আগেকার সময়ে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারাটাই অনেক সাংঘাতিক ব্যাপার ছিল। তবে তারপর আসলো মোবাইল থেকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রচলন। এবং শেষে, এখনের সময়ে একটি মোবাইলের থেকে আরেকটি মোবাইলে ইন্টারনেট পাঠিয়ে বা শেয়ার করে ব্যবহার করা হয়। আর এই ক্ষেত্রে ওয়াইফাই (WIFI) এর ব্যবহার প্রচুর পরিমানে করা হয়। তবে ওয়াইফাই (WIFI) যে কেবল ইন্টারনেট শেয়ার (share) করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তেমন নয়। WIFI হলো এমন একটি wireless signal যেটা ব্যবহার করে একাধিক computer device পরস্পরে সংযুক্ত হয়ে থাকতে পারে। ফলে, সংযুক্ত হয়ে থাকা device গুলো একে আরেকজনের সাথে file বা data ইত্যাদির আদান প্রদান করতে পারে। আর এই wireless signal এর ফলেই device গুলো পরস্পরে “internet data” নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে নেওয়ার সুবিধে পেয়ে থাকে। WIFI কে আমরা একটি wireless technology বলেও বলতে পারি, যেখানে কোনো তার ছাড়াই বেতার ভাবে একটি computer আরেকটি computer এর সাথে সংযুক্ত হতে পারে।
আপনারা কি জানেন, আসলে ওয়াইফাই (WiFi) এর একটি অন্য নাম রয়েছে ? Wi-Fi এর পূর্ণরুপ হলো Wireless Fidelity. ওয়াই-ফাই একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি যা কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস এবং অন্যান্য প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ দেয়। এই প্রযুক্তিতে একে অপরের সাথে তথ্য সরবরাহ করতে তারের পরিবর্তে একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সংকেত ব্যবহার করে। সুতরাং, ওয়াইফাই হলো একটি তারবিহীন প্রযুক্তি। Wi-Fi এর সাথে সংযুক্ত ডিভাইসে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সরবরাহ করতে কাছের ডিভাইসগুলি থেকে সিগন্যালগুলি প্রেরণ ও গ্রহণ করতে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ রাখতে, ওয়াইফাই একটি সর্বব্যাপী সহজ এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওয়াই-ফাই আমাদের দ্রুতগতির প্রতিদিনের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ অফিসে, হোটেলে, ক্যাফে, এয়াপোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, মার্কেটে এবং অন্যন্য জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াইফাই ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য। ওয়াইফাই একটি তারবিহীন যোগাযোগ মাধ্যম হওয়াই বেশিরভাগ মানুষই এটি ব্যবহার করে ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কাজে।
WiFi কিভাবে কাজ করে?
ওয়াইফাই সক্ষম ডিভাইসগুলি রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। অর্থাৎ ওয়াই-ফাই ফ্রিকোয়েন্সিগুলির মাধ্যমে আপনার ডিভাইস এবং রাউটারের মধ্যে তথ্য প্রেরণ করতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। ডেটা প্রেরণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে দুটি রেডিও-ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যেতে পারে: 2.4 গিগাহার্টজ এবং 5 গিগা হার্টজ। Wifi সাধারণত 802.11b স্ট্যান্ডারর্ডে ভালো ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়।
দুটি প্রধান ধরণের ওয়্যারলেস সংযোগ রয়েছে যা আপনাকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে পারে: আপনার মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীর মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বা ওয়াইফাই রাউটার নামক একটি ডিভাইসের মাধ্যমে একটি ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সংযোগ। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক যেহেতু দ্বিমুখী ট্র্যাফিক হিসাবে কাজ করে, ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত ডেটাগুলি রাউটারের মাধ্যমে একটি রেডিও সিগন্যালে কোডড হয়ে পাস করবে যা কম্পিউটারের বেতার অ্যাডাপ্টারের মাধ্যমে প্রাপ্ত হবে।
WiFi এর বৈশিষ্ট্য
ওয়াই-ফাই যোগাযোগ ব্যবস্থায় উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সী রেডিও ওয়েব ব্যবহার করা হয়।
WiFi ব্যবহার করে একই সাথে একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যায়।
এটি ওয়ারলেস Local Area Network IEE802.11 এর জন্য (Institute of Electrical and Eletromics Enginners) প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড।
কর্ডলেস টেলিফোনের ন্যায় বিভিন্ন পোর্টেবল ডিভাইস ও ফিক্সড ডিভাইসের নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।
এর কাভারেজ এরিয়া একটি কক্ষ, একটি ভবন কিংবা কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হতে পারে।
হটস্পট গুলোতে এটি ব্যবহার করা যায় এবং এর কাভারেজ খুব বেশি এলাকায় পাওয়া যায় না।
ওয়াই-ফাই পণ্যসমূহ ওয়াইফাই এলায়েন্স কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত।
WiFi এর প্রকারভেদ (Different types of WiFi technologies)
চলুন এখন নিচে আমরা ওয়াইফাই প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রকার গুলোর বিষয়ে জেনেনেই।
IEEE 802.11a: ১৯৯৯ সালে IEEE দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল যেটা ১১৫ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত কাজ করবে। এই WiFi network টি 54 Mbps গতিতে কাজ করতে পারে।
IEEE 802.11b: ১৯৯৯ সালে সাধারণ ভাবে ঘরোয়া ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এটা তৈরি করা হয়েছিল যেটা 11 Mbps গতিতে ১১৫ ফুট পর্যন্ত কাজ করবে।
IEEE 802.11g: ২০০৩ সালে 802.11a এবং 802.11b দুটোকে মিলিয়ে এই 802.11g তৈরি করা হয়েছিল। এর গতি 54 Mbps এবং এই নেটওয়ার্ক ১২৫ ফুট পর্যন্ত কাজ করবে।
IEEE 802.11n: Dual band router গুলোতে কাজ করার জন্য এটাকে আনা হয়েছিল। এর data transfer করার ক্ষমতা হলো 54 Mbps এবং ২৩০ ফুট পর্যন্ত কাজ করে। ২০০৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
IEEE 802.11ac: এটাও ২০০৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল যার গতি 1.3 Gbps এবং ১১৫ দূরত্ব কভার করতে পারবে।
তাহলে দেখলেন তো, WiFi network এর আলাদা আলাদা প্রকার ও ক্ষমতার বিষয়ে।
প্রত্যেক আলাদা আলাদা ধরণের WiFi network গুলোর speed এবং দূরত্ব কভার করার ক্ষমতা আলাদা আলাদা হতে পারে।
WiFi কিভাবে কাজ করে ?
Device গুলোর মধ্যে তথ্যের (information) আদান-প্রদান করার উদেশ্যে WiFi যেই প্রক্রিয়াটিকে ব্যবহার করে সেটা হলো “নেটওয়ার্ক এর রেডিও তরঙ্গ“. মনে রাখবেন, WiFi ব্যবহার করার আগে, আপনার computer, smartphone বা অন্যান্য device গুলোতে একটি wireless adapter লাগানো থাকতেই হবে। আপনি নিজের কম্পিউটারে একটি wireless adapter আলাদা করেও লাগাতে পারবেন। আর এই wireless adapter এর মূল কাজ হল network এর মাধ্যমে গ্রহণ করা data বা information গুলোকে “radio signal” এর রূপে প্রেরণ (transmit) করা। তাই বলা যেতে পারে যে, ওয়াইফাই যেকোনো অন্য ওয়্যারলেস ডিভাইস (wireless device) এর মতোই কাজ করে। এখানে, সংযুক্ত থাকা computer device গুলোর মধ্যে signal পাঠানোর জন্য radio frequencies এর ব্যবহার করা হয়। Signal গুলোকে এন্টিনার মাধ্যমে ডিকোডার এর মধ্যে পাঠানো হয়। Signal decoder কে আমরা router এর নামেও বলি। একবার সিগন্যাল গুলো রাউটার এর মাধ্যমে ডিকোড হয়ে যাওয়ার পর সেগুলোকে ethernet connection এর দ্বারা internet এর কাছে পাঠানো হয়। ঠিক এভাবেই, ইন্টারনেট থেকে ডাটা গ্রহণ করা ডাটা প্রথমেই রাউটার এর মধ্যেই আসবে। এবং, রাউটারের মধ্যে ইন্টারনেট থেকে আসা প্রত্যেকটি ডাটা ডিকোড হয়ে রেডিও সিগন্যালে রূপান্তর করা হবে। তারপর শেষে, ওয়াইফাই রাউটার এর সাথে সংযুক্ত computer device গুলোতে থাকা wireless adapter, সেই রেডিও সিগন্যাল গুলোকে গ্রহণ করবে।
Wifi চালাতে কি কি লাগে ?
WiFi চালাতে বা WiFi লাইন নিতে কি কি লাগে এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে, আমি ভেবে নিচ্ছি যে আপনারা ইন্টারনেট ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ওয়াইফাই কানেকশন নেওয়ার কথা ভাবছেন।
এবং, সেই ক্ষেত্রে আপনাদের লাগবে,
Modem: একটি সরাসরি ভাবে ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে। মডেম fixed বা wireless দুটো ভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
Router: একটি রাউটার এর কাজ হলো, মডেম থেকে তথ্য বা ডাটা সংগ্রহ করে সেগুলোকে রেডিও সিগন্যালে ডিকোড করা। এবং, ডিকোড করা সেই সিগন্যাল গুলোকে কম্পিউটারের ডিভাইসে প্রেরণ করা।
Wireless USB adapter: একটি wireless USB adapter আপনার কম্পিউটার ও ল্যাপটপে লাগাতে হবে। এই wireless adapter, রাউটার থেকে ডিকোড হয়ে আসা তথ্য ও ডাটা গুলোকে গ্রহণ করে। ফলে আপনি আপনার কম্পিউটার ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে আধুনিক অনেক মডেম বাজারে পেয়ে যাবেন যেগুলো রাউটার এবং মডেম দুটোর কাজ করে নিতে পারে। তাই, আলাদা আলাদা করে modem এবং router কেনার প্রয়োজন আপনার হবেনা।
Wi-Fi এর সুবিধা সমূহ:
ওয়াইফাই রাউটার দিয়ে আপনি একাধিক ডিভাইসে একসাথে সংযোগ করতে পারেন। Wi-Fi এর স্পীড খুব দ্রুত হওয়ার কারনে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসাধারণের নিকট। আপনি যে কোনও স্থান থেকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারেন(আপনার রাউটারের সিগনাল অনুযায়ী)। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়াইফাই একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ হিসাবে পরিচিত। কাঠামোগত ক্যাবলিং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই আপনি খুব সহজেই ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন। ওয়াইফাই খুব দ্রুত এবং সহজ। ওয়াইফাই সিস্টেম এবং এর প্রোটোকলগুলির প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। আপনি খুব সহজেই টিপি-লিংক, ডি-লিংক, টেন্ডা ইত্যাদি থেকে খুব সাশ্রয়ী মূল্যে ওয়াইফাই পেতে পারেন। বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসে WIFI ব্যবহার করতে পারবেন যেমন: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ডিভাইস এবং অন্যান্য পোর্টেবল ডিভাইস। ইন্টারনেট যে কোনও জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। বাস, ট্রেন, কফি-শপ, সুপার মার্কেট ইত্যাদি। আপনি Wi-Fi এক্সটেন্ডার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কটি প্রসারিত করতে পারেন।
Wi-Fi এর অসুবিধা সমূহ:
ডেটা ট্রান্সফার রেট কমে যায় যখন ব্যবহারকারী বা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ওয়াইফাই রাউটারে আমাদের নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি রয়েছে। আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়াইফাই অ্যাক্সেস প্রায় ৩০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত (যেমন ১০০ থেকে ৩০০ ফুট) সীমাবদ্ধ। অনেক রাউটার সর্বাধিক ৩০ ডিভাইসকে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয়। আপনি আরও ডিভাইস যুক্ত করার সাথে সাথে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইদথ দুর্বল হয়ে যায়। ওয়াইফাই এর কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিও হতে পারে; যেমন: ক্যান্সার, অনিদ্রা, অ্যাপোপটোসিস এবং গর্ভবতী মহিলাদের ওয়াইফাই রেডিয়েশনের বাইরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সঠিকভাবে সুরক্ষিত না করা হলে লোকেরা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস করতে পারে এবং তথ্য চুরি করতে এবং এমনকি খারাপ উদ্দেশ্যে আপনার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
Wi-Fi এর অনেক সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই রয়েছে। তবে এর অনেক সুবিধা থাকার কারনে, এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সময়ের সাথে সাথে Wi-Fi এর ব্যবহার কারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছ এবং অদূর ভবিষ্যৎ এ Wi-Fi এর ব্যবহার আরো ব্যাপক হরে বাড়বে বলে অনুমান করা যায়।