Image default
বাংলাদেশ

পরিবেশবান্ধব পূজামণ্ডপ: ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিমার সাজ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে। তবে এবারের পুজোয় ভিন্ন আঙ্গিকে শীতলপাটির শাড়ি-ধুতিতে প্রতিমা সাজানো হয়েছে। এমনকি প্রতিমার সারা শরীরে তালপাতা, শীতলপাটি, খেজুর পাতা, বাঁশ ও কাগজের তৈরি অলংকার দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের মিনাবাজার এলাকার গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে পরিবেশবান্ধব এসব বস্তু দিয়ে দুর্গাপূজার সকল প্রতিমার সাজসজ্জা করা হয়েছে। ফলে পূজামণ্ডপ দেখতে উৎসুক দর্শনার্থী ও ভক্তদের আগ্রহের কমতি নেই। দলে দলে ভিড় জমেছে পূজামণ্ডপে। এদিকে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দরা দাবি করছেন, এসব বস্তু দিয়ে সাজসজ্জা করার ফলে পরিবেশ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশবান্ধব ও মাটিতে পচনশীল বস্তু শীতল পাটির মধ্যে রং-তুলির আঁচড়ে সুন্দর সুন্দর সব কারুকাজ দিয়ে প্রতিমার শাড়ি ও ধুতি তৈরি করা হয়েছে। গয়না তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে তালপাতা, শীতল পাটি, খেজুর পাতা ও কাগজ। ছোট ছোট বাঁশের টুকরো ও মুলি দিয়ে মণ্ডপের চারপাশ সজ্জিত করা হয়েছে। এতে প্রতিমাসহ সাজসজ্জার কাজ সারতে প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। ভিন্ন আঙ্গিকের এই থিম নিয়ে সাজসজ্জার কাজ করেছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। লাইটিংসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। স্টেজের চারদিকে নানান রঙের পেইন্টিং সাঁটানো হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব থিম সম্পর্কে গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ সারথি দাস বলেন, ‘আমাদের এবারের থিম হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পূজামণ্ডপ তৈরি করা। আমাদের এই মণ্ডপে প্রতিমা, প্রতিমার কাপড় ও অলংকারসহ মঞ্চের সাজসজ্জায় পচনশীল সব বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গা প্রতিমাসহ সকল নারী প্রতিমার শরীরে শীতলপাটি দিয়ে তৈরি করা শাড়ি পরানো হয়েছে। একইভাবে শীতলপাটির তৈরি করা ধুতি পুরুষ প্রতিমার গায়ে পরানো হয়েছে। তালপাতা, শীতলপাটি, খেজুর পাতা, কাগজ ও বাঁশের চিকন কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের অলংকারে সাজানো হয়েছে প্রতিমাগুলোকে। দুর্গা, সরস্বতী,গণেশ, লক্ষ্মী, কার্তিকসহ বিভিন্ন প্রতিমা দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। আর প্রত্যেকটি প্রতিমার পেছনে খেজুর পাতা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো মঞ্চটি বাঁশ, চাটাই, কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এসব তৈরিতে কাজ করেছে। তবে পচনশীল বস্তু দিয়ে মণ্ডপ তৈরির থিমটি আমরা (পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ) দিয়েছি।’

পূজামণ্ডপের প্রতিমার অলংকারসহ সাজসজ্জায় জড়িত শিল্পী অভিকর নয়নের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজার প্রতিমা, গায়ের অলংকার, স্টেজসহ পুরো মণ্ডপ পরিবেশবান্ধব বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সাধারণত, প্রতিমার শরীরে প্লাস্টিক ও বিভিন্ন ধাতব তৈরি গয়না ব্যবহার করা হয়। তবে সেসব বস্তু পচনশীল নয়, এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ কারণে আমরা প্রতিমার গয়না তৈরিতে তালপাতা, শীতলপাটি, খেজুর পাতা ও কাগজ ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া প্রতিমার শরীরে শাড়ি ও ধুতি তৈরিতে শীতলপাটি ব্যবহার করা হয়েছে। সেসব শীতল পাটিতে বিভিন্ন ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাঁশের টুকরো, মুলি দিয়ে মণ্ডপের অধিকাংশ কাজ করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, প্রতিবছর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় প্লাস্টিকসহ অপচনশীল বিভিন্ন বস্তু নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীসহ পরিবেশদূষণ হয়। সেই কথা মাথায় রেখে যাতে নদীর পানি ও পরিবেশদূষণ না হয়, তাই এমন ভিন্ন কনসেপ্ট। যেসব উপাদান দিয়ে প্রতিমা, স্টেজ ও অন্যান্য কাজগুলো হয়েছে, সেগুলো বিসর্জনের পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।

গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নবনীত সাহা বলেন, ‘বিভিন্ন অপচনশীল বস্তু ব্যবহার করে আমরা পৃথিবী ধ্বংস করে দিচ্ছি। সেই চিন্তাধারা থেকে এমন কনসেপ্ট এসেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২২৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এবার পূজামণ্ডপ বেড়েছে ছয়টি। মণ্ডপগুলোতে বাহারি রঙের আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব পূজামণ্ডপ: ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিমার সাজ

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে এখানে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছে এবং উৎসব-পার্বণ পালন করছে। এখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। এবার শারদীয় দুর্গোৎসব অত্যন্ত জমকালোভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সকলের সহযোগিতায় এবং সকল ধর্মের মানুষের সমান অংশগ্রহণে শারদ উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এবার ২২৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। আমরা ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এ ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে বৈঠক করে পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, নিজস্ব ভলানটিয়ার নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সকল সংসদ সদস্য, বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব-১১, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিআইডব্লিউটিএ, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর সহযোগিতায় এবারের দুর্গোৎসব সফল হবে।’

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি আমাদের আনসার সদস্যরা পূজামণ্ডপে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। যাতে করে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পূজার দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের বিশেষ টিম সাদা পোশাকে কাজ করবে। একইভাবে বিসর্জনের দিন যেসব স্থানগুলোতে বিসর্জন হবে আমাদের পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে আমরা জেলায় একটি সাইবার সেল গঠন করেছি। যার কাজ হচ্ছে যাতে কেউ গুজব অথবা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করতে না পারে। সাইবার সেল এগুলো মনিটরিং করবে। শারদীয় দুর্গোৎসব প্রতিবারের ন্যায় এবারও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সুন্দরভাবে উদযাপন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

Source link

Related posts

যা ধরা পড়েছে খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান রিপোর্টে

News Desk

পদ্মার পাড়ে জাপানি মিষ্টি আলুর চাষ

News Desk

ফুঁসে উঠেছে কুশিয়ারা, ডুবেছে হবিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল 

News Desk

Leave a Comment