সুদানের কয়েকটি জাতি ইয়াম শব্দের অর্থ নদীই করে থাকে। লোহিত সাগরের জন্য ইয়াম শব্দের ব্যবহার আরবে কখনওই ছিল না। মুসা (আ.) বনি ইসরাইলকে নিয়ে অবশ্যই ইসরাইলের দিকে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফেরাউনের রাজ্যের সীমানা থেকে বের হওয়ার চিন্তা ছিল সবার আগে। সে হিসেবে তিনি মিসরের উত্তর পশ্চিম সীমান্তের দিকে অগ্রসর না হয়ে অপেক্ষাকৃত কাছে দক্ষিণে সুদানের দিকে নীলনদের ওপারে যাওয়াই ছিল সহজতর। এরপর ধীরে ধীরে তীর ধরে তিনি সিনাই পর্বতের দিকে যাওয়া অসম্ভব নয়।

এখানে এসে সুরা বাকারার একটি আয়াত দেখুন, যখন তোমাদের জন্য নদীকে (অন্য তর্জমা সাগর) বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফেরআউনি সম্প্রদায়কে ডুবিয়েছিলাম আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে। (সুরা বাকারা আয়াত: ৫০)

এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার বিষয়টি বনি ইসরাইল দেখছিল। এখন বুঝুন লোহিত সাগরের প্রস্থ তিনশ কিলোমিটার। ওপারে যাওয়ার পর বনি ইসরাইল কমপক্ষে দেড়শ কিলোমিটার দূর থেকে কি ফেরাউনকে দেখেছে?

নীল নদের বর্তমান প্রস্থ প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রাচীন মিসরে আরও দীর্ঘ হওয়া অসম্ভব নয়। আমাদের পদ্মা নদীর মত প্রমত্ত অবস্থায় যদি ফেরাউন নীল নদে ডোবে তাহলে কোরআনের বিবরণের সঙ্গে মোটেও অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয় না। তিন চার কিলোমিটার পথ খালি চোখে দেখা সম্ভব। কিন্তু কয়েকশ কিলোমিটার পথ খালি চোখে দেখা যায় না। তা ছাড়া দক্ষিণ মিসরে বনি ইসরাইলের বসবাসের কথাও প্রত্নতাত্তিক গবেষক ও ঐতিহাসিকরা বলছেন।

সুদানে বনি ইসরাইলের কিছু বংশ বিস্তার হয়েছিল। মিসর থেকে যাত্রার শুরুতেই তারা মরুভূমির পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে হয় না। তাওরাতেও হিজরত ১৪ নং অধ্যায়ে লেখা আছে কয়েক মাস পর তারা সিনাই পর্বতে গিয়ে পৌঁছে।

আরও একটি বিষয় হচ্ছে ফেরাউনের ভয়ে হিজরত করা বনি ইসরাইল লোহিত সাগর অভিমুখে যাত্রা করলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। কয়েকশ মাইল পাড়ি দিয়ে লোহিত সাগর তারপর আবার লোহিত সাগরের দীর্ঘ পথ রাতারাতি পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়া মোটেও স্বাভাবিক মনে হয় না।

অলৌকিকভাবে তারা রাতারাতি এত দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত কোরআনে নেই।

সর্বশেষ সুরা ইউনুসের বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করব।

ইরশাদ হয়েছে, আজ আমি তোমার (ফেরাউনের) দেহটি রক্ষা করব যাতে তুমি তোমার পরে যারা থাকছে তাদের জন্য নিদর্শন হও। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকেই আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফেল। (ইউনুস, আয়াত: ৯২)

ইমাম তাবারি তার তাফসীর গ্রন্থে ইবন আব্বাস থেকে এর ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন, বনি ইসরাইল জলরাশি পাড়ি দেয়ার পর সন্দেহ করছিল যে ফেরাউন মরেছে কি না, তারা তার লাশ দেখতে চাচ্ছিল।

আল্লাহতায়ালা ফেরাউনের লাশ তীরে ছুড়ে ফেলেন। বনি ইসরাইল তা দেখে নিশ্চিত হয়।

এখন অনেকে এর অর্থ করছেন, কেয়ামতের আগ পর্যন্ত তার লাশ সংরক্ষিত থাকার কথা আল্লাহ বলেছেন। অথচ নিশ্চিত করে এমন দাবি করা যায় না। কোরআনের আয়াতের অর্থ ইবন আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসিররা যা করেছেন তাতে বরং অন্য কিছুই বোঝা যায়।

এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে এই যে, আমাদের অবশ্যই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা.-এর ওপর ইমান রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হোক বা না হোক কোরআন সর্বাবস্থায় সত্য।

বিজ্ঞান মিথ্যা হতে পারে কোরআন কখনও মিথ্যা হতে পারে না। কোরআনের কোনো বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো সমর্থন পেয়ে উল্লসিত হওয়া ঠিক নয়। ভালো করে যাচাই করে নেয়া উচিত।

ফেরাউন লোহিত সাগর না ভূমধ্য সাগর না নীলনদ না অন্য কোনো নদীতে ডুবেছে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। এর কোনোটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা পাগলামো ছাড়া কিছু নয়।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বিষয়ের দৃঢ় বিশ্বাস নসিব করুন। আমীন।

সূত্র: বিদেশ বাংলা, যুগান্তর

Related posts

কবরে যে ৩টি প্রশ্ন করা হবে ও তার জবাব

News Desk

কেন ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম

News Desk

একটি আদর্শ ও সুখী পরিবার গঠনে করণীয়

News Desk

Leave a Comment