মোহাম্মদ আশরাফুল ৭ জুলাই ১৯৮৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন | | তার ডাকনাম মতিন। তবে ভক্তদের নিকট এই নামটি অপরিচিতই বটে। অ্যাশ নামেই সমধিক পরিচিত তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডের অধিকারী। তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কারই মাটিতে। ব্যাটিংয়ে দক্ষতা ছাড়াও তিনি মাঝে মাঝে ডানহাতে লেগ স্পিন বল করে থাকেন।
মোহাম্মদ আশরাফুল দেশের ক্রিকেট অঙ্গনেও এমন একজন আছেন যাকে ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা হয়তো কখনো ভুলতে পারবে না। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকেই যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুসরন করেন, তাদের কাছে একসময় চোখের মণি ছিলেন তিনি। যার ব্যাটিং শৈলী মুগ্ধ করেছে দেশ বিদেশের বহু ক্রিকেট ভক্তকে, যার আক্রমনাত্মক ব্যাটিং দেখে বাংলাদেশ দল নিজেদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও জয়ের স্বপ্ন দেখত, যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে নতুন রুপে পরিচয় করিয়েছেন, তিনিই হলেন বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তের ‘আশার ফুল’ মোহাম্মদ আশরাফুল।
![মোহাম্মদ আশরাফুল](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/110452ash-sm-20180912171501-300x173.jpg)
বাংলাদেশের অনেক স্মরণীয় জয়ের নায়ক হয়ে ভক্তদের মনে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছেন অ্যাশ। অমিত প্রতিভার অধিকারী এই ব্যাটসম্যান তার এক যুগেরও অধিক লম্বা ক্যারিয়ারে সবক’টি টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষেই খেলেছেন। তাই অভিজ্ঞতার ঝুলিও তার বেশ ভারী। কিন্তু অভিজ্ঞতা বা প্রতিভা, কোনোটিই কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। বাজে ফর্মই যেন তার নিত্য সঙ্গী ছিল। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ই ভুগেছেন রান খরায়। কিন্তু তাতে কি? ফর্মহীনতা তার জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র আঁচ ফেলতে পারেনি। কেননা নিজের দিনে তিনিই সেরা। নিজের দিনে তিনি যেন কোনো মহাকাব্যের মহানায়ক হয়ে ওঠেন। হাতের ব্যাটটিকে কলম বানিয়ে লিখে চলেন তার মহাকাব্য। কার্ডিফ, গায়ানা কিংবা জোহানেসবার্গের একেকটি ইনিংস তার একেকটি দৈত্য বধেরই গল্প।
১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর দীর্ঘ দিন ধরে কোন ওয়ানডে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে টানা ২১ টি টেস্ট এবং ২৩টি ওয়ানডে হারের এক লজ্জার রেকর্ড করে বাংলাদেশ। এদিকে ২০০৩ বিশ্বকাপে ১৪.২০ গড়ে মাত্র ৭১ রান করলে দল থেকে বাদ পড়েন মোহাম্মদ আশরাফুল।
![মোহাম্মদ আশরাফুল: বাংলাদেশের প্রথম সুপারষ্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/1-1-1-300x168.jpg)
ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত ফর্মের কারণে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ এর মাঝামাঝি সময়ের জিম্বাবুয়ে সফরের ওয়ানডে দলে ডাক পান আশরাফুল। সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ মিলে মাত্র একটি ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেলেও ম্যাচটি জয়ের মাধ্যমে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। ম্যাচে ৩২ বলে ৫১ রান করে ম্যাচ সেরা হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
একই বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দলে পুনরায় ডাক পান তিনি। সিরিজে এক ইনিংসে ব্যাক্তিগত ১৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন যা ঐসময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন বাংলাদেশি হিসেবে কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত সংগ্রহ এবং ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে ওই ইনিংসটিকে তৎকালীন ভারতীয় ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি তার নিজের দেখা টেস্ট ইনিংসগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বলে উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ আশরাফুল এক সময় শুধু একজন ক্রিকেটারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি আবেগ এবং অনুপ্রেরণার নাম। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ পেয়েছে কিছু ঐতিহাসিক জয় যা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিশ্ব ক্রিকেট দরবারে নতুন রূপে চিনিয়েছে। চলুন দেখে আসা যাক বাংলাদেশকে জেতানো মোহাম্মদ আশরাফুলের সেরা পাঁচটি ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়া জয় – ২০০৫ সাল
২০০৫ সালে ইংল্যান্ড এর মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। সিরিজের অপর দুই দলগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া এবং আরেকটি স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচেই টাইগার বাহিনী মুখোমুখি হয় রিকি পন্টিংয়ের মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া পরপর গিলক্রিস্ট ও পন্টিংয়ের উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত ২৪৯ রানের বড় সংগ্রহ দাড় করায়। সবাই ভেবেছিলো হেসেখেলেই হয়তো জিতে যাবে অস্ট্রেলিয়া এবং আরেকটি নির্মম পরাজয়ের মুখ দেখবে বাংলাদেশ | কিন্তু, বিধি বাম। সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ যা এখনো ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটন হিসেবে মনে করা হয়। কার্ডিফে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির এক ২১ বছর বয়সী ছেলে অনায়াসে কাভার ড্রাইভ মারছেন ম্যাকগ্রা, গিলেস্পিদের। শুধু কাভার ড্রাইভ না, এক একটা বাউন্সার সামলিয়ে এনে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ওয়ানডে জয়। হাঁকিয়েছেন শতকও। ১১ টি চারে ১০১ বলে ১০০ করা মোহাম্মদ আশরাফুল জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।
![শতক তুলে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/siIewXJU7SmeVm9G_111579-300x262.jpg)
ইংল্যান্ডের সাথে ৫২ বলে ৯৪ রানের ইনিংস কিংবা ঢাকা টেস্টে ভারতের সাথে ১৫৮ রানের ইনিংস সহ আরো অনেক নান্দনিক ইনিংস এসেছে আশরাফুলের ব্যাট থেকে। মোহাম্মদ আশরাফুল; বাংলাদেশের প্রথম তারকা যিনি অস্ট্রেলিয়াকে একা হাতে হারিয়ে রচনা করেছেন ‘বিগেস্ট আপসেট অব ক্রিকেট’ এর, যিনি প্রথম ক্রিকেট বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন বারংবার, যার হাত ধরে বাংলাদেশ হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজদের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের।
শ্রীলংকা জয় ২০০৬ সাল
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক শক্তিশালী দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২১২ রানে অল আউট হয় সফরকারি শ্রীলঙ্কা।
![শ্রীলংকা জয়](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/ফিচার-ইমেজ-AFP-1-300x111.jpg)
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ ওভার বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জয় লাভ করে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটিতে ৭১ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন আশরাফুল। ম্যাচ সেরার পুরস্কার না পেলেও তার ইনিংসটি সেবার ম্যাচ জয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়- ২০০৭ সাল
প্রথম টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পা রাখে দক্ষিণ আফ্রিকায়। জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হওয়ার আগে যোজন যোজন পিছিয়ে ছিল আশরাফুলের দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সংগ্রহ করে ১৬৪ রান। সে সময় টি টুয়েন্টিতে যেকোনো দলের জন্য এই রান ছিল পাহাড়সম।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই তামিম ইকবাল আর নাজিমুদ্দিনের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দায়িত্ব কঁধে তুলে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল। আফতাব আহমেদকে সাথে নিয়ে গড়েন ১০৯ রানের পার্টনারশিপ। রানরেটের চাকাও সচল রাখেন পাওয়েল, ব্রাভো, রামপলদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে।
![২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুল;](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/5-768x525-1-300x205.jpg)
আশরাফুলের ২৭ বলে ৬১ এর সুবাদে দুই ওভার আগেই জয় তুলে নেয় টাইগার বাহিনী। ৭টি চার আর ৩টি ছয়ে ২২৫ স্ট্রাইক রেট নিয়ে এই রান করেন তিনি। এইরকম স্ট্রাইক রেট সে সময়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের কাছে ছিল অকল্পনীয়। আফতাব আহমেদ ৬২ রান করলেও যোগ্য হিসেবেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতেন অধিনায়ক আশরাফুল। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হেরে বাদ পড়লেও আশরাফুলের ইনিংস পরশ বুলিয়েছিল শত শত বাঙালির চোখকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা জয় ২০০৭ সাল
২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ। সুপার এইটে অন্য কোন দলের বিপক্ষে জয় না পেলেও শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক জয় তুলে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেয় বাংলাদেশ এবং সেই ম্যাচেও জয়ের প্রধান কারিগর ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
![দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ রানের ইনিংস খেলার পথে থার্ড ম্যান অঞ্চলে একটি স্কুপ শট খেলছেন অ্যাশ](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/51.png-300x213.jpg)
গায়নার প্রভিন্সে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় ৪টি উইকেট হারায়। এরপরেই ক্রিজে আসেন ত্রাণকর্তা আশরাফুল। আফতাব আহমেদকে নিয়ে ৭৬ রানের এবং মাশরাফিকে নিয়ে ৫৪ রানের পার্টনারশিপ করে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ব্যাক্তিগত ৮৭ রান করে এন্ড্রি নেল এর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। ততক্ষণে ম্যাচ জয়ের রসদ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ম্যাচটি ৬৭ রানে জিতে নেয় বাংলাদেশ এবং ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৭ সালে ঘরের মাটিতে ভারত সিরিজের পর ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এবং বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
নিউজিল্যান্ড জয় ২০০৮
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফরে আসে নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল এবং সেই সফরেই ওয়ানডে সিরিজে নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ওডিআই ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ।
২০০৮ সালের ৯ই অক্টোবর মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২০২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। দলীয় ৮৫ রানের মাথায় ২য় উইকেটের পতন ঘটলে জুনায়েদ সিদ্দিকের সাথে ১০৯ রানের ম্যাচ জয়ী জুটি করেন। ব্যাক্তিগত ৮৫ রানে জুনায়েদ সিদ্দিক প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেও মোহাম্মদ আশরাফুল শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন যার মধ্যে ছিল ৫টি চার এবং একটি ছক্কার মার। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি না পেলেও ম্যাচ জয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের অবদান কোন অংশে কম ছিল না।
![মোহাম্মদ আশরাফুল: বাংলাদেশের প্রথম সুপারষ্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/cZChGXibfUN0AKd1_bangladesh-cricket-1406207065-300x190.jpg)
২০০৯ টি২০ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে এবং এর ফলে অধিনায়কত্ব হারান তিনি। ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে বাজে ফর্মের কারণে কারণে দল থেকে বাদ পড়েন এবং এরপর থেকে দলে শুধু আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। ২০১০ সালে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে আশরাফুলকে অধিনায়ক করা হয় এবং ওই আসরে স্বর্ণপদক জেতে বাংলাদেশ।
২০১১ বিশ্বকাপে দলে ডাক পেলেও ব্যাট হাতে ছিলেন মলিন যার ফলে দলে নিজের পাকা জায়গা হারান তিনি এবং এরপরে কিছু ম্যাচে সুযোগ পেলেও নিজেকে ঠিক নতুন করে আবারও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তিনি। ২০১২ সালে বিপিএলে ভালো ফর্মের কারণে সেই বছর শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে দলে ডাক পান তিনি। কিন্তু ২ ম্যাচে মাত্র ৩৫ রান করে পুনরায় দল থেকে বাদ পড়েন।
![মোহাম্মদ আশরাফুল : বাংলাদেশের প্রথম সুপারষ্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/df695ddb9a07a07756bf0bd6171299c5-5c2cb773bc012-300x169.jpg)
২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার পূর্বে শাহরিয়ার নাফিস ইনজুরিতে পড়লে জাতীয় দলে ডাক পড়ে আশরাফুলের। সেই সফরের প্রথম টেস্টে ১৯০ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলে পুনরায় আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর জিম্বাবুয়ে সফরেও তাকে দলে রাখা হয়।
ক্রিকেট থেকে নির্বাসন
২০১৩ সালের বিপিএলে চিটাগং কিংস এবং বরিশাল বার্নারসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। মূলত, ২০১২ সালেই শ্রীলংকার ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এসএলপিএলে (SSPAL) রুহুনা রয়্যালসের হয়ে খেলার সময় ফিক্সিং দুনিয়ার সাথে প্রথম পরিচিত হন মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে এর আগে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি ম্যাচ পাতিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার অন্যতম দৈনিক ডেইলি মিররে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশন আক্সুর কাছে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট রুহুনা রয়্যালস বানাম ওয়াইয়াম্বা ইউনাইটেডের ম্যাচটি পাতানোর সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। ২০১৩ সালে বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর দায়ে পরের বছর তথা ২০১৪ সালে বিপিএল এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনাল আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি প্যানেল ওই সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করে। আশরাফুলের এই সাজা ভক্তদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো।
![মোহাম্মদ আশরাফুল : বাংলাদেশের প্রথম সুপারষ্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/9-1-300x169.jpg)
সম্প্রতি, এক ফেইসবুক লাইভ আড্ডায় ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় নিজের আত্মহত্যা করার চিন্তার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন,
‘’এমনও আমার মাথার মধ্যে এসেছিল যে আমি বেঁচে থাকবো নাকি সুইসাইড করবো। এই ধরনের চিন্তাও আমার মধ্যে এসেছে। সময় যাচ্ছে। সময়ই তোমাকে সব চেঞ্জ করে দেবে। আমি কীভাবে মানুষের কাছে মুখ দেখাব, পরিবার কীভাবে থাকবে। আমি এটা নিয়ে খুব আপসেট ছিলাম।’”
খেলোয়াড়ি জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন আশরাফুল। ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি গাঁটছাড়া বাঁধেন অনিকা তাসলিমা অরচির সাথে। এর আগের বছরই অর্থাৎ ২০১৪ তে তিনি হজ্বেও যান।
![মোহাম্মদ আশরাফুল : বাংলাদেশের প্রথম সুপারষ্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/05/10-300x206.jpg)
পেশাদারি ক্রিকেট হয়তো আরো কিছুদিন খেলে যাবেন আশরাফুল, কিন্তু লাল সবুজের জার্সি গায়ে আর কখনো তাকে দেখা যাবে কি? উত্তরটা সকলেরই জানা। তবু কেন যেন মন সেই উত্তরটা মানতে চায় না। আশরাফুলের খেলা দেখে যারা বড় হয়েছেন, তারা মানতে পারেন না এ কথা। তারা আজও ভাবেন, যদি হটাৎ করে রূপকথার মতোই ফিরে আসতেন তিনি! তার ফেরা নিয়ে মনের কোণে আশার যে প্রদীপ তার ভক্তরা জ্বেলেছিল সেই ২০১৩ থেকে, আজও তা মিটিমিটি করে জ্বলছে। কে জানে, হয়তো আবার ফিরবেন আশরাফুল! বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম মহাতারকা, বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রথম প্রেম মোহাম্মদ আশরাফুল আবার জ্বলে উঠবেন ব্যাট হাতে! আশাটা একটু কি বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেলো? তবে তা-ই হোক। তিনি যে আশরাফুল! তার জন্য বাড়াবাড়িই হোক!
সূত্র : রোয়ার মিডিয়া, নিউস ভিউস, উইকিপিডিয়া