মুক্তিযুদ্ধের এই অস্ত্রগুলো থাকুক বাংলাদেশের মানুষের চোখের সামনে। যেমনটা বলা হয়েছিল জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীর প্রজ্ঞাপনে। প্রতিটি উপজেলায় প্রতিটি থানার সামনে দৃষ্টিনন্দন সুরক্ষিত কাঠামোতে সাজানো থাকুক অস্ত্রগুলো। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এখনো যারা বেঁচে আছেন, তাদের এই সান্ত্বনাটুকু থাকুক, যে অস্ত্র তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার ফিরে এসেছে তাদের চোখের সামনে। নতুন প্রজন্ম পরম মমতায় চোখ মেলে দেখুক হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গণমানুষের হাতে আসা অস্ত্রগুলো। আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কীটেরা গর্তের ভেতরেই থাকুক। কারণ মাথা বের করলেই তাদের চোখে পড়বে গ্রাম বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে উদ্যত এই সব অস্ত্রের ছবি। মনে পড়বে তাদের পরাজয়ের গ্লানির কথা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযুদ্ধারা যে সকল আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছিল সেই সকল অস্ত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো –
১. লি এনফিল্ড বা থ্রিনটথ্রি রাইফেল
![লি এনফিল্ড বা থ্রিনটথ্রি রাইফেল](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-d1f8dd47d8f954c3356f81487af884d2.jpg)
বর্ণনা : এই অস্ত্রটি একটি ব্রিটিশ অস্ত্র। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই এই অস্ত্রটি ব্যবহার করতো। এটি থ্রি নট থ্রি (.৩০৩) নামে পরিচিত। (এখনো এই অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। মূলত BNCC সদস্যদের এই অস্ত্রটি ব্যবহার করতে দেখেছি।) অস্ত্রটি বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু বোল্ট অ্যাকশন ছিল দেখে বেশী একটা কার্যকর ছিল না। তবে এটাই গেরিলাদের দ্বারা সর্বাধিক ব্যবহৃত হতো ।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি,ইশাপর/ইছাপুর ,ভারত।
ক্যালিবার : .৩০৩ ইঞ্চি/ ৭.৭×৫৬ মিমি
ম্যাগাজিন : ১০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : বোল্ট অ্যাকশন। (বোল্ট নামক একটি জিনিসকে টেনে ও ধাক্কা দিয়ে কার্তুজ ঢুকানো হয়।)
ভর : ৩.৯১ কিলোগ্রাম (প্রায়)
২. এস এল আর
![এস এল আর](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-9bf4fdca1adbd336308a174f6392fa2f.jpg)
বর্ণনা : বেলজিয়ামের এফএন এফএএল-এর ব্রিটিশ ভার্সনের ভারতীয় কপি। (🇧🇪>🇬🇧>🇮🇳) এটাও বহুল ব্যবহৃত একটি অস্ত্র। ভারতীয় কপিটি সেমি অটোমেটিক রাইফেল ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এটি ব্যবহার করতো। মূলত অনিয়মিত ( গেরিলা ) বাহিনী ব্যবহার করতো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : ইশাপর/ইছাপুর ,ভারত।
ক্যালিবার : ৭.৬২×৫১ মিমি।
ম্যাগাজিন : ২০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত (টিল্টিং ব্রীচব্লক)।
ভর : ৩.৯ কিলোগ্রাম।
৩. এইচকে জি ৩
![এইচকে জি ৩](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-843a59540fe911e7d32879ab4fa98387.jpg)
বর্ণনা : এটি জার্মানির তৈরি অসাধারণ একটি অস্ত্র। মূলত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যবহার করতো। আমাদের নিয়মিত বাহিনীর(সেনাবাহিনী ও ইপিআর) মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবহার করতো। অস্ত্রটি অটোমেটিক ফায়ার করলে টাকডুম টাকডুম করে শব্দ করতো। দৈর্ঘ্য (৪০ ইঞ্চি) ও ভর বেশী হওয়ায় গেরিলাযুদ্ধের জন্য উত্তম না হলেও নিয়মিত যুদ্ধের জন্য বেশ ভালো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : হেকলার অ্যান্ড কখ, জার্মানি/পিওএফ, পাকিস্তান।
ক্যালিবার : ৭.৬২×৫১ মিমি।
ম্যাগাজিন : ২০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : রোলার ডিলেইড ব্লোব্যাক। (গ্যাস সরাসরি বোল্টকে আঘাত করে নতুন কার্তুজ ঢোকায় )।
ভর : ৪ কেজি।
৪. সাব মেশিন গান কারবাইন 1A1
![সাব মেশিন গান কারবাইন 1A1](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-9a00270a7387d6d33564b0229fb71f74.jpg)
বর্ণনা : এটা ব্রিটিশ স্টার্লিং সাব মেশিনগানের ভারতীয় কপি। এর ম্যাগাজিন বাম পাশে লাগানো থাকে। অধিকাংশ সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা স্টার্লিং এবং স্টেনকে গুলিয়ে ফেলতো, উভয় অস্ত্রকে স্টেন বলতো। তবে স্টার্লিং স্টেনের চেয়ে হাজার গুণ ভালো। সাধারণত সেকশনের (১ সেকশন= ৫-১০ জন) কমান্ডার বা তার চেয়ে সিনিয়রদের দেওয়া হতো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : আই ও এফ, ভারত।
ক্যালিবার : ৯×১৯ মিমি
ম্যাগাজিন : ৩০/৩২ রাউন্ড।
অ্যাকশন : লিভার ডিলেইড ব্লোব্যাক।
ভর : ২.৭২ কিলোগ্রাম।
৫. স্টেন
![স্টেন](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-615defe7ba2d1244bd9c78f150947b6d.jpg)
বর্ণনা : ব্রিটিশ অস্ত্র। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যবহার করতো। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীও ব্যবহার করতো। অস্ত্রটিকে ভালো বলা যায় না। খারাপ বললেই ভালো। হাত থেকে পরে গেলে গুলি বের হয়ে যেতে পারে। অস্ত্রটি জ্যাম করতে পারে।এর ম্যাগাজিনও বাম পাশে লাগানো থাকে।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : আর ও এফ, ইংল্যান্ড।
ক্যালিবার : ৯×১৯ মিমি
ম্যাগাজিন : ৩০/৩২ রাউন্ড।
অ্যাকশন : ব্লোব্যাক
ভর : ২.৯ কিলোগ্রাম (প্রায়)
৬. টাইপ ৫৬ অ্যাসল্ট রাইফেল
![টাইপ ৫৬ অ্যাসল্ট রাইফেল](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-c5d55477b48be848262f9bf7d414aef9.jpg)
বর্ণনা : অসাধারণ অস্ত্র। রাশিয়ান একে ৪৭ এর ইমপ্রুভড চাইনিজ ভার্সন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এটি ব্যবহার করতো। সাধারণত বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা এটি ব্যবহার করতো। খালেদ’স ওয়ার ডকুমেন্টারিতে প্রায় সবার হাতে এটি দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে পুলিশের নায়েকের পদমর্যাদার সদস্যদের হাতে এটি দেখা যায়।
তখন প্রায় সবাই এটাকে সাব মেশিন গান বলতো। যদিও এটি আ্যসল্ট রাইফেল। আবার কেউ কেউ এটাকে চাইনিজ স্টেন বলতো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : নরিনকো, চীন
ক্যালিবার : ৭.৬২×৩৯ মিমি
ম্যাগাজিন : ৩০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত।
ভর : ৩.৮ কিলোগ্রাম।
৭. টাইপ ৫৬ কারবাইন
![টাইপ ৫৬ কারবাইন](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-e19419814ab1ede6a3c0c0b5f267a176.jpg)
বর্ণনা : এটি রাশিয়ান এসকেএস-এর চাইনিজ ভার্সন। পাকিস্তান ব্যবহার করতো। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরাও ব্যবহার করতো। বর্তমানে পুলিশ এটি ব্যবহার করে। চাইনিজ রাইফেল নামে পরিচিত।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : নরিনকো, চীন
ক্যালিবার : ৭.৬২×৩৯ মিমি
ম্যাগাজিন : ১০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত।
ভর : ৩.৮৫ কিলোগ্রাম।
৮. ব্রেন লাইট মেশিন গান
![ব্রেন লাইট মেশিন গান](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-8cd00ef5d30c29866029a4e5bd893070.jpg)
বর্ণনা : ব্রিটিশ ব্রেন লাইট মেশিনগানের ভারতীয় কপি। অনিয়মিত বাহিনীর (গেরিলা) সদস্যরা এটি ব্যবহার করতো। কমন অস্ত্র ছিল। এল এম জি নামে পরিচিত ছিল।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : ইশাপর/ইছাপুর ,ভারত।
ক্যালিবার : ৭.৬২×৫১ মিমি।
ম্যাগাজিন : ৩০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত।
ভর : ৯-১০ কিলোগ্রাম।
৯. টাইপ ৫৬ লাইট মেশিন গান
![টাইপ ৫৬ লাইট মেশিন গান](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-8e376a9c52d2881931afc57427fab22a.png)
বর্ণনা : এটি রাশিয়ান আর পি ডি-এর চাইনিজ ভার্সন। এটিও এল এম জি নামে পরিচিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা এটি ব্যবহার করতো। বর্তমানে পুলিশের এই অস্ত্রটি আছে, কিন্তু ব্যবহার করতে দেখিনি।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : নরিনকো, চীন।
ক্যালিবার : ৭.৬২×৩৯ মিমি।
ম্যাগাজিন : ১০০ রাউন্ড।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত।
ভর : ৭.৪ কিলোগ্রাম।
১০. এইচ ই ৩৬ গ্রেনেড
![এইচ ই ৩৬ গ্রেনেড](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-0f66913c212a7167416ecb674a98d36b.jpg)
১১. এম ৪০ রিকয়েললেস রাইফেল
![এম ৪০ রিকয়েললেস রাইফেল](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-ff2b5920b5241cbb8f76730943d5197a.jpg)
বর্ণনা : ইউএসএ এর তৈরি। পাকিস্তান সেনবাহিনী ও বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা এটি ব্যবহার করতো। বাংকার ধ্বংসের জন্য খুবই ভালো। এখনো ব্যবহৃত হয়। সালদা নদীর যুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হয়েছিল ।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : ওয়াটারভিলেট আর্সেনাল ।
ক্যালিবার : ১০৫ মিমি।
ভর : ২০৯.৫ কিলোগ্রাম।
১২. ২ ইঞ্চি মর্টার
![২ ইঞ্চি মর্টার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-87840988522de30967084e8475acab6a.jpg)
বর্ণনা : ব্রিটিশ মর্টার । মূলত অনিয়মিত বাহিনী (গেরিলা) ব্যবহার করতো । খুবই হালকা অস্ত্র । গেরিলা যুদ্ধের জন্য মোটামুটি ভালো বলা যায়। তবে এইমিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় অনুমানের উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করা হয়, এতে টার্গেটকে হিট করার সম্ভাবনা একটু কম।
ক্যালিবার : ২ ইঞ্চি
ভর : ৪.৮ কিলোগ্রাম ।
১৩. টাইপ ৬৯ রকেট লঞ্চার
![টাইপ ৬৯ রকেট লঞ্চার](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-e49a81a20c25faf746443af83f069ce4.jpg)
বর্ণনা : রাশিয়ার আরপিজি ৭-এর চাইনিজ ভার্সন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এটি ব্যবহার করতো। আমাদের নিয়মিত বাহিনী ব্যবহার করতো। এটিও বেশ ভালো অস্ত্র ছিল । বাহাদুরাবাদ ঘাটের যুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : নরিনকো।
ক্যালিবার : ৪০ মিমি।
ভর : ৫.৬ কিলোগ্রাম ।
১৫. এমজি ১ এ ৩
![এমজি ১ এ ৩](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-43701fc6fc631e79090b66b1f2d5f277.jpg)
বর্ণনা : জার্মানির বিখ্যাত এমজি ৪২-এর উন্নত ভার্সন (জার্মানি উন্নত করেছে)। আমার মতে এটা মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অস্ত্র। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী উভয় বাহিনী এটা ব্যবহার করতো। এটার রেট অফ ফায়ার ছিল ১১০০ হতে ১৩০০ রাউন্ড/মিনিট।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : পিওএফ
ক্যালিবার : ৭.৬২× ৫১ মিমি
ম্যাগাজিন : অনির্দিষ্ট। বেল্ট ব্যবহার করতো।
অ্যাকশন : রিকয়েল চালিত
ভর : ১১.৫ কিলোগ্রাম
১৬. টাইপ ৫৪
![টাইপ ৫৪](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/main-qimg-bda7e21aa943139a210ad01f48409c02.jpg)
বর্ণনা : সোভিয়েত ইউনিয়নের ডিএসএইচকের চাইনিজ ভার্সন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যবহার করতো। একটা প্লাটুনে একটা করে দেওয়া হতো। মূলত নিয়মিত বাহিনী ব্যবহার করতো। বিমান বিধ্বংসী কাজে ব্যবহার করা যেতো। বেলনিয়ার ২য় যুদ্ধে একজন এই অস্ত্র দিয়ে একটি এফ-৮৬ স্যাবর বিমানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : একাধিক প্রতিষ্ঠান উৎপন্ন করেছে।
ক্যালিবার : ১২.৭×১০৮ মিমি।
ম্যাগাজিন : অনির্দিষ্ট। বেল্ট ব্যবহার করতো।
অ্যাকশন : গ্যাস চালিত।
ভর : ৩৪ কিলোগ্রাম
১৭. পি ই কে ১
চিত্র সূত্র : ofb
বর্ণনা : এটা এক ধরণের প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ। আঁটার মতো নমনীয়। এটা দিয়ে মূলত মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কার এবং ব্রিজ ধ্বংস করতেন। এর সাথে প্রাইমাকর্ড, সেফটি ম্যাচ, ডেটোনেটর এবং টাইম পেন্সিল দেওয়া হতো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান : ওএফবি, ভারত।
বিস্ফোরণের বেগ : ৬০০০ হতে ৬৫০০ মি/সে
সূত্র: কোয়ারা