বর্তমানে আমরা তথ্য প্রযুক্তির বিস্ময়কর একটি সময়ে বাস করছি। আমাদের কোনো তথ্য জানতে হলে তা খুব সহজেই হাতে থাকা মুঠোফোন থেকেই পেয়ে যাই।
তবে আমাদের পৃথিবী কালের বিবর্তনের মধ্য দিয়েই বর্তমানের এই সময়ে এসে পৌঁছেছে। শুরুর সময়ে মানুষ এমন সব তথ্য বিশ্বাস করত যা বর্তমান সময়ে এসে হাস্যকরই বটে! আর সমাজের মানুষেরা মন গড়া এসব তথ্য মনে প্রাণে বিশ্বাস করত শত শত বছর ধরে। কারণ তাদের হাতে তখন এখনকার মতো গুগল, উইকিপিডিয়া বা ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল না। এজন্য প্রচলিত কথাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো তারা। জেনে নিন তেমনই কয়েকটি সত্যি ভাবা মিথ্যা। যা শত শত বছর ধরে মানুষ সত্যি বলেই ভেবেছে।
গ্রেট ওয়াল অব চায়না
গ্রেট ওয়াল অব চায়না হলো বিশ্বের সপ্তাশ্চার্যের মধ্যে একটি। যা দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারা বছরই পর্যটকরা ভিড় করে থাকে। এটির আকর্ষণের মূল কারণ এটি শত শত বছর আগে মানুষের তৈরি একটি প্রতিরক্ষা সীমানা প্রাচীর। যার দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার। এটিকে নিয়ে রটানো হয়েছিল ইতিহাসের অন্যতম দুটি মিথ্যা। যা জানলে হয়তো আপনিও অবাক হবেন।
একটি ছিল যে স্পেস থেকে এটি স্পষ্ট দেখা যেত। কিন্তু মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র নাসা জানায় যে এই প্রতিরক্ষা প্রাচীরটি পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে আবছা দেখা যায় মাত্র। সেটাও কেবল আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে। যেমনটি অন্যান্য বড় স্থাপনাগুলোও স্পেস থেকে দেখা যায়। তবে মানুষ আগে ভাবত মহাকাশ থেকেও এটি স্পষ্ট দেখা যায়। ১৭৫৪ সালে আবার কিছু মানুষ বিশ্বাস করতে থাকে চাঁদের সারফেস থেকেও এটি দেখা যায়। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি এটি প্রমাণ করেছে যে এটি চাঁদের সারফেস সীমানা থেকে ততটুকু স্পষ্ট দেখা যায় যতটুকু তিন কিলোমিটার দূর থেকে একজন মানুষের চুল দেখা যায়।
পিরামিড তৈরি করেছে ক্রীতদাসরা
পৃথিবীর সর্বস্তরের মানুষ এবং বিজ্ঞানীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ধারণা করা হয় কয়েক হাজার ক্রীতদাস শ্রেণির লোকেদের দিয়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে এটি তৈরি করা হয়েছিল। ১৯ শতকের বেশিরভাগ মানুষ মনে করতেন এটি। যা কোনো ভাবেই একটি গোষ্ঠীর দ্বারা তৈরি করা সম্ভব না। কারণ শুধু তাদেরকে এটি তৈরি করতে হলে রাত দিন ২৪ ঘন্টা কোনো রকম কর্মবিরতী না দিয়ে এটি করতে হতো। এমনকি তাদের খাবার সহ আনুষাঙ্গিক রসদ যোগান দিতে আরো একটি দলের প্রয়োজন। অন্য একটি দলকে তাদের প্রতিরক্ষার কাজ করতে হতো। যা সেসময়ে কখনো সম্ভব ছিল না। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে শুধু মাত্র একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এই পিরামিডগুলো বানিয়েছে। তবে কারা, কীভাবে এবং কবে এটি বানানো হয়েছে তা আজো অমীমাংসিতই রয়েছে।
দুধ খেলে হাড় শক্ত হয়
আমরা টিভিতে দুধের যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখি, তাতে বলা হয়ে থাকে দুধ খেলে হাড় মজবুত হবে। এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে দেখতে আমাদেরও তাই বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। আমরাও বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, আমাদের হাড় মজবুত করতে দুধ খেতেই হবে। তবে সত্যিকার অর্থে আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। দুধে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি খেলে আমাদের শরীরের হাড় মজবুত হয়। তবে আপনি দুধের বিকল্প অন্য খাবারও খেতে পারেন। যেগুলোতে দুধের থেকেও বেশি ক্যালসিয়াম থাকে।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় একটি রিসার্সের পর জানিয়েছেন, যেসব দেশের মানুষেরা দুধ পান করে তাদের হাড়ের গঠন যতোটা হয়ে থাকে, তাদের তুলনায় যেসব দেশের মানুষ দুধ পান করে না তাদের হাড়ের গঠনের ক্ষমতা বেশি থাকে। কারণ তাদের কাছে দুধের বিকল্প অনেক খাবার যেমন- বাদাম, ডাল, ডিম,স্যালমন মাছ রয়েছে। যা তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। বরং এগুলোতে দুধের তুলনায় বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে।
মাউন্ট এভারেস্ট
মাউন্ট এভারেস্টকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ ধরা হয়। এটি আমরা শুনতে শুনতে বা বইপুস্তকে পড়তে পড়তে বড় হয়েছি। কিন্তু জানেন কি এ তথ্যটি পুরোপুরিই ভুল। তবে আপনি যদি সমদ্রের উপর থেকে চিন্তা করেন তবে এটিই সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। কিন্তু যদি সমুদ্রের নিচ থেকে অর্থাৎ যেখান থেকে পর্বত শুরু হয়েছে, তাহলে মুনাকিয়াই পৃথিবীর সবথেকে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ। ১৩ জাহার ৭৯৬ ফিট অর্থাৎ চার হাজার ২৯৫ মিটার। আর পানির নিচে রয়েছে আরো ১৯ হাজার ৭০০ ফিট। তাহলে সর্বোমোট ছয় হাজার মিটার পর্যন্ত পানির নিচে রয়েছে। সব মিলিয়ে হিসাব করলে মুনাকিয়াই পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৫০০ ফুট অর্থাৎ ১০ হাজার ২১০ মিটার। যেখানে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ২৯ হাজার ২৯ ফিট অর্থাৎ আট হাজার ৮৪৮ মিটার।
ব্ল্যাকহোল
ব্ল্যাকহোল দেখতে ছিদ্রের মতো হয়ে থাকে। এটি নিয়ে অনেক মুভি এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। যা হয়তো আপনি দেখেও ফেলেছেন। মুভিতে এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক কাহিনী চিত্রতে এটিকে ছিদ্রের মতো করে দেখানো হয়েছে। তবে জানলে অবাক হবেন যে, এটি দেখতে মোটেই ছীদ্রের মতো না। ১৯১৬ সালে প্রথম আলবার্ট আইনস্টাইন তার থিওরি অব রিয়েলিভিটিতে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তবে তখন এটাকে প্রমাণ করার মতো তার কাছে উপযুক্ত কোনো উপাত্ত ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে একজন আমেরিকান থিওরিটিকাল ফিজিসিস্ট ডঃ জন হুইলার এটি প্রমাণ করে পৃথিবিকে দেখান। নাসার সূত্র মতে এটি ছিদ্রের মতো নয়। এটি এমন একটি অবজেক্ট যার গ্রাভিটি এতো বেশি যে, সেখান থেকে সামান্য আলোও ফিরে আসতে পারেনা। মূলত এটিকে দেখাই যায় না। তবে সুপার এডভান্সড টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁজে দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করে নেন সেই অঞ্চলে ব্ল্যাকহোল রয়েছে।
সূর্য হলুদ রঙের
সূর্য হলুদ রঙের হয়ে থাকে যা আমরা এখন পর্যন্ত জেনে এসেছি। তবে সূর্য কিন্তু লাল বা হলুদ বিভিন্ন রঙেই দেখা যায়। সকালে এবং দুপুরে সূর্য হলুদ থাকে আর বিকালে লাল রঙের হয়ে থাকে। আচ্ছা যদি বলি সূর্য লাল বা হলুদ কোনো রঙেরই না। সূর্য সবুজ রঙের, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? আসলে সূর্য লাল, হলুদ, নীল, সবুজ রঙের সংমিশ্রণে তৈরি। সূর্যকে যদি স্পেস থেকে দেখেন তাহলে এটি সাদা রঙের দেখবেন। আসলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের জন্য একে লাল বা হলুদ রঙের দেখা যায়। সত্যিকার অর্থে সূর্য লাল থেকে শুরু করে হলুদ সবুজ এবং নীল পর্যন্তও রঙ ধারণ করতে থাকে। তাহলে সূর্যকে সবুজ কেন বলা হলো? কারণ এসব রঙগুলোর মধ্যে সবুজ রঙটি বেশি ধারণ করে। মূলত নীল এবং সবুজের মাঝামাঝি রঙের হয়ে থাকে। তাই সূর্যের রঙ সবুজ ধরা হয়।