যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম, যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সাথে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তাদের শেখা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত-এর জ্ঞান যাচাই করা এবং সৃজনশীলতাকে আরো শানিত করার সুযোগ পায়।

বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের তাদের স্টেম বিষয়গুলোতে শেখা জ্ঞানকে উদ্ভাবনমূলকভাবে প্রয়োগ করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের কৌতুহল থেকে শুরু করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে তার উপায় খুঁজে বের করে, হর্ষিনী মুকুন্দন বলেন। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মধ্য ও উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান মেলায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন।

“প্রতিটি শিশু তার আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় বেছে নেয় ও তাদের ইচ্ছানুযায়ী বেছে নেওয়া বিষয়ের গভীরে অনুসন্ধান করে,” উল্লেখ করে মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির রসায়ন বিভাগের ডেপুটি গ্রুপ লিডার মুকুন্দন বলেন, “বিজ্ঞান নিয়ে কৌতুহল অল্প বয়সেই শুরু হয়, এবং আমি মনে করি এর পরিচর্যা নেওয়া ও উত্‌সাহ দেয়া দরকার।”

শিক্ষার্থীরা যখন শ্রেণিকক্ষে জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন করে এবং ত্রিকোণমিতি ও ক্যালকুলাসের মতো ধারণাগুলো নিয়ে ভাবে তখন তাদের পক্ষে বিষয়গুলোর জ্ঞান ব্যবহার করে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিগুলোকে বোঝা ও কল্পনা করা কঠিন হতে পারে।

এটা খুবই সুন্দর ধারণা এবং আমি সত্যিই বিজ্ঞান মেলা উপভোগ করি, এবং যেখানে আপনি পরবর্তী বড় কোন সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন। আপনি হয়তো সত্যি সত্যি কোন কিছুর সমাধান করছেন না কিন্তু আপনি বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন, এবং ভেবে আপনি কীভাবে ওই সমস্যার সমাধান করবেন সেটা খুঁজে বের করছেন। এবং এটাই আমাকে খুব উত্‌সাহিত করতো এবং বাস্তবে আমি ওই ধরনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম যখন আমি মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে ভারতের ন্যাশনাল ইমিউনোলজি ইন্সটিটিউটে ইন্টার্ণশিপ করতে গেলাম। হঠাত্‌ যেন বিজ্ঞান মেলার সমস্যাগুলো বাস্তব জীবনের সমস্যা হিসেবে ধরা দিলো। এবং তখন সেই সময়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পিএইচডি করব ও আমার কর্মজীবন গড়ে তুলব। এবং তারপর আমি লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবে পোস্টডক্টোরাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই। এবং তারা আমাকে সায়েন্টিস্ট পদে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানায়। আমি এতে সম্মতি জানাই কারণ এটি আমাকে সৃজনশীল হতে এবং বিজ্ঞান নিয়ে আমার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ উভয় ইচ্ছা পূরণের সুযোগ করে দিয়েছিল।

বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের তাদের স্টেম সংক্রান্ত জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়। এছাড়াও বিজ্ঞান মেলা কোন একটি সমাধান খুঁজে পেতে বিভিন্ন বিষয়ের সমাবেশ ঘটায়। অংশগ্রহণকারীদের ভাষা দক্ষতা বাড়ায়, কারণ, তাদেরকে নিজেদের প্রকল্প যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হয় এবং প্রকল্পের ফলাফল বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়, মুকুন্দন বলেন।

তিনি আরো বলেন, “আমরা ছোট বুদবুদে বাস করি, কিন্তু বাস্তব জীবনে ছোট ছোট বুদবুদগুলো একত্রিত হয়।”

মুকুন্দন উদীয়মান বা নতুন ধরনসহ সংক্রামক রোগ নির্ণয়ের উপায় খুঁজে পেতে গবেষণা করেন। তার এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার একটা পটভূমি আছে। তার শৈশবে মাম্পস হয়েছিল এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের হাম কিংবা চিকেনপক্স হয়েছিল, সেখান থেকেই সংক্রামক রোগ নিয়ে তার আগ্রহ।

তার বেড়ে উঠা ভারতে এবং সেখানে তিনি বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিতেন, এবং এই ধরনের মেলাকে তিনি কোন একটি নির্দিষ্ট ধরনের সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে দেখতেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের নিজেদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে কোন একটি বিষয় নিয়ে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে চিন্তা করতে শেখায়।

মুকুন্দন সব শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে উত্‌সাহিত করেন, এমনকি যারা চারুকলা ও কলা বিভাগে লেখাপড়া করে। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান একটি শিল্প, এতে অনেক ধরনের সৃজনশীলতার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতে অনেক কল্পনা, উদ্ভাবন, দক্ষতা এবং নতুন ধারণাও জড়িত।

Related posts

ডিজিটাল যুগে বাংলাভাষা পিছিয়ে নেই : মোস্তাফা জব্বার

News Desk

প্রযুক্তিগত ত্রুটি দূর করে ইভিএম পদ্ধতিতে জনগণকে অভ্যস্থ করতে হবে: ওয়ার্কার্স পার্টি

News Desk

এক ধাক্কায় ৩০০ কোটি কমল অ্যাপলের সিইওর বেতন!

News Desk

Leave a Comment