তি। আমার গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ পছন্দ করছে। এটা কী আমার অপরাধ? এটা যদি অপরাধ না হয়ে থাকে তাহলে কেন ভাইরাল শিল্পীর নাম তুলে কেন দূরে ঠেলে দেয়া হবে। এমনটা না করে সিনিয়ররা যদি আমার ভুল-ভ্রান্তিগুলো বলে দিতেন, যদি তাদের কাছ থেকে দিক নির্দেশনা পেতাম- তাহলে হয়ত আরও ভালো করতে পারতাম। শ্রোতাদের আরও ভালো গান উপহার দিতে পারতাম।’

সামসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘুম ভালোবাসি, তোরে ভুলে যাওয়ার লাগি, ছলনাময়ী, কান্দে আমার মন, আমার মনের মাঝে তুই ছাড়া কেউ নাই, কি মায়া লাগাইলি, তুমি পূর্ণিমারই আলো, লেনাদেনা, তুই বড় বেঈমানরে বন্ধু, আমিতো ভালো নেই, খাঁচার পাখি, আহারে, কতো ভালোবাসি, অবহেলা, পারবি কি তুই, ভেতরটা জ্বালায় গেল, পিরিতি কী নেশা, তুই বিহনে, দূরের পাখি আকাশে ইত্যাদি।

গান নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে সামস জানান, ‘সত্যি কথা বলতে কোনো পরিকল্পনা নেই। গানের ব্যাপারটা নেশা থেকে পেশা হয়ে ওঠলেও পুরোটার পেছনেই রয়েছে আমার নিজস্ব ভালো লাগা। তাই যতদিন ভালো লাগে ততদিন গাইতে চাই। শ্রোতাদের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় অবলম্বন। সেই অবলম্বনকে পুঁজি করে নতুন নতুন কাজ সামনে নিয়ে আসতে চাই।’

Related posts

আবুল হায়াত জীবনী, শিক্ষা ,ফ্যামিলি,চলচ্চিত্র,নাটক, এবং প্রকাশিত বই

News Desk

আরিফিন শুভর জন্ম, পেশা, উচ্চতা, দাম্পত্য সঙ্গী, জীবনী, তথ্য প্রোফাইল

News Desk

লিওনেল স্কালোনি: আর্জেন্টিনা ফুটবলের এক দৃষ্টান্ত নায়ক

News Desk

Leave a Comment