Image default
স্বাস্থ্য

হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে অভ্যাসগুলো দায়ী

আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার, কার্ডিও ভাস্কুলার ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে হার্টকে সুস্থ রাখা সম্ভব। যদিও বেশির ভাগ মানুষ এই নিয়ম অনুসরণ করতে পারে না আর পরিণতিতে হার্টে দেখা দেয় সমস্যা। অনেক সময় আমরা এ-ও বুঝতে পারি না যে কী কী কারণে আমাদের হার্টের ক্ষতি হচ্ছে।

দৈনন্দিন অতি সাধারণ অভ্যাস থেকেও হতে পারে হৃদরোগের মতো মারাত্বক রোগ। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভ্যাসগুলো আপাতদৃষ্টিতে গুরুতর কিছু মনে না হলেও, হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। এরমধ্যে ধূমপান, মাংস বেশি খাওয়া কিংবা শরীরচর্চার কমতি ইত্যাদি প্রচলিত কারণগুলো নেই। বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি স্বাস্থবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এখানে এরকম কয়েকটি অভ্যাসের কথা জানানো হল, যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ রকম কিছু অভ্যাস নিয়ে আজ আলোচনা হবে।

দৈনন্দিন কাজের মধ্যে না থাকা

অনেক কারণেই একজন মানুষ দৈনন্দিন কোনো কাজে ব্যস্ত না থাকতে পারে। আবার আপনি এমন কোনো ব্যবস্থা খুঁজে না-ও পেতে পারেন, যা আপনাকে ফিট রাখে। কিন্তু হার্ট ভালো রাখতে হলে আপনাকে কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। এমন না যে জিম করতেই হবে। ধীরে ধীরে শুরু করুন। দিনের মধ্যে ২০ মিনিট সময় বের করে হাঁটতে পারেন, যা হার্ট ভালো রাখে। হাঁটলে, দৌড়ালে বা খেলাধুলা করলে তা কোলেস্টেরল কমিয়ে রাখে, সেই সঙ্গে ওজনও রাখে নিয়ন্ত্রণে।

ধূমপান

ধূমপান শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি হার্টের অনেক ক্ষতি করে এবং দুর্বল হার্টের কারণে যে মৃত্যু হয়, তার এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ধূমপান।

কার্বন মনোক্সাইড হলো সিগারেটের একটি প্রধান উপাদান এবং যা রক্তের গণনা কম করে এবং উচ্চ কোলেস্টেরল হ্রাস করে। ধূমপান কমালে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়, তবে ভালো হয় যদি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া যায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ

কাজ, পরিবার বা অন্য কোনো কারণে হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে আর এতে করে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এ থেকে ধমনির ক্ষতি হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক চাপ মোকাবেলা করার জন্য অনেকে মদ্যপান করে, ধূমপান করে এবং অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া করে, যা সবই হার্টের আরো ক্ষতি করে। মানসিক চাপ কমার জন্য আপনার ব্যায়াম করা উচিত, যার ফলে হরমোন নিয়ন্ত্রিত থাকে। এ ছাড়া মেডিটেশন, লেখালেখি, গান শোনা, পরিবার বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটালে মানসিক অবসাদ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।

দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন দেখা

ঘরে বসে সারাদিন টেলিভিশন দেখাকে ধূমপানের চাইতেও ক্ষতিকর বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, “আপনি যতই ব্যায়াম করুন না কেনো, আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ দীর্ঘক্ষণ এক জায়গার বসে থাকা হৃদযন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ।”

জাঙ্ক ফুড

আপনি যদি সারা সপ্তাহ কাজ করেন, তাহলে আপনার অস্বাস্থ্যকর, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এবং ঘনঘন বাইরে খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি আরেকটি ক্ষতিকারক অভ্যাস, যা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য খাবার খাওয়ার আগে মেন্যুতে খাবারের উপাদানগুলো দেখে নিন আর যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন।

কাঁচা লবণ খাওয়া

‘এশিয়ান হার্ট ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ ডা. সন্তোষ কুমার ডোরা বলেন, “সোডিয়াম পানি শুষে নেয়, তাই শরীরে সোডিয়াম বেশি থাকলে রক্তে পানির মাত্রা বেড়ে গিয়ে তার আয়োতন বেড়ে যাবে। এটি হৃদযন্ত্রের উপর চাপ ফেলে। চাপ অতিরিক্ত হলে হৃদযন্ত্র শরীরের জন্য পর্যপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হতে পারে, ফলাফল ‘হার্ট ফেইলিওর’।”

দাঁত ফ্লস

গবেষণা বলে, হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য মাড়ির সুস্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ। দন্ত্যচিকিৎসক ডা. এলাক্ষ্মি মোরে গুপ্তা বলেন, “‘ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরা’ বা ‘ওরাল ক্যাভিটি’ সার্বিক সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখগহ্বরের মাধ্যমে অসংখ্য রোগবালাই শরীরের বাসা বাঁধার পথ করে করে নেয়। দাঁতের প্রদাহ ছড়িয়ে যদি ‘সাবম্যান্ডিবুলার স্পেস’ বা ‘ফ্যাশিয়ল স্পেস’য়ে প্রবেশ করে তবে প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে। ”

হৃদরোগের উপসর্গ না জানা

আপনি যদি বেশিরভাগ সময় হাসিখুশি থাকেন, ধূমপান না করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন তবে হৃদরোগের পূর্বাভাসগুলো আপনার চোখে না পড়াই স্বাভাবিক। অনেকেই নিজেদের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা জানেন না, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পূর্বাভাস দেয়।

চা-কফি পান করি না

গবেষকদের দাবি, নিয়মিত চা পান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আবার নিয়মিত কফি পান করার ফলে হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমা হওয়ার প্রভাব স্বাভাবিক।

অ্যালকোহল

হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম একটি কারণ হলো অ্যালকোহল গ্রহণ করা। এটি শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাকে ট্রিগার করে, যা থেকে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং এ থেকে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ধমনিতে ব্লক ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য অ্যালকোহল পান করলেও তা যেন পরিমিত পরিমাণে হয়।

Related posts

মার্কিন পানীয় জলে পাওয়া ‘ফরএভার রাসায়নিক’, মানচিত্র সর্বোচ্চ স্তরের ‘হট স্পট’ দেখায়

News Desk

ক্রুজ নোরোভাইরাসের বৃদ্ধি দেখে, দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ: সিডিসি

News Desk

স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নে, বিডেন স্বাস্থ্যসেবা খরচ কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান

News Desk

Leave a Comment