Image default
ইসলাম

ইসলাম ও ঈমানের মধ্যে সম্পর্ক

ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ করা এবং বাধ্যতা, অস্বীকৃতি ও হটকারিতা ত্যাগ করা। এখানে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হচ্ছে, এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, একমাত্র আল্লাহই স্থায়ী বাকি যা কিছু আছে সবই ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর। জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, ঈমান ও ইসলাম এক অভিন্ন। এ অর্থে যে, দুটিরই লক্ষ্য বিশ্বাস গ্রহণ ও আনুগত্য করা। আর এ অর্থে যে, নাম এবং হুকুমের দিক থেকে সকল মুমিনই মুসলিম ও সকল মুসলিমই মুমিন। এ মতের ওপরই উম্মতের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত ও আল কোরআন ও আল হাদীসের সাক্ষ্য বর্তমান। (শরহুল মাকাসিদ-৩/৪৪২)।

সব কিছুই সাবেক হবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া-এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করতে হবে এবং বাধ্যতা হচ্ছে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যে পদ্ধতিতে জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই সীমানার মধ্যে থেকে জীবন যাপন করা।

আল্লাহর বন্ধু, শেষ নবী,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর জীবন যাপন পদ্ধতিতে যা রয়েছে তাই ইসলাম। আল্লাহ’র রাসূলের জীবন, আচার, আচরণ, চলাফেরা, খাদ্য, কথা, পোশাক, স্ত্রী-পরিজন, সমাজ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, হারাম, হালাল সব কিছুই এক আল্লাহতে সমর্পিত।

পবিত্র কোরআন ও ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশের বাধ্য বাধকতায় থাকার এক অপূর্ব নিদর্শন। রাসুলকে (সা.) মানা, তিনি যেভাবে সব ক্ষেত্রে এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করে এবং আল্লাহর নির্দেশিত সীমানা মেনে চলেছেন তাই ইসলাম। রাসুলের (সা.) সমগ্র জীবন এক ব্যবহারিক কোরআন।

মাওলানা রুমী (র.) বলেছেন “আল্লাহ তা’য়ালার বক্তব্য অবিকল রাসুলের (সা.) কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে”। মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “বহু রাসুল তোমার পূর্বেও প্রেরণ করিয়াছি, দিয়াছিলাম তা দিগকে স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি এবং কোনো রসুলের এমন সাধ্য ছিল না যে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো নিদর্শন উপস্থিত করে। প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে।
সুরা রা’আদ আয়াত ৩৮।

এ আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে রাসুল (সা.) নিজ থেকে কখনো কিছু বলেন নি। যা কিছু আল্লাহর রাসুল (সা.) করেছেন তার সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছার অধীন, এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

সুরা আল-হাক্কাহতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের দৃশ্যমান বস্তুর কসম করেছি এবং অদৃশ্যমান বস্তুর, নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রসূলের আনীত। এবং এটা কোনো কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। এবং এটা কোনো অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর। এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ। সুরা আল হাক্কাহ আয়াত (৩৮-৪৮)।

এই আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ কসম করে বলেছেন যে এই কোরআনে বর্ণিত সব কিছুই তাঁর বাণী যা তিনি তাঁর সম্মানিত রাসুল (সা.) মারফত প্রেরণ করেছেন। এটা কোনো কবি বা কাহিনীকারের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়।

পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো অবশ্যই মহান রব্বুল আ’লামিনের বাণী এবং আল্লাহর রাসুল (সা.) যদি এতে কোনো রকম পরিবর্তন করতেন তবে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সা.) কঠোরভাবে ধরতেন এবং কণ্ঠশিরা কেটে দিতেন যাতে মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। এবং আল্লাহ এও বলেছেন যে তোমরা সল্পসংখ্যক তা অনুধাবন করো যা একান্তই মোত্তাকিদের জন্য উপদেশ। তাহলে আল্লাহ যে বিষয়ে নিজে তাঁর রাসুলের (সা.) ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, রাসুল (সা.) যা বলেছেন তা আল্লাহর কথা, রাসুল (সা.) যা করেছেন বা করেননি সবই আল্লাহর নির্দেশ।

আল্লাহর রাসুল (সা.) এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলেছেন।

মহানবীর (সা.) পর তাঁর উম্মতদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তারা যারা চর্মচক্ষে মহানবী হযরত মোহাম্মাদকে (সা.) দেখেছিলেন এবং তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তারা সবাই ছিলেন মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শের প্রধানতম উদাহরণ।

তাঁদের জীবন ছিলো রাসুলের (সা.) মহব্বতে পরিপূর্ণ। পরবর্তীকালে সাহাবারা (রা.) আল্লাহর নির্দেশিত ও তাঁর রাসুলের (সা.) দেখানো পথে জীবন যাপন করেছেন। এটাই ইসলাম।

ইসলাম এমন একটি পথ যা দেখে আপনার সম্পর্কে অন্যদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। মুসলমানের আচার-আচরণ এমন হতে হবে যা দেখে অন্যরা ইসলামের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে। বোখারি শরিফের প্রথম খণ্ড হাদিস নম্বর ৯ এ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, মুসলমান ওই ব্যক্তি যার কোনো কথা বা কাজের দ্বারা অন্য মুসলমানের কষ্ট না হয়। মুহাজের ওই ব্যক্তি যে আল্লাহর ঘোষণা করা নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করেছে।

ইসলাম একটি ধর্ম। পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের ওপর ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপিত। তার মধ্যে সর্বপ্রধান হচ্ছে ঈমান। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ও তাঁর রাসুলের (সা.) হাদিসের মাধ্যমে যা কিছু মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়াকে ঈমান বলে। আরবীতে ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস।

ঈমান আসলে একটা ব্যাপক বিষয়। সন্দেহজনক কার্যাবলী ত্যাগ করা হচ্ছে ঈমান। আল্লাহর সিফাতের সঙ্গে শরীক না করা, আল্লাহর রাসুলের বিরুদ্ধতা না করা, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা হচ্ছে ঈমান, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নাম ইমান, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করা ঈমান। আর একজনের হক, হালাল, হারাম, মোনাফেকি, ওজনে কম দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা ঈমান। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যেসব বিষয় মেনে চলতে বলেছেন তা মেনে চলা, আল্লাহ যা ত্যাগ করতে বলেছেন তা ত্যাগ করা, আল্লাহর রাসুল (সা.) যা করেছেন তা মেনে চলা, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের তরিকার বাইরে কোনো নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন না করা হচ্ছে ঈমান। এমন কি রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু সরিয়ে ফেলাও ঈমানের অঙ্গ।

অনৈসলামিক কাজের প্রতিবাদ করাও ঈমান। যথাসময়ে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, অর্থ থাকলে যথাসময়ে যাকাত দেওয়া, হজ করা, এতিম মিসকিনকে খাবার দেওয়া, আল্লাহর রাস্তায় নিজের ধন সম্পদ ব্যয় করা ইত্যাদি। এক কথায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকাল, সব আসমানি কিতাব, সব নবী ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস, অন্তরে দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করার নাম ঈমান।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ঈমানের শাখা-প্রশাখা ষাটের বেশি এবং লজ্জাও ঈমানের অন্যতম শাখা। (বোখারি শরীফ, হাদিস নম্বর ৮, খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২)

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৮০ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“যে লোক রসুলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করলো, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। ’’

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীন চিন্তা ও বিবেক দিয়ে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন। কোরআনই মহান আল্লাহ প্রেরিত শেষ কিতাব। এতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনও অধিকার কারো নেই। এ জন্যই আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সা.) বলেছেন, ‘‘আপনার দায়িত্ব শুধু আমার বিধি বিধানগুলো পৌঁছে দেওয়া। কেউ মানলো কি মানলো না তার দায়ীত্ব আপনার নয়। ’’

কারণ আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর মাধ্যমে যাই বলেন তা ভালো কথা, হেদায়েতের কথা। যার ইচ্ছা সে হেদায়েত হবে, যার ইচ্ছা হবে না। কারণ একজনের কাজের জন্য অন্যজন জবাবদিহি করবে না।

আসুন আমরা শুধু মুসলমানের ঘরে জন্ম হয়েছে বলে মুসলিম না হয়ে আল্লাহ যে রকম বান্দা চান সে রকম হই। ঈমান মজবুত করার জন্য মেহনত করি। নিয়মিত কোরআন বুঝে পড়ি, নামাজ পড়ি, রাসুল (সা.) এর শেখানো পথে চলি। আল্লাহর রাসুলের প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করি যার তাগিদ আল্লাহ নিজে পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠান, হে মুমিনরা, তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠাও”। (সূরা আহজাব, আয়াত ৫৬)

আমরা আল্লাহ নির্দেশিত পথে চললে হানাহানি বন্ধ হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে।

Related posts

শবে বরাতে ক্ষমা লাভের অনন্য সুযোগ : বাংলাদেশ ন্যাপ

News Desk

স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভাঙবে?

News Desk

স্রষ্টার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টিই আধ্যাত্মবাদ

News Desk

Leave a Comment