আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টের ভূমিকা শুরুর দিকে এক ধরনের কৌতুকের বিষয় থাকলেও, ধীরে ধীরে এই পদের ক্ষমতা ও গুরুত্ব দু’টোই বেড়েছে। শুরুর দিকে নেলসন রকফেলার ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়ার সঙ্কটকালীন সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণের আগে কিছুটা সঙ্কোচের সাথে বলেছিলেন যে, “(তিনি) শুধুই নির্ভরযোগ্য সদাপ্রস্তুত থাকা সরঞ্জাম হতে (রাজনীতি করেন না) চান না।” কিছু লোক এখনও হয়তো বলবেন যে এই পদের কাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের পক্ষে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া, এটা উল্লেখ করে ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল রাজনীতি নিয়ে অধ্যয়নকারী ডেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ডিভাইন বলেন, তবে “সময় বদলেছে। এটা (এখন) সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।”

 Share America যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট
ছবি: share.america.gov

জেরাল্ড ফোর্ড প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগের কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে শীর্ষ পদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রকফেলারকে সঙ্গে নিয়েছিলেন, আর এভাবেই জেরাল্ড ফোর্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের গুরুত্ব সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন।

সাংবিধানিক ভিত্তি

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মূলত আমেরিকান ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদের জন্য খুব সীমিত দায়িত্ব বা ছোট ভূমিকার কথা ভাবা হয়েছিল। সংবিধানে ভাইস প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি কোন বিষয়ের উপর ভোটাভুটিতে সমান সংখ্যক ভোটের ক্ষেত্রে তাঁকে নির্ণায়ক ভোট দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শুরুর দিককার ভাইস প্রেসিডেন্টগণ তাঁদের বেশিরভাগ সময় সিনেট অধিবেশনে কাটিয়েছেন। “উনিশ শতকের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি মূলত আইনসভার একটি পদ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং তিনি পূর্ণকালীন সময়ের জন্য সিনেটের সভাপতিত্ব করতেন,” এভাবেই বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্সি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সেন্ট লুই ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ল-এর অ্যামেরিটাস প্রফেসর জোয়েল কে. গোল্ডস্টেইন।

শুরুরদিকে, প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচন প্রচারাভিযানে আদর্শিক বা ভৌগোলিক ভারসাম্য আনার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেওয়া হতো। তবে এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিষয়গুলো খুব কম গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ করে ডিভাইন বলেন, “এখন ভৌগোলিক গুরুত্ব কম এবং অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক বেশি।“

পদের দায়িত্ব বেড়েছে

গত কয়েক দশক ধরে প্রেসিডেন্টরা নিজেরাই ভাইস প্রেসিডেন্টের পদের দায়িত্বের সম্প্রসারণ করেছেন। শুরুটা করেছিলেন “ওয়াশিংটন আউটসাইডার” হিসেবে খ্যাত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, যিনি ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কার্টার উপলব্ধি করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা মানুষটির দ্বারা দেশের উপকার হওয়া দরকার। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াল্টার মন্ডেলকে একজন সত্যিকারের অংশীদার এবং উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, প্রফেসর গোল্ডস্টেইন এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট মন্ডেল সিনেটে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে অফিস করতে শুরু করেন। ফলে, তিনি যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময়ে ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট কার্টারের সাথে দেখা করতে যেতে পারতেন এবং সভাগুলোতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেন। গোল্ডস্টেইন বলেন যে, এটি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি ছিল, যা পরবর্তী প্রেসিডেন্টগণ অব্যাহত রেখেছেন।

প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৪৫ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট মারা যাওয়ার পরে যা ঘটেছিল তা শুনে কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলে মনে করেন গোল্ডস্টেইন। সে সময়ে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মারা যাওয়ার পর তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানকে দেশের পরমাণু বোমা তৈরির গোপন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল।

গোল্ডস্টেইন বলেন, “কার্টার ভেবেছিলেন এটা নিতান্তই অগ্রহণযোগ্য যে এতোটাই কাছে থাকা একজন বিষয়টা জানবেন না।“

সাম্প্রতিক প্রশাসনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রেসিডেন্টের বড় সহযোদ্ধা ও ভূমিকা পালনকারী হিসেবে দেখা যেতে পারে। গোল্ডস্টেইন বলেন, ফেডারেল সরকারের সম্প্রসারিত ভূমিকার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্টের উত্তরসূরি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি দেশের শুরুর দিককার সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর আধুনিককালের হুমকির অর্থ হলো কেউ একজন সবসময় সঙ্কটের সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

সিনেটে নির্ণায়ক ভোট দেয়া এবং প্রেসিডেন্ট যখন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বাবলী পালনের পাশাপাশি একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন যে দায়িত্বগুলো পালন করতে শুরু করেছেন:

তাঁরা প্রেসিডেন্টের পক্ষে নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক কমিশন ও অন্যান্য উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাগুলোর নেতৃত্ব দেন। উদাহরণস্বরূপ, ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পক্ষে “সরকার পুনর্গঠন” প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বিদেশ ভ্রমণ করেন, বিশেষত যখন প্রেসিডেন্ট অন্য দেশের সাথে কোন ধরনের চুক্তির আলোচনায় বসতে প্রস্তুত নন, কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি বা দূত পাঠাতে চান তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁরা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন যাঁদের আনুগত্য প্রশ্নাতীতভাবে প্রেসিডেন্টের প্রতি, অন্য কারো প্রতি নয়। ডিভাইন বলেন, “সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তাঁরা শক্তিশালী মিত্র হতে পারেন — যিনি কোন আমলাতান্ত্রিক খোলসের আশ্রয় নেন না।”

তথ্য সূত্র: শেয়ার আমেরিকা

Related posts

কোলবালিশ সম্পর্কে অবাক করা চার তথ্য

News Desk

আয়নার অজানা কথা ও রহস্যময় তথ্য

News Desk

কোরিয়ান ভাষা শেখার সহজ উপায়

News Desk

Leave a Comment