রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে পোশাককর্মী আজহারুল ইসলামের (৪০) অর্ধগলিত সাত টুকরো লাশ উদ্ধারের মামলায় নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তার এবং মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুজ কুমার সরকার আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মাওলানা মো. আ. রহমান আছমার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী আজহার ইসলাম বিষয়টি জেনে যায়। এ কারণে গত ২০ মে রাত ৯টার দিকে আজহারকে হত্যার উদ্দেশে কৌশলে দক্ষিণখান থানাধীন সরদার বাড়ী সাকিনস্থ জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় কর্নারে আ. রহমান তার শয়ন কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। রাত ১০টার দিকে আজহারুল দরজার সামনে পড়ে গেলে আ. রহমান আজহারুলের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও আলামত গোপন করার উদ্দেশ্যে আজহারুলের লাশ ৬ টুকরো করেন আ. রহমান। পরে মসজিদের ওযুখানার গেট সংলগ্ন সেফটিক ট্যাংকের ভেতর টুকরোগুলো লুকিয়ে রাখে। কিছুদিন পর দুর্গন্ধ বের হলে তা গুম করার জন্য আ. রহমান সেফটিক ট্যাংকের ঢাকনার ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য রাখা সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে ঢেকে রাখে। অনুসন্ধানকালে আসামিরা র্যাবের কাছে পূর্বপরিকল্পনায় ও পরস্পর যোগসাজসে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মর্মে এবং আ. রহমান সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
পরে আ. রহমানের স্বীকারোক্তি ও তথ্যমতে র্যাব-১ এ টহল টিমের সহায়তায় দক্ষিণখান থানা পুলিশ ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সরদারবাড়ীস্থ জামে মসজিদের ওযুখানার গেইট সংলগ্ন সেফটিক টেংকির ভেতর থেকে আজহারুলের খণ্ডিত ৬ টুকরো লাশ উদ্ধার করে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন, ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা জানার জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।
আছমার পক্ষে আইনজীবী দিলীপ কুমার সরকার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনা মসজিদের ভেতরের। তখন আছমা ছিলেন শ্বশুড়বাড়িতে। কী কারণে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে তিনি তা জানেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে মেয়েরা কোনো ঘটনা ঘটায় না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখে এসেছি, ঘটনা ঘটে পুরুষ-পুরুষ। হাতাহাতি হয় পুরুষ-পুরুষে। মেয়ে-মেয়ে হাতাহাতি হয় এমন ঘটনা শোনা যায়। ষড়যন্ত্র করে পুরুষ-পুরুষ। আমরা চাই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার সাজা চাই। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। আছমার একটা বাচ্চা রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন প্রার্থণা করছি।’
আ. রহমানের পক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘তিনি মসজিদের ইমাম। এলাকার ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই। হয়রানি করার জন্য তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। বয়স্ক মানুষ। রিমান্ডে নিলে তাকে টর্চার করা হবে। রিমান্ড বাতিল করে তাকে জামিন দেয়া হোক। শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
মামলা থেকে জানা যায় , নিহত আজহারুল পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তিনি দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকার ইউসুফ গাজীর ৩৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। নিকটস্থ সরদার বাড়ি জামে মসজিদে প্রায় ৩৩ বছর ধরে ইমামতি কর আসছেন আ. রহমান। আজহারের ছেলে আরিয়ান ওই মসজিদের মক্তবে পড়ালেখা করতো। আজহার নিজেও আব্দুর রহমানের কাছে কোরআন শিক্ষা করতেন। সেই সুবাদের তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। আজহারের বাসায় যাতায়াতও ছিল আ. রহমানের। এরই জেরে আছমা এবং আ. রহমান পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আজহার ইসলাম বিষয়টি জেনে যান। এ কারণে গত ২০ মে রাত ৯টার দিকে আজহারকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে দক্ষিণখান থানাধীন সরদার বাড়ী সাকিনস্থ জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় কর্নারে আ. রহমান তার শয়ন কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। রাত ১০টার দিকে আজহারুল দরজার সামনে পড়ে গেলে আ. রহমান আজহারুলের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও আলামত গোপন করার উদ্দেশে আজহারুলের লাশ ৬ টুকরো করেন আ. রহমান। পরে মসজিদের ওযুখানার গেট সংলগ্ন সেফটিক ট্যাংকের ভেতর টুকরোগুলো লুকিয়ে রাখে। কিছুদিন পর দুর্গন্ধ বের হলে তা গুম করার জন্য আ. রহমান সেফটিক ট্যাংকের ঢাকনার ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য রাখা সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে ঢেকে রাখে। পরে সেখান থেকে আজহারের টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আজহারের ছোট ভাই মো. হাসান দক্ষিণখান থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়