বছর ঘুরে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারো এসেছে পবিত্র মাহে রমজান । মহামারি করোনায় বিশ্ব এক আতঙ্কের মাঝে দিনাতিপাত করছে। প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা কেউ বলতে পারি না পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখা আমাদের পক্ষে তাওফিক হবে কি না।

তাই শাবানের অবশিষ্ট কয়েকটি দিন আল্লাহ পাকের দরবারে আমাদের অনেক বেশি দোয়া করা উচিত। আল্লাহতায়ালা যেন তার অপার দয়া দ্বারা এই মহামারি থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করেন আর আমরা যেন রমজানের দিনগুলো সুস্থতার সঙ্গে রোজা রেখে অতিবাহিত করতে পারি।

মুমিন মুত্তাকিরা মূলত বরকতপূর্ণ শাবান মাস থেকেই পবিত্র মাহে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তারা শাবান মাসেই একটি রুটিন তৈরী করে নেয় যে, পূর্বের রমজান থেকে আগত রমজানে কি কি নেক আমল বেশী করবেন।

এই মাসের ফজিলত অনেক, আর এই ফজিলত পবিত্র কোরান শরীফ, হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলা ডায়েরির পাঠকদের জন্য এই ফজিলতের কিছু বাণী তুলে ধরা হলো।
‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার’: আল কুরআন। ‘রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশী ঘ্রানযুক্ত’: আল হাদিস

‘ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন’: আল হাদিস। ‘রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়’: আল হাদিস। ‘রমজানের শেষ রাতে সকল উম্মতকে মাফ করা হয়’: আল হাদিস। ‘রমজান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল’: আল হাদিস।

‘রমজান জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায় এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ’: আল হাদিস। ‘রমজান গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম’: আল হাদিস। ‘রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে’: আল হাদিস

‘রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন’: আল হাদিস। ‘রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়’: আল হাদিস। ‘রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে’: আল হাদিস।

‘রমজান সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করে’: আল হাদিস। ‘রমজান আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত গোপন ইবাদত তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়’: আল হাদিস। ‘রমজান আল্লাহর ইবাদতের এক অভূতপূর্ব ট্রেনিং স্বরূপ’: আল হাদিস।

হাদিস পাঠে জানা যায়, শাবান মাস আসার পূর্বেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান’ (মসনদে আহমদ)।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে বিশ্বনবীর (সা.) স্থান প্রথম হওয়ার পরেও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে পূর্ব থেকেই রোজা রাখা শুরু করতেন।

রোজা রাখা মুমিন মুত্তাকিদের জন্য কোন কষ্টই না বরং রমজান আসছে বলে তাদের হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত। এছাড়া আল্লাহপাক তার বান্দার জন্য এমন কোন নির্দেশ দেননি যা পালনে সাধ্যাতীত।
অনেকে ভাবছেন, এবার বৈরী আবহাওয়া, হয়তো রোজা রাখতে কষ্ট হবে অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরচেয়েও অনেক বেশী বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে তারপরও সেখানে রোজা রাখেন।

এমন কোন দেশ পাওয়া যাবে না, যারা বৈরী আবহাওয়ার জন্য রোজা পরিত্যাগ করে। যারা রোজা রাখাকে কষ্ট মনে করছেন, তাদের বলব, আপনারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার নিয়ত করুন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, দেখবেন কিভাবে অতি সহজেই একটি মাস কেটেগেছে ভাবতেই পারবেন না।

আমরা কি মহানবী (সা.)-এর জামানার কষ্টকে ভুলে গেছি? তারা ধর্মের জন্য কতই না কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে, পড়নের কাপড় নেই, নেই খাবার, তারপরেও তারা নামাজ, রোজা পরিত্যাগ করেননি।

রমজানের রোজা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন- ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের জন্য, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«إِنَّ لِلَّهِ عُتَقَاءَ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَة»
‘‘(রমজান ) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক বান্দার দো‘আ কবুল হয়ে থাকে (যা সে রমজান মাসে করে থাকে)।’’ (সহীহ সনদে ইমাম আহমদ কতৃক বর্ণিত, হাদীস নং ৭৪৫০)
ত্বাকওয়া অর্জনের এ মুবারক মাসে মুমিনদের উপর অর্পিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সৃষ্টি হয়েছে পূণ্য অর্জনের বিশাল সুযোগ এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্র অর্জনের সুন্দর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এ অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আজ সারা বিশ্বের মুসলিমদের উচিত চারিত্রিক অধ:পতন থেকে নিজেদের রক্ষা করা, নেতিয়ে পড়া চেতনাকে জাগ্রত করা এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করা, যাতে তারা রিসালাতের পবিত্র দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে এবং কুরআন নাযিলের এ মাসে কুরআনের মর্ম অনুধাবন করতে পারে, তা থেকে হিদায়াত লাভ করতে পারে এবং জীবেনের সর্বক্ষেত্রে একেই অনুসরণের একমাত্র মত ও পথ রূপে গ্রহণ করতে পারে।

তাই মন থেকে সব ধরণের দূর্বলতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহপাকের নির্দেশের ওপর আমল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।এই নিয়ত করতে হবে যে, গত রমজানে যদি একবার পবিত্র কোরআন খতম দিয়ে থাকি তাহলে এবার ইচ্ছা রাখব দুইবার খতম দেয়ার। গত রমজানে যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাজামাত না পড়তে পারি এবার ইচ্ছা থাকবে নামাজগুলো বাজামাত আদায় করার। অর্থাৎ সব কিছুতেই মুমিন চাইবে পূর্বের তুলনায় বেশী ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকতে।

তাই এক জন মুমিন রমজান আসার পূর্বেই নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। বাহ্যিকভাবে আমরা যেমন স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য অনেক পূর্বে থেকেই নিজেকে গড়ে তুলি আর সব সময় মাথায় পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের চিন্তা ঘুরপাক করে ঠিক তেমনি যারা মুমিন তারা রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য পূর্ব থেকেই তৈরী হয়ে যায়।

তাই আসুন, রমজান আসতে মাত্র কয়েকটি দিন বাকী রয়েছে, এখনই আমরা রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নেই আর আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদেরকে সুস্থ রাখেন।

হে দয়াময় প্রভূ! তুমি আমাদেরকে রমজানের দিনগুলোতে তোমার ইবাদত এবং নিষ্ঠার সাথে রোজা রাখার তৌফিক দান কর, আমিন।

Related posts

রোজা ভঙ্গের কারণ ও রোজার মাকরুহ সমূহ

News Desk

নারীর একাকী ভ্রমণে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহর মদিনা

News Desk

শবে কদরের ফজিলত এবং উত্তম আমল

News Desk

Leave a Comment