গবেষণা বলছে, মারাত্মক কোভিড সংক্রমণের কবলে পড়া অল্পবয়সী রোগীর অনেকেরই শরীরে ভাইরাসের বদলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকেই আক্রমণ করে বসছে কিছু অ্যান্টিবডি। অন্য দিকে ৩.৫%-এর শরীরে জিনগত সমস্যার জেরে জেঁকে বসছে কোভিড। তা হলে? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

দেখতে দেখতে প্রায় বছর ঘুরতে যায়, কোভিড ভ্যাকসিনের দেখা নেই। যদিও হাওয়ায় ভ্যাকসিনের অনেক খবরই ভাসছে। একবার রাশিয়া বলছে ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলেছি, ৯০% কাজ করছে তা, একবার চিন বলছে আর এক রকম, কখনও আবার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির খবরে আশা জাগছে! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে মারণ ভাইরাসটি দ্রুত বদলে ফেলছে নিজের প্রকৃতি। অতএব, ‘চক্রব্যূহে আজও, বন্দি হয়ে আছি/ একরোখা ভাইরাসে, মরে যাওয়ার আশায়!’ ‘এখন তো আর হচ্ছে না’, ‘আমাদের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে’, ‘এখন রোগ হলেও খুব সহজে সেরে যাচ্ছে’, ‘এখন তো বাড়িতেই চিকিৎসা হচ্ছে’, ‘ভালো করে খেলে আর ব্যায়াম করলেই করোনা ছুঁতে পারবে না’ ইত্যাদি বেশ কিছু ছেলেভুলানো সান্ত্বনা নিয়ে আমরা পথে-ঘাটে বেরিয়ে পড়ছি। এতদিন শরীরের অ্যান্টিবডিকেই করোনার দাওয়াই হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টায় ছিলেন বিশ্বের তাবড় তাবড় গবেষকরা। সেটা বাড়ানোর জন্যই প্রোটিন খাওয়া, ব্যায়াম করা ধরনের তত্ত্বগুলো আমাদের মাথায় ঢুকেছে। কিন্তু সম্প্রতি ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের। দেখা যাচ্ছে শরীরের জিন ও অ্যান্টিবডির খামখেয়ালিতে সমস্যায় পড়েছেন স্বয়ং রোগীই। অ্যান্টিবডি রোগে বাধা না দিয়ে অনেক সময়ে কোভিডকে পরোক্ষে সাহায্য করে ফেলছে!

গবেষকদের তথ্য বলছে, মারাত্মক কোভিড সংক্রমণের কবলে পড়া অল্পবয়সী রোগীর ১০%-এর শরীরে ভাইরাসের বদলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকেই আক্রমণ করে বসছে কিছু অ্যান্টিবডি। অন্য দিকে ৩.৫%-এর শরীরে জিনগত সমস্যার জেরে জেঁকে বসছে কোভিড। তথ্য বলছে, দুই ধরনের রোগীর দেহেই ‘আই ইন্টারফেরন’ নামক ১৭টি প্রোটিনের সম্মেলন অমিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি প্রস্তুত হওয়ার আগেই এই প্রোটিনগুলি প্রাথমিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে দেহকে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করে।

অ্যান্টিবডি-ই যখন কোভিডের মিত্র, শরীরের শত্রু

এ ছাড়াও দেখা যাচ্ছে, করোনায় মহিলাদের থেকেও পুরুষদের মৃত্যুহার বেশি, তাই বা কেন সে উত্তর পেতেও চলছে গবেষণা। এই গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন-লরেন্ট ক্যাসানোভা। ক্যাসানোভার মতে, ‘এই তথ্য সামনে আসার পর এইবার অন্তত কোভিডের প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় ইন্টারফেরনের অভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ গবেষণায় সিঙ্গল-জিন মিউটেশনের ব্যাপারটিও উঠে এসেছে।

এই গবেষণা প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উপসর্গযুক্ত রোগীদের পাশাপাশি প্রায় ৫৩০ জন উপসর্গহীন রোগীর নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার তথ্য বলছে, মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের শরীরে ১৩টি জিনের মধ্যে সামান্য পার্থক্য দেখা গেছে। তা ছাড়া ৩%-এর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ রোগ প্রতিরোধী জিনের অস্তিত্ব মেলেনি। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, যে সব রোগীর দেহে মিউটেশন জিন রয়েছে, তাঁদের দেহেও ইন্টারফেরন প্রস্তুতিতে বাধা দিচ্ছে ফাইব্রোব্লাস্ট কোষ।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, কোভিড-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৯৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রায় ১০%-এর শরীরে অটো-অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে ইন্টারফেরনকেই আক্রমণ করছে। পাশাপাশি সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এঁদের প্রায় ৯৫%-ই পুরুষ। জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে রোগীর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার শুরুতেই ইন্টারফেরনের ক্ষমতা খর্ব করেছে অ্যান্টিবডি। বিজ্ঞানীর কপালে এই নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই রীতিমতো ভাঁজ পড়ে গিয়েছে, কারণ যে অ্যান্টিবডি রোগ কোভিড প্রতিরোধ করবে বলে ভরসা রাখা হচ্ছিল, সেটাই যদি উল্টে এ ভাবে ইন্টারফেরনকে বাধা দিয়ে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, তা হলে তো সাংঘাতিক বিপদের কথা। এতদিন তো এই ভরসাতেই সকলে বুক বেঁধে রেখেছিলেন যে টিকা যতদিন না আসছে অন্তত অ্যান্টিবডির দাপটে ভাইরাসটিকে খানিক ঠেকিয়ে রাখা যাবে। সেই অ্যান্টিবডিও যদি পরোক্ষে কোভিডের জোটে যোগ দেয়, তা হলে তো সরকার টিকিয়ে রাখাই দায়!

Related posts

মা দিবসের সময় শোক: মাকে হারানোর পরে প্রথম ছুটিতে নেভিগেট করার জন্য 5 টি টিপস

News Desk

অ্যাথলিটরা ফুসকুড়িতে ভেঙে পড়ে, কঠিন মুডার রেসের পরে জ্বর হয়

News Desk

তিনি ক্রুজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি উদ্ধারকারী নৌকায় উঠার আগে তারা তাকে বিলটি তুলে দেন।

News Desk

Leave a Comment