টেকস্যাভি জীবনে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু মোবাইলের রঙিন স্ক্রিন আপনার চোখের জন্য কতটা ভালো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্ক্রিন থেকে চোখ বাঁচাতে ভরসা মোবাইলের গ্রে মোড। ধূসর স্ক্রিন কী ভাবে বাঁচাবে চোখ? অরুণোদয় কুণ্ডু

আধুনিক টেক-স্যাভি জীবনের নতুন রোগ মোবাইল Addiction। সকলেই এই আসক্তি কথা বোঝেন, কিন্তু সজ্ঞানে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। ফলে, বাড়তে থাকে আসক্তি। চোখের সমস্যা থেকে মাথাধরা, খিটখিটে মেজাজের দোসর হাইপারটেনশন। শিকড় অনেক গভীর। তবুও নিজের অজান্তেই কখনো ঘড়ি দেখতে কখনো বা মেসেজ টোনের টানে হাতটা চলে যায় স্ক্রিনে। আর চোখ গিলতে থাকে সেই রঙিন দুনিয়ার দুয়ার খোলা হাজার বিনোদনের মেলা। এ যেন এক সম্মোহনী দানব। শিকার বুঝতেও পারেনা কখন সে নিজেই এসে ধরা দিয়েছে জালে।

কেমন হয় যদি ওই রঙিন পর্দার হাতছানিকে ধূসর পর্দায় মুড়ে ফেলা যায়?

ফোনের যাবতীয় রঙকে শুষে ধূসর করে দেওয়া গ্রে-স্কেল মোডের কথাই বলছি। গুগলের প্রাক্তন ডিজাইন এথিসিস্টট্রিস্টান হ্যারিস কিন্তু এটাকেই একটা সহজ এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায় বলে নির্দেশ করছেন, যা আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলবে সরাসরি। হ্যারিসের সংস্থা সেন্টার ফর হিউম্যান টেকনোলজির তথ্যও বলছে, গ্রে-স্কেল মোড ব্যবহারকারীদের মধ্যেস্যোশাল মিডিয়া বা গেম ডাউনলোডের ব্যাপারে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এমনিতে ফোনের আসক্তি থেকে বাঁচতে অনেকেই কম প্রয়োজনীয় অ্যাপ মোবাইল থেকে মুছে, কেউ বা আবার নোটিফিকেশন বন্ধ করে বা মোবাইলে ঘড়ি দেখা বন্ধ করে হাতঘড়ির পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সবটাই আংশিক। সেই দিক থেকে অনেক বিজ্ঞানসম্মত এই গ্রে- স্কেলের দাওয়াই। কারণ আমাদের চোখ তথা মস্তিষ্ক সহজেই আকৃষ্ট হয় উজ্জ্বল অথবা রঙিন কিছুর দিকে। আর সেই আকর্ষণকেই হাতিয়ার করে বিভিন্ন অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট সবসময় আমাদের মনকে প্রলোভন যুগিয়ে চলেছে ফোনে টুকটাক টোকা দেবার জন্য। তাই যদি সেই আকর্ষণের রঙটাকেই সরিয়ে রাখা যায় স্ক্রিন থেকে?

সেক্ষেত্রে সহজাত ভাবেই চোখ আর সেদিকে তাকাতে চাইবে না। ইনস্টাগ্রাম এর ছবিগুলো তখন আর ভালো লাগবে না। মোবাইল গেমের চরিত্ররা রঙের অভাবে হয়ে যাবে বোরিং।দরকারি কাজের বাইরে বিনোদন বা অকারণে ফোন ঘাঁটার আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসাটাই এই উদ্যোগের মূল কথা। যন্ত্র নির্ভরতা থেকে স্বাভাবিক প্রাণবন্ত জীবনে ফেরার চেষ্টা। সেই চেষ্টাকেই স্বাগত জানাচ্ছে অ্যাপল থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্যান্য আধুনিক মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলো। সে জন্যই খুব সহজে এই গ্রে-স্কেল মোডে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে তাদের নতুন মোবাইল সেটে।

যদি আপনি আইফোন ব্যবহারকারী হন, তা হলে এই মোড অ্যাক্টিভেট করতে আপনাকে যেতে হবে সেটিংসের অ্যাক্সেসিবিলিটিতে, সেখান থেকে ডিসপ্লে অ্যান্ড টেক্সট সাইজে গেলে পেয়ে যাবেন কালার ফিল্টার অপশন। সেখানে গেলেই প্রথম অপশনেই পেয়ে যাবেন গ্রে-স্কেল। স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা কুইক সেটিং মেনুতে গিয়ে বাঁ দিকের নীচে পেনের চিহ্নে ক্লিক করে গ্রে-স্কেল আইকনকে নিয়ে চলে আসতে পারেন আপনার ফোনের মূল আইকনের তালিকায়। তার পর সুবিধা মতো তাকে চালু করে নিলেই হলো। ডিজিট্যাল ওয়েলবিয়িং এর টগল সুইচেও এখন গ্রে-স্কেলের অপশন পেয়ে যাবেননতুন ভার্সনের অ্যান্ড্রয়েডগুলিতে। আপনার দরকার মত এই গ্রে-স্কেল অন রাখার নির্দিষ্ট সময়সীমাও সেট করে রাখতে পারেন ফোনে। তবে আপনার ফোন যদি অ্যান্ড্রয়েড 9.0 এর আগের ভার্সন হয়, তাহলে এই গ্রে-স্কেল পেতে একটু বেগ পেতে হবে আপনাকে। যেতে হবে ডেভলপার মোডে। স্যামসাং এর ফোনগুলিও ডিজিটাল ওয়েলবিয়িংয়ের অপশন থেকে গ্রে-স্কেল মোডে যাওয়ার সুযোগ করে রেখেছে সহজেই। এসব ছাড়াও আছে কালার এবং ডিসপ্লে কন্ট্রোলের অপশন। সেখান থেকেও নিজের প্রিয় ফোনকে একটু কম আকর্ষক করে বেঁচে যেতে পারেন ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের সমস্যা থেকে। কথায় বলে দূরত্ব বাড়লে নাকি প্রেম আর গভীর হয়। তাই আপনার দিল কা টুকরা হ্যান্ডসেটের থেকে একটু দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেই দেখুন না! এতে দুপক্ষেরই ভালো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related posts

ইন্টারনেট কী, এর কাজ এবং কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা

News Desk

এশিয়ায় হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম

News Desk

বন্ধ হচ্ছে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার

News Desk

Leave a Comment