Image default
বাংলাদেশ

রোজেলা চা চাষে ৫ হাজার টাকায় ১৪ লাখ আয়

নাটোরে উন্নত মানের চা হিসেবে চাষ হচ্ছে রোজেলা। বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রোজেলা ফুল থেকে তৈরি হচ্ছে এই চা। জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঔষধি গ্রামের চাষি মো. শহিদুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে এ চায়ের চাষ শুরু করেছেন।

তথ্যমতে, রোজেলা নামটি ইংরেজি ভাষা থেকে এসেছে। স্থানীয়ভাবে ওই উদ্ভিদকে চুকাই, চুকুর, মেস্তা বা টক ফল বলা হয়।

জানা যায়, পৃথিবীর অনেক দেশেই এই উদ্ভিদের বাণিজ্যিক চাষ হয়। বাংলাদেশেও এই ফল পাওয়া যায়। দেশের সর্বত্রই এটি জন্মে। তবে এই প্রথম রোজেলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন মো. শহিদুল ইসলাম।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‌‘প্রতিবছর জুন মাসে রোজেলার চারা রোপণ করা হয়। ফুল আহরণ করা যায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। গত বছর কুষ্টিয়া থেকে বীজ এনে এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ২৪০০ রোজেলার চারা রোপণ করেছি। এতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। একটি গাছের ফুলের পাপড়ি থেকে গড়ে ২০০ গ্রাম চা পাওয়া যায়। সে হিসাবে ২৪০০ চারা থেকে চা উৎপাদন করতে পেরেছি ৪৮০ কেজি। বর্তমানে খোলা চা তিন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এতে উৎপাদিত চা ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে চা প্রক্রিয়াজাত করতে ড্রায়ার মেশিন কিনেছেন। এরপর একটি বয়েল মেশিন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই মেশিন কেনা হলে কাজ অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি বাজারজাত করতে সময় কম লাগবে তার।

প্রক্রিয়াজাতের বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, ‘চারা গাছগুলো পরিণত হলে তাতে কুঁড়ি জন্মায়। কুঁড়ি সংগ্রহ করে বীজ ফেলে পাপড়ি পৃথক করি। পরে পাপড়ি ভালোভাবে ধুয়ে বয়েল করি। এরপর ড্রায়ার মেশিনে শুকিয়ে বিক্রি করি।’

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঔষধি গ্রামের চাষি মো. শহিদুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে এ চায়ের চাষ শুরু করেছেন

চা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক কাপ চা তৈরি করতে দুই-তিনটি পাপড়ি নিতে হয়। গরম পানিতে পাপড়িগুলো ছেড়ে কিছুক্ষণ পর চামচ দিয়ে নেড়ে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় চা।’

জানা যায়, রোজেলা চা সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ফুলের রসালো পাপড়িগুলোর রূপ-গুণ উল্লেখ করার মতো। এতে আছে গসিপেক্টাইন, হাইবিসিসটাইন এবং সাবদারেটিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ভিটামিন সি’র অন্যতম উৎস। এছাড়া রোজেলা থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন বি ওয়ান, বি টু, বি সিক্স, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও প্রোটিন।

একটি গাছের ফুলের পাপড়ি থেকে গড়ে ২০০ গ্রাম চা পাওয়া যায়

নাটোর সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রোজেলা চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এই চা উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের তারল্য সংকট, হৃদরোগ, রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সমাদৃত। এছাড়া হাড়ের ক্ষয়রোগ, হাড়ের গিঁটে বাত, মূত্রজনিত বা মূত্রনালির সমস্যা, মুখের ঘা রোগের ক্ষেত্রেও এই চা পান করে অনেক সুফল পাওয়া যায়।’

রোজেলা চাষি শহিদুল জানান, ভবিষ্যতে তিনি সারাদেশে এই চায়ের বাজার সৃষ্টি করতে চান। বাড়াতে চান চাষাবাদ ও লোকবল। এ বিষয়ে সরকার, কৃষিবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান।

চারা গাছগুলো পরিণত হলে তাতে কুঁড়ি জন্মায়

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম বলেন, ‘চাষি শহিদুল ইসলাম পরীক্ষামূলক রোজেলা চা উৎপাদন করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। অন্যান্য কৃষক যেন এই চা চাষে আগ্রহী হন, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

কৃষি বিভাগের দাবি, রোজেলা একাধারে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণসম্পন্ন বলে আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে এর অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি।

Source link

Related posts

বিএনপির রাজশাহী সমাবেশ আজ: পরিবহন ধর্মঘটে তিন চাকার যানও

News Desk

‘ওস্তাদ খালেদের’ নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকেছে ভারী অস্ত্রের চালান

News Desk

ক্রিকেটার আল আমিনের সঙ্গে সংসার করতে চান ইসরাত

News Desk

Leave a Comment