Image default
প্রযুক্তি

সামাজিক মাধ্যম, ওটিটি নিয়ন্ত্রণে খসড়া নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইন মাধ্যম হইচই, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, বঙ্গবিডিসহ ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রস্তাবিত নাম দেয়া হয়েছে-‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’। কিন্তু নীতিমালাটি নিয়ে  এরইমধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বিটিআরসি’র উদ্যোগ নিয়ে। এ ধরনের নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সংশ্লিষ্টদের মতে, নীতিমালায় নানা ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই শাস্তি কে দেবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিটিআরসি একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কোনো অপরাধে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে ১৬ পৃষ্ঠার খসড়া নীতিমালাটি ইংরেজিতে প্রকাশ করেছে। ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই খসড়া নীতিমালার ওপর মতামত চেয়েছে। এরইমধ্যে ওই সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু কতজন ও কি ধরনের মতামত জানানো হয়েছে তা এখনই প্রকাশ করতে রাজি নয় বিটিআরসি। তাদের বক্তব্য, উদ্যোগটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সময় নিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং নেটফ্লিক্সের মতো ওভার দ্যা টপ বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে তারা নীতিমালা প্রণয়নের এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের এই নীতিমালা তৈরির জন্য হাইকোর্টেরও নির্দেশ রয়েছে।

বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র জানিয়েছেন, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনাগুলোর পর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক মাধ্যমে শৃঙ্খলার বিষয়ে একজন আইনজীবী রিট করেছিলেন। সেই রিট মামলার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বিটিআরসিকে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। খসড়া নীতিমালায় নানা ধরনের বিধি-নিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কোনো ধর্মের অনুসারীদের আহত করে বা আঘাত দেয়- এমন কোনো মন্তব্য বা বিষয় প্রচার করা যাবে না। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করে, এমন কিছু করা যাবে না। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটূক্তি করা যাবে না।  দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে কোনো মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এসব পোস্ট বা প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসাথে এই বিষয়গুলোতে ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষসহ সব সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনের প্ল্যাটফর্মগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে। এছাড়া নেটফ্লিক্স, হইচই এবং অ্যামাজন প্রাইম-সহ বিনোদনের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে অশ্লীল এবং অনৈতিক কোনো কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না, বলা হচ্ছে নতুন নীতিমালার খসড়ায়। নীতিমালায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধু দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে- এ ধরনের মন্তব্য, খবর বা কন্টেন্ট সামাজিক মাধ্যমে বা বিনোদন প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা যাবে না। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এটি না মানলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। নীতিমালার খসড়ায় অন্যের পরিচয়ে সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট বিষয়কেও অপরাধ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। কেউ অন্য একজনের নাম বা পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে তৎপরতা চালালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যের নামে পোস্ট দিয়ে কেউ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে আসল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব এসেছে। কোনো ব্যক্তিকে সমাজে হেয় করবে- এমন কোনো পোস্ট বা মন্তব্যও করা যাবে না। বিটিআরসি জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও সামাজিক মাধ্যম এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিস্তার ঘটছে ব্যাপকভাবে, সেজন্য আইন থাকলেও নীতিমালা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক রীতির সঙ্গে যা মানানসই নয়, সে ধরনের কন্টেন্ট এসব প্রতিষ্ঠান আপলোড করতে পারবে না। সেজন্যই এই নীতিমালা করা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তার পিএ পরিচয় দেয়া কামরুল হাসান হিরো প্রতিবেদককে ফোন করে বিষয় জানতে চান। এ সময় তিনি বলেন, স্যার বলেছেন- উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে বিটিআরসি’র নীতিমালার উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বিটিআরসি একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। এটা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান নয়। যেসব লাইসেন্সিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদেরকে রেগুলেট করে জনগণকে সেবা দেয়াটাই তাদের কাজ। নীতিমালার মাধ্যমে বিটিআরসি আসলে জনগণের মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এটা সম্পূর্র্ণ সংবিধান পরিপন্থি। তাছাড়া নীতিমালায় ফেসবুক ও ইউটিউবকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছে। তারা তো বাংলাদেশের লাইসেন্স নেয়া কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তাহলে বিটিআরসি তাদেরকে কীভাবে রেগুলেট করবে? তিনি বলেন, কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অন্যায় মত প্রকাশ করে তাহলে তার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো- এই শাস্তি কে দেবে? বিটিআরসি নাকি অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিটিআরসি কি নিজের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য এটা করতে চায়- এসব নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, মোদ্দাকথা এ ধরনের নীতিমালা বিটিআরসি তৈরি করতে পারে না। তারা রেগুলেট করে জনগণকে সেবা দিতে পারে মাত্র। জনগণকে শাস্তি দিতে পারে না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এর আগে খসড়া নীতিমালা করতে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিটিআরসি। কমিটিতে বিটিআরসি’র কমিশনার (এলএল) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনকে আহ্বায়ক এবং উপ-পরিচালককে (আইন) সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন-বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (এসএস), পরিচালক (আইন), পরিচালক (এসএস), তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি (উপ-সচিবের নিচে নয়), অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের একজন প্রতিনিধি (উপ-পরিচালকের নিচে নয়) এবং বিটিআরসি’র একজন আইন পরামর্শক।

তথ্য সূত্র : mzamin

Related posts

মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান হলেন সত্য নাদেলা

News Desk

সাইবার সিকিউরিটি (cyber security) কি? কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন, এর প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

News Desk

গুগল ক্রোমে যেসব নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে

News Desk

Leave a Comment