ইংল্যান্ডকে বলা হতো সেমিফাইনালের দল। প্রতিটি বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে বিদায় হয়ে যাওয়াই যেনও ছিলো তাদের নিয়তি। কত মহারথী এলো গেলো, কত কিংবদন্তি ক্রিকেটার খেলে গেলো ইংল্যান্ড দলে। কিন্তু কোনওভাবেই বিশ্বকাপটা ঠিক জন্মভূমিতে ফিরছিলো না। বারবার নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করেও তারা ছিলো ব্রাত্য। কোনও ইংলিশ অধিনায়কের সুযোগ হয়নি ঐতিহাসিক লর্ডসের ব্যালকনিতে কাপ হাতে ছবি তোলার। সে অপূর্ণতা ঘোচে ২০১০ সালে এসে। লর্ডসে না হলেও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এসে প্রথম কোনও ব্রিটিশ অধিনায়ক হাত দিলেন বিশ্বকাপ ট্রফিতে। ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। আজকে আমরা ২০১০ সালের ফাইনালের গল্পই শুনবো।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ১ বছর পরই ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আবারো ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্ব আসর বসে। ইংল্যান্ড প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। তাই পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য গ্রুপের শেষ ম্যাচ জিততেই হতো ইংল্যান্ডকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে মাত্র ১২০ রান করতে পারে ইংল্যান্ড। ব্রিটিশদের বিদায় যখন কেবল সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিলো তখন বৃষ্টি এসে বাচিয়ে দেয় তাদের। খেলা পন্ড হয়ে গেলে এক পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থাকায় সুপার এইটে কোয়ালিফাই করে ইংল্যান্ড। এই পর্বে ফর্মে ফিরে তারা এবং পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে চলে যায়। সেমিতে তারা আগের বিশ্বকাপের রানারআপ শ্রীলংকা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৪ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। ওদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বাধিকবার কাপ জয়ের রেকর্ড থাকলেও টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ যেনও প্রহেলিকা হয়ে ছিলো অস্ট্রেলিয়ার কাছে। কাপ জয় তো দূরে থাক প্রথম দুই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও খেলতে পারেনি তারা। এই এই বিশ্বকাপে তারা আটঘাট বেধে নামে। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দিয়ে সুপার এইটে কোয়ালিফাই করে অজিরা। সুপার এইটে আরও নির্মম হয়ে ওঠে তারা। ভারত, শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমতো ছেলে খেলা করে পরিণত হয় টুর্ণামেন্টের হট ফেভারিটে। সেমিফাইনালে পাকিস্তান বেশ লড়াই করলেও হেরে যায় ৬ রানে। ফলে ফাইনালে মুখোমুখি হয় দেড়শ বছর পুরানো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।
বার্বাডোজের ফাইনালে ইংল্যান্ড অধিনায়ক পল কলিংউড টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান। ইংল্যান্ড বোলাররা অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমান করতে বেশি সময় নিলেন না। তৃতীয় বলেই ফিরে যান অজি ওপেনার ওয়াটসন। এরপর ওয়ার্নার এবং ব্রাড হাড্ডিনও বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় তিন উইকেটে আট রান। এরপর ক্লার্ক ও মাইক হাসির ব্যাটে ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা করে অজিরা। দলীয় ৪৫ রানে ক্লার্ক এবং ৯৫ রানে ক্যামেরন হোয়াইটকে হারালে তাদের বড় ইনিংসের আশা ভেস্তে যায়। ডেভিড হাসির ৫৪ বলে ৫৯ রানের দৃঢ়তায় ও মাইক হাসির ১০ বলে ১৭ রানের দুটি ঝোড়ো ইনিংসে ভর করে ১৪৭ রানের পুজি পায় অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামলে দ্বিতীয় ওভারে মাইকেল লাম্বকে তুলে নিয়ে অন্যকিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া তবে ইংল্যান্ড ওপেনার কিসওয়েটার এবং অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পিটারসেনে ভর করে ৮ উইকেটের সহজ জয় পায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৬৮ বলে ১১১ রান। কিসওয়েটারের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংস, পিটারসেন সংগ্রহ হরেন ৩১ বলে ৪৭ রান। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্যে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন কিসওয়েটার। ২৪৮ রান নিয়ে টুর্নামেন্টে সেরা হন কেভিন পিটারসেন।
একটা বৈশ্বিক ট্রফি নিয়ে ইংল্যান্ডের আক্ষেপ ছিলো চিরদিনের। ২০১০ এর টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে সে আক্ষেপ দূর হয়। ট্রফি হাতে পল কলিংউডের ছবি অমর হয়ে আছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। এরপরে ২০১২ সালের ফাইনালের গল্প জানতে সাবস্ক্রাইব করুন বাংলা ডায়েরি।