Image default
মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীনতা সংগ্রামের সেক্টরগুলো: ৪ নম্বর সেক্টর

আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো সামরিক অভিযান ছিল না; ছিল সাধারণ শোষিত মানুষের মুক্তির অকুতোভয় অসম সংগ্রাম।ধাপে ধাপে দখল হতে থাকা এই দেশকে মুক্ত করার প্রয়াসে এদেশের অগণিত নিষ্পেষিত প্রাণ চালিয়ে যাচ্ছিলো তাঁদের দুর্বার মুক্তিসংগ্রাম। কিন্তু ২৫ মার্চ থেকে চালানো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মম নৃশংসতার বিপরীতে সেগুলো ছিল অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্ন কিছু ‘ব্যর্থ’ প্রতিরোধ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিরোধযুদ্ধগুলো হচ্ছিলো সমন্বয়হীনভাবে আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এমতাবস্থায় এসব স্বাধীনতাকামী, সাধারণ জনগণ, বাঙালি ইউনিট আর ‘বিদ্রোহী’ সামরিক সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করাটা জরুরি হয়ে পড়ে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো; © বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস-সেক্টর এক, পৃষ্ঠা ৩৩

সেই লক্ষ্যে ৪ এপ্রিল সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমার সীমান্ত সংলগ্ন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোয় কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানীর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও যশোর- এই চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। পরবর্তীতে অবশ্য এই চার অঞ্চল বিভক্তি থেকে সরে আসে নীতিনির্ধারকেরা। ১১ এপ্রিল শিলিগুড়ি বেতারকেন্দ্র থেকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সমগ্র দেশকে আটটি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে আটজন সেক্টর কমান্ডার নিয়োগের ঘোষণা দেন।

কলকাতায় সেক্টর কমান্ডারদের সভায় কর্নেল ওসমানীর সাথে সেক্টর কমান্ডারগণ; © মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র

অবশেষে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টিস্নাত কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে তাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে সারা দেশকে সামরিকভাবে এগারোটি সেক্টরে ভাগ করা হয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর এটিই ছিল সেক্টর কমান্ডারদের প্রথম কনফারেন্স। সভায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম এ রবকে বাংলাদেশ ফোর্সেস-এর চিফ অব স্টাফ ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর রণাঙ্গনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে মনোনীত করা হয়।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এগারোটি (প্রধানত) সেক্টরে ভাগ ছিল আমাদের রণাঙ্গন; © banglapedia.org

৪নং সেক্টর
উত্তরে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা থেকে দক্ষিণে কানাইঘাট থানা পর্যন্ত ১০০ মাইল বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা নিয়ে গঠিত। সিলেটের ইপিআর বাহিনীর সৈন্যদের সঙ্গে ছাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে এ সেক্টর গঠিত হয়। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত এবং পরে ক্যাপ্টেন এ রব। হেডকোয়ার্টার ছিল প্রথমে করিমগঞ্জ এবং পরে আসামের মাসিমপুরে। সেক্টরে গেরিলার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯ হাজার এবং নিয়মিত বাহিনী ছিল প্রায় ৪ হাজার। এই সেক্টরের ছয়টি সাব-সেক্টর (কমান্ডারদের নামসহ) হচ্ছে: জালালপুর (মাসুদুর রব শাদী); বড়পুঞ্জী (ক্যাপ্টেন এ. রব); আমলাসিদ (লেফটেন্যান্ট জহির); কুকিতল (ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের এবং পরে ক্যাপ্টেন শরিফুল হক); কৈলাশ শহর (লেফটেন্যান্ট উয়াকিউজ্জামান); এবং কমলপুর (ক্যাপ্টেন এনাম)।

সদর দপ্তর: এ সেক্টরের প্রথম হেডকোয়ার্টার ছিলো করিমগঞ্জ। পরবর্তীতে তা আসামের মাসিমপুরে স্থানান্তর করা হয়।

সেক্টর কমান্ডার: প্রথম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত। এরপর দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন এ. রব।

সাব-সেক্টরের সংখ্যা: প্রায় ৯ হাজার গেরিল‍া যোদ্ধা ও প্রায় চার হাজার নিয়মিত বাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছয়টি সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন-

• জালালপুর – মাহবুবুর রব সাদী।
• বড়পুঞ্জী – ক্যাপ্টেন এ. রব।
• আমলাসিদ – লেফটেন্যান্ট জহির।
• কুকিতল – ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের ও ক্যাপ্টেন শরিফুল হক।
• কৈলাশ শহর – লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামান।
• কামালপুর- ক্যাপ্টেন এনাম।

Related posts

সকল ইউনিয়ন পরিষদে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল স্থাপনের নির্দেশ

News Desk

কিশোর পারেখ: মুক্তিযুদ্ধে প্রচারবিমুখ এক ফটো সাংবাদিক

News Desk

একনজরে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স

News Desk

Leave a Comment