জৈব-সুরক্ষা বলয়ে হাজারটা বিধিনিষেধ মেনে, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলে আইপিএল অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। তবে দুধের প্রাপ্তি যেখানে অসম্ভব, ঘোলই তো সেখানে অমৃত! করোনাভাইরাসের প্রকোপে দুনিয়াজুড়ে থমকে আছে স্বাভাবিক অনেক কিছুই, ত্যাগ স্বীকার করে আইপিএল খেলতে পারাও এই সময়ে কম কাঙ্ক্ষিত নয়। ভারতের দুই মহাতারকা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি তাই খেলতে পেরেই খুশি।
আইপিএলের চতুর্দশ আসর শুরু হচ্ছে শুক্রবার। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আসর বলে বিবেচিত টুর্নামেন্টের গত কিস্তি ভারতে করা যায়নি কোভিডের কারণে, অনেকটা পিছিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করা হয় গত সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে। এবার টুর্নামেন্ট ফিরেছে ভারতে। তবে মহামারীকালের নানা বাস্তবতা সঙ্গী এবারও। ভারতে এখন দৈনিক শনাক্ত রোগী লাখ ছাড়াচ্ছে নিয়মিতই। আইপিএলের বিভিন্ন দলেও হানা দিয়েছে কোভিড। অনেক চ্যালেঞ্জে নিয়ে তবু শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট, অর্থের অফুরন্ত উৎস বলে কথা!
এবারের আসর থেকে ভারতীয় বোর্ড আয় করতে যাচ্ছে প্রায় ৪ হাজার কোটি রুপি। টিভি সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান স্টার ইন্ডিয়ার কাছ থেকেই আসবে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি রুপি। টাইটেল স্পন্সর ভিভো দিচ্ছে ৪৪০ কোটি রুপি। অন্য পাঁচটি অফিসিয়াল স্পন্সর থেকে মিলবে আরও ২২০ কোটি। আম্পায়ার ও স্ট্র্যাটেজিক টাইম-আউট স্পন্সরশিপ থেকে প্রাপ্তি ৬০ কোটি রুপি। আছে আরও কিছু টুকটাক আয়। প্রথম ম্যাচে শুক্রবার রাতে মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও আসরের সফলতম দল রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও তারকায় ঠাসা দল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর।
প্রায় দুই মাসের টুর্নামেন্ট জৈব-সুরক্ষা বলয়ে খেলা কঠিন। বিশেষ করে, বেশির ভাগ ক্রিকেটারই যখন গত প্রায় এক বছরের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সুরক্ষা বলয়েই। মানসিকভাবে হাঁপিয়ে ওঠা স্বাভাবিক। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে রোহিত বললেন, পারিপার্শ্বিকতা মাথায় রাখলে এসব নিয়ে কোনো অভিযোগের সুযোগ দেখেন না তিনি। অসংখ্য মানুষ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, অনেকে কাজ করতে পারছে না, নিজেদের পছন্দের অনেক কিছু করতে পারছে না। আমরা অন্তত ভাগ্যবান যে পছন্দের কাজটি করতে পারছি।
দিনশেষে, আমি নিজে অন্তত ক্রিকেট খেলতে পেরে খুশি, কারণ এটিই আমার পছন্দের কাজ। মানিয়ে নিতে হলে, মানিয়েই নিতে হবে। চেষ্টা করে দেখতে হবে, এই সুরক্ষা বলয়ের জীবনের সেরাটা কীভাবে কাজে লাগানো যায়। ভ্রমণ ও ভেন্যুর সংখ্যা কমাতে এবার রাখা হয়নি ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ মাঠে খেলার ব্যাপার। সব দলকেই খেলতে হবে নিরপেক্ষ মাঠে। শুক্রবার মুম্বাই ও বেঙ্গালোরের ম্যাচটি হচ্ছে চেন্নাইয়ে। যথারীতি গ্যালারিতে দেখা যাবে না দর্শক।
তবে এসব পরিস্থিতিরও মন্দের ভালো দেখতে পাচ্ছেন বেঙ্গালোর অধিনায়ক কোহলি। চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে (বেঙ্গালোরের হোম ভেন্যু) ঘরের দর্শকের সামনে খেলার মতো অনুভূতি আর কিছুতে নেই। আমি এটা অবশ্যই মানি ও একমত। দর্শকরা অবশ্যই আমাদের খেলা দেখা মিস করবেন। কিন্তু সময়টাই এমন। ভালো ব্যাপারটি হলো যে, আমরা ভারতে ফিরতে পেরেছি। আরেকটি ইতিবাচক দিক, কোনো দল ঘরের মাঠে খেলবে না বলে বাড়তি সুবিধা বলে কিছু নেই। নিরপেক্ষ মাঠে খেলা বলে দলের শক্তির গভীরতা ফুটে উঠবে সবার। গত আসর (সংযুক্ত আরব আমিরাতে) এ কারণেই দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছিল। টিভি দর্শকের সংখ্যাও নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছিল। এবারও সেরকম হবে বলে আশা করছি।