Image default
বাংলাদেশ

কমেছে বিদেশি ফল আমদানি, দাম বেড়ে দ্বিগুণ

এক বছরের ব্যবধানে আপেল, মাল্টা ও আঙুরসহ বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে। তার বিপরীতে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর ১০০ টাকায় পাওয়া যেতো আপেলের কেজি। এখন তা কিনতে হচ্ছে আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকায়। একই অবস্থা মাল্টা, আঙুর, নাশপাতি ও খেজুরসহ অন্যান্য বিদেশি ফলের। এর ফলে বিদেশি ফল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে মানুষ—এমনটি জানালেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে ডলার-সংকট দেখা দেওয়ায় গত বছরের ২৩ মে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে আমদানিকারকদের নগদ টাকায় ফল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই কারণে এসব ফলের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদেশি ফলের আমদানি গত বছরের তুলনায় অনেক কমেছে বলে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক নাছির উদ্দীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডলার-সংকট, এলসি খুলতে না দেওয়া ও শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিদেশি ফল আমদানিতে নানা প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি দেশেও এখন বিদেশি জাতের ফল উৎপাদন হচ্ছে। হয়তো এসব কারণে আমদানি কমেছে। সেইসঙ্গে দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব ফলের চাহিদা কমেছে।’

ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি ফলের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। আমদানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কমেছে ব্যবসা। ডলারের বাড়তি দাম ও আমদানি কমায় বাজারে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশি ফল আঙুর আমদানি হয়েছে আট হাজার ৪৫০ দশমিক ৭৯৩ টন, মাল্টা ২৩ হাজার ৭৭৬ দশমিক ১৬৯ টন, নাশপাতি তিন হাজার ৬৩৮ দশমিক ৫২২ টন এবং ড্রাগন আমদানি হয়েছে ৩২৫ দশমিক ৮০ টন। আগের বছর (২০২২ সাল) আঙুর আমদানি হয়েছিল ২৫ হাজার ৪৭৮ টন, মাল্টা ৩৫ হাজার ৪১৫ টন, নাশপাতি আট হাজার ৪২৮ টন এবং ড্রাগন এক হাজার ১৩০ টন।’

দাম বাড়ায় ফল বিক্রি কমেছে জানিয়ে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ের খুচরা ফল বিক্রেতা ওয়াজেদ মিয়া বলেন, ‘এখন প্রতি কেজি আপেল ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। মাল্টার কেজি ২৫০ টাকা, নাশপাতি ২৮০-৩০০ টাকা এবং আঙুর বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। অথচ এক বছর আগেও এসব ফলের দাম অর্ধেক ছিল।’

বহদ্দারহাট মোড়ে ফল কিনতে এসেছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের এক কারখানার কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। তাদের জন্য প্রতি সপ্তাহে কিছু ফল কিনতে হয়। তবে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আগে যেখানে এক কেজি করে কিনতাম, এখন আধা কেজি করে কিনছি।’

নগরীর মুরাদপুর এলাকায় বিদেশি ফলের ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেন, ‘বিদেশি ফলের ক্রেতা আছে। তবে দাম শুনে অনেকে ফিরে যান। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে। আগে যেখানে দিনে ৪০-৫০ কেজি ফল বিক্রি করতাম, এখন ২০-২৫ কেজি বিক্রি করতে কষ্ট হয়। আবার ক্রেতার অভাবে অনেক ফল নষ্ট হয়।’

চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্র জানায়, ডলার সংকটের মধ্যে বিলাস পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গত বছরের ২৩ মে থেকে সব ধরনের বিদেশি ফল আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল এনবিআর। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিদেশি ফলকে ২০১২ সালে বিলাস-পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর প্রভাবে আগে যেখানে বিদেশি ফলের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল ৩ শতাংশ, সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। সেই সঙ্গে আছে অন্যান্য ভ্যাট ও ট্যাক্স।

এ প্রসঙ্গে ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশি ফলে সব ধরনের শুল্ক বেড়েছে। এ কারণে আগের চেয়ে অন্তত অর্ধেক আমদানি কমেছে। সেই সঙ্গে ফলের দাম বেড়েছে। ফলে কম আমদানি হলেও সেগুলো বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে ফল নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা থাকলে আমদানি আরও কমে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, ভারত, ভুটান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মিসর, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফল আমদানি করা হয়। বিদেশি এসব ফলের সিংহভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আগে যেখানে ২০ কেজি আপেল আমদানিতে খরচ হতো এক হাজার ৫০০ টাকা, বর্তমানে খরচ হচ্ছে তিন হাজার ৬০০ টাকা। চীন থেকে ২০ কেজি আপেল কেনা পড়ে ১২ ডলার। ডিউটি ফি দিতে হচ্ছে কেজিতে ১০০ টাকা। আবার প্রতি ২০ কেজির কার্টনে পাঁচ শতাংশ পচা থাকে। সবমিলিয়ে কেজিতে ২০০ টাকা খরচ পড়ছে। আড়তদার ঘুরে এসব ফল যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতার কাছে। সেখান থেকে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে। মূলত দাম বাড়ায় মানুষের চাহিদা কমেছে, এজন্য বিক্রি কম হচ্ছে।’

Source link

Related posts

মহামারিতে উৎপাদন-রপ্তানি অব্যাহত রাখা বড় অর্জন: সালমান এফ রহমান

News Desk

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট

News Desk

জামায়াতের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ, আটক ২১

News Desk

Leave a Comment