বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া বুধবার। এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। পুরাণমতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এদিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়।
এই হিসাবে পূজার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমার অন্যান্য কাজ শেষে তাদের হাতে ফুটে উঠছে প্রতিমার মুখমণ্ডল। কেউ আঁকছেন চুল, কেউ চোখের পাতা, আবার কারও তুলির নিপুণ ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে চোখ। দিন-রাত পালা করে চলছে এই কাজ। প্রতিটি শিল্পালয়ে তৈরি করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০টি প্রতিমা। শিগগিরই এসব প্রতিমা বগুড়ার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় এ বছর ৬২৮ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন চলছে। প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। চলছে সাজসজ্জার কাজ। দম ফেলার ফুসরত নেই শিল্পীদের। পাশাপাশি মণ্ডপগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে একসঙ্গে।
পুলিশ প্রশাসন বলছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রাক দুর্গাপূজা, দুর্গাপূজা চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জন ও দুর্গাপূজা পরবর্তী তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে পুলিশের পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। মণ্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক পুরুষ-নারী আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরে পুলিশের পাহারা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেবেন। প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক প্রতিটি মণ্ডপে ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। কোথাও কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানান, গত বছর জেলার ১২ উপজেলায় ৬৬৬ মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়েছিল। নানা কারণে এবার ৩৮টি কমে ৬২৮টিতে পূজার আয়োজন চলছে। এর মধ্যে সদরে ১১৭, শেরপুরে ৮৬, গাবতলীতে ৬৩, আদমদীঘিতে ৬৩, শিবগঞ্জে ৫৩, শাজাহানপুুরে ৪৮, নন্দীগ্রামে ৪৫, দুপচাঁচিয়ায় ৪০, সোনাতলায় ৩৫, ধুনটে ২৮, কাহালুতে ২৭ ও সারিয়াকান্দিতে ২৩টিতে আয়োজন চলছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার জেলায় ৬২৮ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন চলছে। এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে পালকিতে ও দেবী গমন করবেন হাতিতে চড়ে। পঞ্জিকা অনুসারে পূজার সপ্তমীতে দেবীর আগমন হয় আর গমন দশমীতে।’
শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন উল্লেখ করে নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও
আনসার সদস্যরা কাজ করবেন। মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে বলেছি আমরা। এখানের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক। সবকিছু ঠিক আছে। তাই মণ্ডপের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের মাঝে কোনও শঙ্কা নেই।’
জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আশা করছি, কোথাও কোনও ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই অংশ নেয়। পঞ্জিকা অনুসারে ২ অক্টোবর শুভ মহালয়া। মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় দেবীর আগমনী উৎসব। দুর্গাপূজার দিন-ক্ষণ গণনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই দিন থেকেই। ছয় দিন পর ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা। ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী ও ১২ অক্টোবর নবমী ও দশমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।’
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বছর মণ্ডপগুলোতে পূজার আগে ও চলাকালে এবং পরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে পাঁচ জন নারী-পুরুষ আনসার সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া সেনাসদস্য, র্যাব, পুলিশ ভ্রাম্যমাণভাবে দায়িত্ব পালন করবে। থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর থাকবে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।’
বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে কেনাকাটা। জেলার প্রতিটি ফ্যাশন হাউজে চলে এসেছে নতুন পোশাক। পূজা ঘিরে প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমলে কেনাকাটা এবং পোশাক তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি মার্কেটে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।