Image default
জীবনী

রিকার্ডো কাকা : ভুলে যাওয়া এক রাজপুত্রের গল্প

কাকা ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা মধ্যমাঠের ফুটবলার | কাকা ২২শে এপ্রিল, ১৯৮২ সালে ব্রাজিলিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন | তিনি আট বছর বয়সে একটি স্থানীয় ক্লাবের হয়ে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। সে সময়ে তিনি টেনিসও খেলতেন এবং পনেরো বছর বয়সে সাও পাওলো এফ সির সাথে পেশাদারী চুক্তি করার পরই তিনি ফুটবল খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৩ সালে তিনি €৮.৫ মিলিয়নে ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে এ সি মিলানে যোগদান করেন এবং মিলানে অবস্থানকালেই তিনি বালোঁ দর এবং ২০০৭ সালের ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার লাভ করেন। মিলানের হয়ে এই সাফল্যের পর ২০০৯ সালে ট্রান্সফার ফির তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড €৬৫ মিলিয়নের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি তার মানবসেবামূলক কাজের জন্যেও পরিচিত। ২০০৪ সালে তিনি সর্বকনিষ্ঠ মানুষ হিসাবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির দূত হিসেবে মনোনীত হন। খেলাধূলার পাশাপাশি তিনি তার মানবসেবামূলক কাজে অবদান রাখায় ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় টাইম ১০০ তে জায়গা করে নেন

 

প্রাথমিক জীবন

কাকা ব্রাজিলের গামার একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও মা শিক্ষিকা ছিলেন।তার ভাই ও একজন ফুটবল খেলোয়াড়।তার ভাই রিকার্ডো উচ্চারণ করতে পারতো না, তাই তাকে শুধু কাকা বলে সম্বোধন করতো।সেখান থেকেই মূলত তার নাম হয়ে যায় কাকা।৭ বছর বয়সে সে সাও পাওলো তে বসবাস শুরু করে।সেখানকার স্কুল থেকে একটি যুব ক্লাবে ভর্তি হয় এবং একটি টুর্নামেন্ট জিতে।তখন সাও পাওলো ফুটবল ক্লাব তাদের যুব দলে তাকে খেলার সুযোগ করে দেয়।তবে ১৮ বয়সে সাঁতার কাটার সময় তার মেরুদণ্ডে ব্যাথা পান।তখন প্যারালাইসিসের আশঙ্কাও দেখা যায়।তবে অতি তাড়াতাড়ি সেটা থেকে তিনি সেরে উঠেন।

 আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

২০০১ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট কাকা ব্রাজিল যুব দলের হয়ে খেলেন।কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ঘানার সাথে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায়।টুর্নামেন্টটিতে কাকা ১ টি গোল করেন।কয়েক মাস পরে,৩১ জানুয়ারি ২০০২ সালে বলিভিয়া এর সাথে একটি প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করেন।তিনি ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন।তবে পুরো টুর্নামেন্ট এ মাত্র ২৫ মিনিট খেলার সুযোগ পান,যার পুরোটাই ছিলো কোস্টা রিকা এর সাথে।২০০৩ কনকাকাফ গোল্ড কাপ এ কাকা ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়কত্ব করেন।

ক্লাব কর্মজীবন

সাও পাওলো


৮ বছর বয়স থেকে তিনি সাও পাওলো তে খেলেন।১৫ বছর বয়সে ক্লাবটির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ঐ বছরই ক্লাবটির যুবদল কে Copa de Juvenil জেতান।১ ফেব্রুয়ারি ২০০১ এ তার মূল দলে অভিষেক হয়।ঐ মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ১২ গোল এবং পরের মৌসুমে ২২ ম্যাচে ১০ গোল করেন।তখনই ইউরোপের দলগুলোর তার প্রতি দৃষ্টি পড়ে।

মিলান


২০০৩ মৌসুমে ৮.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে ভিড়িয়ে নেয় এসি মিলান।একমাস পরে রুই কস্তার পরিবর্তে অ্যটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে মিলানের হয়ে অভিষেক হয়।ঐ মৌসুমে ১০ টি গোল করেন ৩০ ম্যাচ খেলে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ এসিস্ট।ভালো খেলার সুবাদে প্রথম মৌসুমেই তিনি ২০০৪ সালে সিরিয়া প্লেয়ার অফ দ্যা সিজন হিসেবে ঘোষিত হন। বালোঁ দর (১৫ তম) ও ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার (৯ম) হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। পরের মৌসুমে গাটুসো,সিডর্ফ, মেসিমো,রুই কস্তার সাথে মিলে একটি শক্তিশালী মিডফিল্ড গঠিত হয়।ঐ মৌসুমে মিলান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রানার্স-আপ হয় লিভারপুল এর কাছে পেনাল্টি হেরে।ফাইনালটি মিরাকল অফ ইস্তাম্বুল বলা হয়,ম্যাচটিতে কাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।যেখানে প্রথম গোলটি তার এসিস্টেই হয়।ঐ টুর্নামেন্টে ৫ টি এসিস্ট ও ২টি গোল করেন। আবারো ব্যালন ডি’অর (৯ম) ও ফিফা বেস্ট প্লেয়ার(৮ম) এর জন্য মনোনীত হন। তবে ২০০৫ উয়েফা সেরা ক্লাব ফুটবলার হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো হ্যাট্রিক করেন।এবারেও মনোনীত হলেও জিততে পারেন নি ব্যালন ডি’অর।উয়েফা টিম অফ দ্যা ইয়ারের জন্য নির্বাচিত হন।

২০০৬-০৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তে তিনি সবচেয়ে বেশি গোল এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ টি এসিস্ট করেন এবং মিলান শিরোপা জয় করে।একটি অনলাইন পোল দ্বারা তিনি ভোডাফোন ফ্যানস প্লেয়ার অফ সিজন হিসেবে নির্বাচিত হন।উয়েফা প্লেয়ার অফ সিজন হিসেবেও ঘোষিত হন।একাধারে দ্বিতীয় বারের মত উয়েফা টিম অফ দ্যা সিজন এর একজন সদস্য হন।তিনি ২০০৭ ফিফা বেস্ট প্লেয়ার এওয়ার্ড জয় করেন।৮ম মিলান প্লেয়ার ব্যালন ডি’অর জেতেন। ২০০৭ উয়েফা সুপার কাপে সেভিয়ার বিপক্ষে জয়ে ৩য় গোলটি তিনি করেন।৩০ সেপ্টেম্বর মিলানের হয়ে ২০০ তম ম্যাচ খেলেন কাতানিয়ার বিপক্ষে যেটি ১-১ গোলে ড্র হয়।২০০৮ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয় করেন মিলানের হয়ে।সেই ম্যাচে ৩য় গোলটি তার পা থেকে আসে।টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বলটিও তিনি লাভ করেন।

রিয়াল মাদ্রিদ


৩০ জুন ২০০৯ তারিখে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে কাকাকে উন্মোচন করা হয় এবং ৭ আগস্ট ২০০৯ তারিখে টরন্টো এফসির বিরুদ্ধে ৫-১ বন্ধুত্বপূর্ণ জয়ে তার অনানুষ্ঠানিক অভিষেক হয়। ১৯ আগস্ট ২০০৯তারিখে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে জয়লাভের প্রাক মৌসুমের ম্যাচে তিনি মাদ্রিদের হয়ে প্রথম গোল করেন। কাকা পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট ২০০৯ তারিখে দেপোর্তিভো দে লা করুয়ানার বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে লিগ অভিষেক করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ভিলারিয়ালের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে তিনি তার প্রথম গোল, পেনাল্টিতে করেন। রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগায় রানার্স-আপ হিসেবে মৌসুম শেষ করে, কাকা আটটি গোল করে এবং লা লিগায় ছয়টি অ্যাসিস্ট এবং সব প্রতিযোগিতায় নয়টি গোল এবং আটটি অ্যাসিস্ট প্রদান করে। এই ভাবে তিনি রিয়েল মাদ্রিদে খেলতে থাকেন এর মাঝে তিনি বড় ইনজুরিতে পড়েন ।তারপর ইনজুরি থেকে ফিরে আবার যোগ দেন ক্লাব এর সতীর্থদের সাথে। ২৯ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে, কাকা রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, ক্লাবটিতে চার মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় ২ টি গোল এবং ২ টি অ্যাসিস্ট প্রদান করেন। তিনি টুইটারে একটি খোলা চিঠিতে রিয়াল মাদ্রিদ এবং তার ভক্তদের বিদায় জানিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন


কাকা ২০০৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাও পাওলোর একটি খ্রিস্টান চার্চে তার শৈশবের পছন্দ ক্যরোলাইনকে বিয়ে করেন।এই দম্পতির ২ জন সন্তান:ছেলে লুকা (জন্ম ১০ জুন ২০০৮)ও মেয়ে ইসাবেলা (জন্ম ২৩ এপ্রিল ২০১১)আছে।তবে ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদ এর সংবাদ প্রকাশ করেন।কাকা বর্তমানে ব্রাজিলিয়ান মডেল ক্যারোলিনা দিয়াস এর সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ আছেন ।

Related posts

আবুল খায়ের জীবনী, চলচ্চিত্র,নাটক, পুরস্কার,এবং মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

News Desk

টনি লিউং চিউ-ওয়াই জীবনী

News Desk

রবি শঙ্কর :এক কিংবদন্তী সেতার বাদক

News Desk

Leave a Comment