Image default
বাংলাদেশ

পদ্মার পানিতে ডুবেছে ১০০ একর জমির বাদাম

ফরিদপুরে গত কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলেছে পদ্মা নদীর পানি। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর জমির ফসল। এর মধ্যে প্রায় ১০০ একর বাদাম ক্ষেত। এছাড়া রয়েছে তিল ও ধানক্ষেত।

পদ্মার নিম্নাঞ্চলের এসব জমিতে আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে চরাঞ্চলের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জমির ফসল ডুবে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ফসল নষ্টের সম্ভাবনা আছে।

সরেজমিনে রবিবার (২২ মে) দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনও কোনও কৃষক অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন। এছাড়া ধান ও তিল তুলতে দেখা গেছে তাদের। নদীর অপরপ্রান্তে তলিয়ে গেছে আরও কয়েক একর জমির ফসল।

পালডাঙ্গি এলাকার কৃষক রমজান ভূঁইয়া বলেন, ‘আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। গত চার-পাঁচ দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব বাদাম ডুবে গেছে। আর ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেতো। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম পরিপক্ব হয়নি। তুলে নিয়ে গরু-ছাগলকে খাওয়াবো। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।’

একই এলাকার সুফিয়া বেগম বলেন, ‘এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। বাদাম বিক্রি করে আমাদের সারা বছর সংসার চলে। কিন্তু এবছর সব শেষ হয়ে গেলো। গত কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে বাদাম পচতে শুরু করেছে। এজন্য অপরিপক্ব বাদাম তুলছি। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই।’

আরেক কৃষক শেখ জুলমত বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে বাদাম ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর ১০ দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। পানি বাড়ায় এখন তুলে ফেলতে হচ্ছে। আমার সব পুঁজি শেষ।’ 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ডিক্রিরচর ইউনিয়নে নয়; পদ্মার পানিতে চরাঞ্চলের শতাধিক একর জমির বাদাম, তিল ও ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পরিপক্ব না হতেই ফসল ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।

সব বাদাম ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে

ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কৃষক রাশেদ হোসেন বলেন, ‌‘চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। বাদাম চাষ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সারা বছর সংসার চলে কৃষকদের। কিন্তু হঠাৎ পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেলো। প্রায় সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা চাই আমরা।’

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, ‘হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানের বেশিরভাগ বাসিন্দারা বাদাম চাষ করেন। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অন্যতম আয়ের উৎস এই বাদাম।’
 
পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার সালমা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে পদ্মার পানি ৬.৬৯ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এজন্য নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।’

কোনও কোনও কৃষক অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফরিদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এবছর পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এছাড়া পাঁচ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘হঠাৎ পদ্মায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখনও বাদাম পরিপক্ব না হওয়ায় পচে যাওয়ার কারণে তুলে ফেলতে হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কি পরিমাণ ফসলি জমি ও কতজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পদ্মায় এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি বেড়েছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত সাত দিনে দুই মিটার পানি বেড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’

 

Source link

Related posts

এবারও হতাশ চা শ্রমিকরা

News Desk

করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

News Desk

দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত ১১ হাজার

News Desk

Leave a Comment