মিচেল স্টার্কের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর স্পিনার এডাম জাম্পার ঘূর্ণিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো অস্ট্রেলিয়া। তাসমান পাড়ের দুই দলের লড়াইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে ১১৩ রানে জিতে তাসমানিয়ান সাম্রাজ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখলো ক্যাঙ্গারুরা।
কেয়ার্নসে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১১৩ রানের বিশাল ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। এর আগে প্রথম ওয়ানডে ২ উইকেটে জিতেছিলো অজিরা। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো অ্যারন ফিঞ্চের দল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিইরিজ জয়ের অপেক্ষাটা আরও বাড়লো নিউজিল্যান্ডের। ১৯৮৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের বিপক্ষে কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি পারেনি কিউইরা।
সিরিজে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে আজকের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। স্কোর বোর্ডে কোন রান যোগ করার আগেই অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে খালি হাতে ফেরান কিউই পেসার ম্যাট হেনরি।
নিজের দ্বিতীয় ওভারেও আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকেও মাত্র ৫ রানেই ফেরান হেনরি। হেনরির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেক পেসার ট্রেন্ট বোল্টের তোপের মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৪ রানের ব্যবধানে মার্নাস লাবুশানে ও মার্কাস স্টোয়নিসকে সাজঘরে ফেরান বোল্ট। নবম ওভারেই ২৬ রানে ৪ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
এরপর উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি আর অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন নাম্বারে নামা স্টিভেন স্মিথ। পঞ্চম উইকেটে ক্যারির সাথে ৬০ বলে ২৮ রান তুলেন স্মিথ। আর ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাক্সওয়েলের সাথে ৮৬ বলে ৪৯ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর একশো পার করেন স্মিথ। ১০৩ রানে গিয়ে ৫০ বলে ২৫ রান করে বোল্টের শিকার হন ম্যাক্সওয়েল।
এরপর শন অ্যাবটও ফিরে যান ৭ রান করেই। তখনও অন্য প্রান্ত আগলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম অর্ধশতক তুলে নেন স্মিথ। তবে এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। দলকে ১১৭ রানে রেখে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে টিম সাউদির বলে বোল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্মিথ। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৫ চার আর ১ ছক্কায় ৯৪ বলে ৬১ রানের ইনিংস।
এরপর অ্যাডাম জাম্পাকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। নবম উইকেটে তাদের ৩১ রানের জুটি ভাঙে জাম্পা ১৬ রান করে বোল্টের বলে উইকেট হারালে। এরপর অজিদের দ্রুত গুটিয়ে যাওয়া ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে শেষ উইকেটে ৩৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৭ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে সম্মানজনক স্কোর এনে দেন মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড।
৫০ ওভারে ৯ উইকেট ১৯৫ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া। ৪৫ বলে অপরাজিত ৩৮ রান করেন স্টার্ক। ১৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন হ্যাজেলউড। কিউইদের হয়ে বোল্ট ৩৮ রানে ৪টি এবং হেনরি ৩৩ রানে ৩টি উইকেট নেন।
১৯৬ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই অজি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৩৮ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান যান টপ-অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে ২ উইকেট ছিলো স্পিনার জাম্পার। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতার পর, পরের দিকের ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা করতে পারেননি আর। জাম্পার ঘূর্ণি সামলাতেই হিমশিম খেয়েছে কিউইরা। ৩৩ ওভারের মধ্যে ৮২ রানেই অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটিই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান নিউজিল্যান্ডের।
টপ-অর্ডারের দুটির পর লোয়ার-অর্ডারে নিউজিল্যান্ডের তিন উইকেট নেন জাম্পা। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৯ ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন এই অজি স্পিনার। ৭২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন জাম্পা। অজি পেসার স্টার্ক আর অ্যাবট নেন ২টি করে উইকেট।
২ উইকেটের সাথে ব্যাট হাতে লোয়ার-অর্ডারে দলের বিপর্যয়ের সময় ৪৫ বলে অপরাজিত ৩৮ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন অজি পেসার স্টার্ক।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে মাত্র চার ব্যাটসম্যান দুই অংকের কোটা ছুঁয়েছেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭ রান করেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন মিচেল স্যান্টনার। এছাড়া মাইকেল ব্রেসওয়েল ১২ ও ড্যারিল মিচেল করেন ১০ রান।
তাসমানিয়ান দুই প্রতিবেশীর সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ হওয়ায় এই জয়ে নিউজিল্যান্ডের সমান পয়েন্ট হলো অস্ট্রেলিয়ার। ১৭ ম্যাচে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে উঠে এলো ক্যাঙ্গারুরা। আর ১৪ ম্যাচে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানেই থাকলো নিউজিল্যান্ড। ১৮ ম্যাচে ১২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
আগামী ১১ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড।