Image default
খেলা

চার বলে চার উইকেট নেওয়া রশিদ খান, বিশ্বের এক নাম্বার লেগি হয়ে ওঠার গল্প

ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন শিল্প মনে করা হয় লেগ স্পিনকে। কবজির মায়াজালে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা ক্রিকেটের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। কাজটা কঠিন বলে এমন শিল্পের কদরও বেশি। কদর বেশি থাকলেও শিল্পী কিন্তু সেভাবে পাওয়া যায় না। ইতিহাসে অল্প কয়েকজন লেগ স্পিনারই আছে যারা স্মরনীয় হয়ে আছেন।

আবদুল কাদির, শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলের মতো কিংবদন্তির কাতারে যেতে পারেন এমন লেগ স্পিনার বর্তমান বিশ্বে একজনই। তিনি আফগানিস্তানের রশিদ খান। তার বোলিং সৌন্দর্য, ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করা, নিখুত লাইন লেংথ বজায় রেখে বোলিং এ মুগ্ধ হননি এমন ক্রিকেটপ্রেমি বিরল। কিন্তু তার বড় হয়ে ওঠাটা সহজ ছিলো না। আর সব আফগানীর মতো সংগ্রামে ভরা তার জীবন। আজ আমরা রশিদ খানের সংগ্রামী জীবনের গল্পই শুনবো।

আফগানিস্তানে জীবন কখনই সহজ ছিলো না। বছরের পর বছর সেখানে যুদ্ধ- বিগ্রহ ও জাতিগত সহিংসতা লেগেই আছে। রুক্ষ প্রকৃতি এবং যুদ্ধ তাদের জীবন করেছে সংগ্রামী কিন্তু মানসিকভাবে করেছে দারুন শক্ত। বাসস্থান না থাকুক, ঘরে খাবার না থাকুক, তবুও তারা হারে মানে না। রশিদ খানের গল্পটাও ব্যতিক্রম নয়। আর দশজন আফগান ক্রিকেটারের মতো উথাল পাথাল কেটেছে তার শৈশবকাল।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ১৫০ কি.মি পূর্বের একটি প্রদেশ নানগারহার। ১৯৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রদেশটির রাজধানী জালালাবাদে তার জন্ম। পুরো নাম রশিদ খান আরমান। ১০ ভাই-বোনের সংসারে রশিদ ৬ষ্ঠ। নিজের বাড়িতে বেশিদিন থাকার সৌভাগ্য হয়নি তার। তার যখন তিন বছর বয়স তখন আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে। ২০০১ সালে সে যুদ্ধ শুরু হলে তার পুরো পরিবারকে পাড়ি জমাতে হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে কাটে তার শৈশবকাল। সেখানে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তার পরিবার ফিরে আসে মাতৃভূমিতে। রিফিউজি ক্যাম্পেই একবার টিভিতে খেলা দেখছিলেন। হঠাৎ করেই চোখে পড়ে গেল শহিদ আফ্রিদির চুলের স্টাইল, তার করা লেগ স্পিন বল, উইকেট নেওয়ার পর উদযাপন। ছোট্ট রশিদের মনে গেঁথে গেল আফ্রিদির করা সেই লেগ স্পিন। স্বপ্ন দেখলেন বড় হয়ে লেগ স্পিনার হওয়ার, যার শুরুটা হয়েছিল টেনিস বল দিয়ে। রশিদ খানের ভাষায়,

“আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি বাড়িতেই। আমার সাত ভাই, এবং তারা সবাই ক্রিকেট খেলতো, ক্রিকেট ভালোবাসতো। ভাইয়েরা মিলেই বাড়ির বাগানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম। আমি প্রথম বল করা শুরু করি টেপ দিয়ে প্যাঁচানো টেনিস বল দিয়ে। তখনই আমার বল করা দেখে আমরা ভাইয়েরা, পরিবারের অন্যরা বললো – তুমি পারবে।”

মুলত পরিবারের এই উৎসাহ তাকে ক্রিকেটে আরও মনোযোগী করেছে। পাড়ার বন্ধু এবং বড় ভাইদের সাথে নিয়ে চলতো ক্রিকেট খেলা। আফ্রিদির মতো করে লেগ স্পিন বল করার অনুশীলন করতেন। সেটা রপ্তও করে ফেলেন পুরোদমে। পাশাপাশি করতেন ব্যাটিংও। অলরাউন্ডার হিসেবেই গড়ে ওঠাই তার লক্ষ্য ছিলো। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন। তবে ধীরে ধীরে পূর্ণ মনোযোগ বোলিংয়েই দেওয়া শুরু করলেন।

আফগানিস্তানের ক্রিকেট কাঠামো ছিল তখন খুবই দুর্বল। ছিল না ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ, ক্রিকেট একাডেমি কিংবা সুযোগ সুবিধা। কিন্তু রশিদের প্রতিভা এমন ছিলো যে, আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডই খুঁজে নিল তাকে। তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হলো আফগানিস্থান জাতীয় দলে। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। তবে সবার নজরে আসেন ২০১৬ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। মাত্র ৩ রান দিয়েই তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। তবে সেটা ছিলো রশিদের জয়যাত্রার কেবল শুরু।

২০১৬ তে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার পারফর্মেন্স ক্রিকেট বিশ্বে নজর কেড়ে নিলো। জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে করলেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং; ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৭ উইকেট । তবে রশিদের তারকাখ্যাতির দিকে যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের আইপিএলের নিলাম থেকে। ৫০ লাখ টাকা ভিত্তি মূল্য থেকে রশিদের দাম ওঠে ৪ কোটি রুপিতে। তাকে কিনে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। সহযোগী দেশের এক খেলোয়াড়ের মূল্য এতো বেশি দেখে সবারই চোখ কপালে উঠে যায়।

তবে সানরাইজার্স যে জহরত চিনতে ভুল করেনি সেটি প্রমাণ করলেন রশিদ খানই। টুর্নামেন্ট শেষে তার ঝুলিতে ছিল ১৪ ম্যাচে ১৭টি উইকেট। এ মৌসুমে তাকে হাতছাড়া করতে চায়নি হায়দ্রাবাদ। ফলে পরের মৌসুমে আইপিলের নিলামে ৯ কোটি রুপি দিয়ে আবারো রশিদ খানকে দলে রেখে দেয় তারা। আর রশিদ খানও একের পর এক ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে বেধে রেখে নিজের সামর্থের প্রমাণ দেন। তার এই সাফল্য জাতীয় দলের হয়েও অনূদিত হয়। ফলে একসময় র‍্যাংকিয়ের শীর্ষস্থানেও উঠে আসেন রশীদ খান। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের নেতৃত্বও তার কাধে সমর্পিত হয়।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রশিদ খান ব্যাটসম্যানদের কাছে এক আতংকের নাম। তার গুগলি রহস্য পড়তে পারেন এমন ব্যাটসম্যান কমই আছেন। নিঃসন্দেহে আরও অনেকদিন রশিদ খান বল হাতে ক্রিকেট শাসন করবেন। তবে তার সংগ্রামী জীবন অনুপ্রেরণা হতে থাকবে হাজারও নিরেপক্ষ দর্শকের কাছে। প্রতিদিন এমন মজার মজার গল্প জানতে সাবস্ক্রাইব করুন বাংলা ডায়েরি।

Related posts

চট্টগ্রামে পিক আপ, চট্টগ্রামে প্রস্থান

News Desk

গেম 7-এ নিক্সের দেরী সমাবেশটি ব্যয়বহুল টার্নওভার দ্বারা বিঘ্নিত হয়েছিল

News Desk

কাতারে অনুশীলনের প্রথম দিনই ঝড় সামলানোর পাঠ

News Desk

Leave a Comment