Image default
বাংলাদেশ

বরিশালের তরুন বিজ্ঞানী ওবায়দুলের “অটো ড্রেন ক্লিনার” আবিস্কার

সেন্সরের বিশেষ সিগন্যালে সয়ংক্রিয়ভাবে বরিশাল শহরের ড্রেন’ ও খালের ময়লা জনবল ছাড়াই পরিস্কার করতে পারবে এমন এক যুগান্তকারী যন্ত্র আবিস্কার করেছেন বরিশালের তরুন বিজ্ঞানী ওবায়দুল ইসলাম। যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন অটো ড্রেন ক্লিনার। ড্রেন ও খালের ময়লা পরিস্কার করতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করলে মশার বিস্তার ও পঁচা পানির দুর্গন্ধ বন্ধ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন এ বিজ্ঞানী।

চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, সেন্সরের দেওয়া প্রথম সিগন্যালে জানা যাবে ড্রেনের কতটুকু জায়গায় ময়লা জমে আছে এবং সিগন্যাল বা সংকেত আইসিতে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে অটো পদ্ধতিতে প্রেসার পাম্প চালু হয়ে পানির চাপ প্রয়োগ করে ড্রেনের পানির নিচে জমাট বাঁধা ময়লার স্থুপ পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে বেড়িয়ে যাবে। ময়লা ড্রেন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজস্ব সিগন্যালে মেশিন নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কোন জনশক্তির প্রয়োজন হবে না। দেশের সর্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও নিজ জেলা শহর বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এ প্রযুক্তি উপহার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আবিস্কারক ওবাইদুল ইসলাম।

ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত যন্ত্রটি সময়োপযোগী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী যন্ত্র। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ওবাইদুর ইসলাম’র আবিস্কৃত এ প্রযুক্তিটি বাস্থবায়ন হলে বরিশাল কিংবা ঢাকাবাসী সহ দেশের সকল সিটি ও পৌর এলাকায় বসবাসরত মানুষ একদিকে ড্রেনে ময়লার স্তুপের বাধায় জমে থাকা পানির দুর্গন্ধ ও সেখান থেকে উৎপত্তি হওয়া মশার উৎপাত কিংবা ভোগান্তি থেকে মুুক্তি পাবে বলে মনে করছেন সচেতন ব্যক্তিরা।

ওবায়দুল ইসলাম ২৬ বছর বয়সী এক হাস্যোজ্জ্বল তরুন। ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে বেশ পরিচিতি । মোঃ ওবাইদুল ইসলামের পিতা আহমদ আলী,মাতা আলেয়া বেগম । পিতার বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহের গতি ইউনিয়নের পূর্ব দেহের গতি গ্রামে। তার বাবার অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মা আলেয়া বেগম শেষ অবলম্বন ওবাইদুলকে বুকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে আসেন । ওবাইদুল মায়ের সাথে মামা বাড়ির পরিচয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের মধ্য পাংশা গ্রামে বেড়ে উঠেছে । যদিও বাবার বাড়ি এসেও আলেয়ার সুখে দিন কাটেনি নানান কারণে। ছোটবেলা থেকেই ওবাইদুলের উদ্ভাবনের নানা চিন্তা এবং স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে এবং দেশের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন করবে। মা ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রতিবেশির মন্দ কথা শুনেও গরু ছাগল পালন করে ছেলেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পাশ করান।

ওবাইদুল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ালেখার জন্য যখন বরিশাল ছেড়ে খুলনায় আসেন তখন খুলনা নতুন যায়গায় এসে ওবাইদুল বড় আর্থিক সমস্যায় পড়েন টেকনিক্যাল কাজের তেমন কোন পরিচয় ছিলনা তখন ওবাইদুলের। অবসরে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু টেকনিক্যাল কাজ করে কোন ভাবে মেসের খরচ চলত ওবাইদুলের। শিক্ষা জীবনে ওবাইদুল বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার পুর্ব-দেহের গতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী, রহমতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী এবং ২০১২ সালে বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশোনাল শাখার জেনারেল মেকানিক্স ট্রেড থেকে পাস করে খুলানায় চলে যান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার উদ্দেশ্যে।

ম্যানগ্রভ ইনষ্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলোজির মেকানিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স এ ভর্তি হন এবং ২০১৮ সালে মেকানিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করেন। ওবাইদুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই টেকনিক্যাল কাজের ওপর খুব আগ্রহি। ওবাইদুল ইসলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশা পাশি অন্য অন্য শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান থেকে টেকনিক্যাল কাজের ওপর শর্ট কোর্স করেন। এরমধ্যে টি,টি,সি খুলনা থেকে মেশিনটুলস অপারেশন বিভাগে ৬ মাস, ২০১৫ সালে ইউসেফ মহাসিন খুলনা থেকে ওয়েল্ডিং বিভাগে ৬মাসের কোর্স,খুলনা বিদ্যুৎ উন্নয়ন কেন্দ্রে থেকে ৬,মাসের ইন্ডাট্রিয়াল ট্রেনিং এবং ২০১৭ সালে বাগেরহাট থেকে ডিজিটাল কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার থেকে কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন কোর্স করেন। এছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১৫ ও২০১৬ সালে অংশ গ্রহন করেন। এ ছাড়া ওবাইদুল ইসলামের ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও মেকানিক্যাল কাজের ওপর বাস্তব দক্ষতা আছে ।

ওবাইদুল ইসলাম ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর নিয়মিত কোন জবে স্থয়ী নয় সে যে সকল বাস্থব কাজের ওপর ওবাইদুলের কোর্স করা রয়েছে খুলনায় সেই সকল কাজ করে বর্তমানে কোন রকম ওবাইদুলের খরচ চলছে।
ওবাইদুল ইসলাম তার ‘অটো ড্রেন ক্লিনার’ সম্পর্কে প্রতিদিনের সংবাদের এ প্রতিবেদককে বলেন,বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের প্রতিদিনের কলকারখানা,মিল ফেক্টরির ময়লা পানি , বসত বাড়ির ব্যবহারিত ময়লা নিস্কাশিত হওয়ার জন্য সরাসরি ড্রেনের সাথে ময়লা পানির পাইপ লাইন যুক্ত থাকে। ময়লা পানি যখন পাইপের মাধ্যমে ড্রেনে গিয়ে পৌছায় তখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় ড্রেন থেকে যে পরিমান পানি নিষ্কাসিত হবে তার থেকে বেসি পরিমানে ময়লা ও আবর্জনায় ড্রেনের যায়গা দখল করে পানি আটকে থাকার ফলে একদিকে যেমন পানির প্রবহমান গতিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। তেমনি ড্রেনের পানিতে আটকে থাকা আবর্জনা পঁচে গলে পরিবেশ দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ে এতে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু বরণ করে। বিশেষ করে ড্রেনে ময়লা আবর্জনা জমে থাকার ফলে। মশা, মাছির বংশ বিস্থার ঘটে এবং ডেঙ্গুর প্রবাব বেশি লক্ষ্য করা যায় ।

বাংলাদেশের ড্রেন ব্যাবস্থা পরিস্কার পরিছন্নতার ব্যপারে দেখা যায়। নগর পিতা ও জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় ও উদ্দ্যাগে কিছু ঠিকাদার কর্মি দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেন পরিস্কার করার কাজ করাণ হয় এক-দুই মাস পর পর। যেখানে দেখা যায় ড্রেনথেকে ময়লা তুলে ময়লার স্থুপ রাস্থায় রাখা হয় যাতে করে একদিকে দেখা,যায় ড্রেন পরিস্কার করার কাজে মাসের অর্ধেক সময় রাস্থাথেকে সব ধরণের চলাচল বন্ধ থাকে তেমনি অন্যদিকে চইলেও কখন দ্রুত ভাবে যান চলাচল সচল করা সম্ভব হয়না। এ সমস্যা একটি বড় সমস্যা বর্তমানে।

Related posts

সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

News Desk

বাংলাদেশেকে রাশিয়ার করোনার টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব

News Desk

সংস্কার হচ্ছে কালুরঘাট রেলসেতু, বন্ধ থাকবে যান চলাচল, প্রস্তুত ফেরি

News Desk

Leave a Comment