Image default
আন্তর্জাতিক

কংগ্রেস না আম আদমি, পাঞ্জাবের রায় আজ

উত্তর প্রদেশে তৃতীয় দফার ভোট সোমবার। কিন্তু রবিবাসরীয় আগ্রহ বেশি সীমান্ত রাজ্য পাঞ্জাবে। এই প্রথম যেখানে বহুমুখী ভোট হতে চলেছে। পাঞ্জাব নিয়ে এত জল্পনা আগে দেখা যায়নি।

বছর দেড়েক আগেও পাঞ্জাবের ভোট–সম্ভাবনা নিয়ে তেমন হেলদোল ছিল না। কংগ্রেস ড্যাং ড্যাং করে ফের জিতবে, দেয়ালের লিখন ছিল তেমনই। এর পেছনে কারণও ছিল। তিন কৃষি আইন বিজেপি–বিরোধিতার মাত্রা তুঙ্গে তুলছিল। রাজ্যবাসীর ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল দিন দিন। অবস্থা বেগতিক দেখে বিজেপির সবচেয়ে পুরোনো বন্ধু শিরোমণি অকালি দল, মন্ত্রিত্ব ও জোট ছাড়তে বাধ্য হন। সময় যত এগোয় কংগ্রেসের সম্ভাবনাও তত উজ্জ্বল হচ্ছিল। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ভুল করেননি মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও। বিধানসভায় পাস করিয়ে নেন নতুন কৃষি আইন রাজ্যে বলবৎ না করানোর প্রস্তাব। অথচ কী আশ্চর্য, কংগ্রেসের সেই নীলে নীল আকাশ ক্রমশ ছেয়ে ফেলল ঘোর অনিশ্চয়তার মেঘ! আজ অতি বড় কংগ্রেসিও নির্দ্বিধায় কবুল করছেন, পাকা গুটি কাঁচা করে কীভাবে হারের মুখে চলে আসা যায়। শতাব্দীপ্রাচীন এই দলকে দেখে তা শেখা যেতে পারে। এমন আত্মঘাতী গোলের নজির ভারতীয় রাজনীতিতে আর আছে কি না, গবেষণার বিষয়।

ফলে যে লড়াই ছিল নিতান্তই একপেশে, কংগ্রেসের সৌজন্যে আজ তা ক্ষুরধার। শুধু ক্ষুরধারই নয়, এই প্রথম ১১৭ আসনের পাঞ্জাব বিধানসভার ভোট হয়ে উঠেছে বহুমুখী।
পাঞ্জাবের রাজনীতি এ যাবৎ নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে কংগ্রেস ও অকালি দল। উত্তর ভারতে এটাই একমাত্র রাজ্য যেখানে আজও বিজেপি নিতান্তই এলেবেলে। অকালি দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তারা প্রাসঙ্গিক থাকতে চেয়েছে প্রধানত শহরাঞ্চলের হিন্দু ভোটের ওপর ভরসা করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রাজ্যে প্রথমবার উঠে আসে আম আদমি পার্টি (আপ)। লোকসভায় জেতে চারটি আসন। ২০১৭ সালে একার জোরে বিধানসভায় দখল করে ২০টি আসন। রাজ্য রাজনীতিতে অকালি দল ও বিজেপিকে ছাপিয়ে আজ তাদের প্রধান টক্কর কংগ্রেসের সঙ্গেই। এবার পাঞ্জাবের সব সমীক্ষায় এগিয়ে তারাই। রাতারাতি ভোট–চালচিত্রের এই বদল এককথায় কল্পনাতীত। এ জন্য কংগ্রেস নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দায়ী করতে পারবে না। পাঞ্জাব আখ্যান সেই দিক দিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতা ও অসহায়তার প্রতীক হিসেবে জ্বলজ্বল করবে।

সংকটের শুরু ২০২১ সালের মাঝামাঝি। যে অমরিন্দর সিং ছিলেন গান্ধী পরিবারের অনুগত, তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন নভজ্যোত সিং সিধু। আশ্চর্যজনকভাবে সেই বিদ্রোহ চলতেই থাকে। ভোটের দিন যত এগোতে থাকে কোন্দলও তত বাড়তে থাকে। অমরিন্দরকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত ১০, জনপথ যখন নেয়, ততক্ষণে সিধুর উচ্চাশাও আকাশ ছুঁয়েছে। উচ্চাশার সেই ফানুস চুপসে দিয়ে গান্ধী পরিবার সিধুরই দলিত অনুগামী চরণজিৎ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নেয়। গত সেপ্টেম্বরের ওই সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী সময়ে চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণায় ক্ষতি কতটা কমানো গেল তা জানা যাবে ১০ মার্চ। নিঃসন্দেহে চান্নিই কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় ফাটকা।

পাঞ্জাবের রাজনীতির চাবি বরাবর থেকেছে জাট ধনী কৃষকদের হাতে। হিন্দু জনসংখ্যা ৩৯ শতাংশ হলেও আজ পর্যন্ত কোনো হিন্দু এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হননি। যেমন হননি কোনো দলিতও, অথচ জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশই দলিত। আরও বিস্ময়ের, দলিতদের যিনি মুকুটহীন রানি, বহুজন নেত্রী সেই মায়াবতী বারবার এই রাজ্যে ভোটে লড়লেও কখনো সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। দলিতরা সবসময় কংগ্রেস ও অকালির মধ্যে এক দলকে বেছে নিয়েছে। এবার মায়াবতী জোট বেঁধেছেন অকালি দলের সঙ্গে।

বিজেপির জোটসঙ্গী অমরিন্দর সিংয়ের দল ‘পাঞ্জাব লোক কংগ্রেস’। পঞ্চম শক্তি হিসেবে মঞ্চে হাজির রাজ্যের ২২টি কৃষক সংগঠনের ‘সংযুক্ত সমাজ মোর্চা’ ফ্রন্ট। কৃষক মোর্চা ও অমরিন্দর–বিজেপি জোট কত আসন পেতে পারে সেই কষ্ট কল্পনায় কেউ সময় নষ্টে রাজি নন। জল্পনা একটাই, এদের ভোট কাটাকুটি কাকে হাসাবে, কাকে কাঁদাবে।

পাঞ্জাবের সর্বত্র আম আদমি পার্টি ‘আপ’–এর উপস্থিতি দৃশ্যমান। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি এখনো কংগ্রেস ও অকালি দলের মতো মসৃণ নয়। ফলে উপস্থিতি ও প্রাপ্ত আসনের ব্যবধান থাকে বিস্তর। এবারো তেমন হয় কি না দ্রষ্টব্য। তবে কংগ্রেস, অকালি ও বিজেপির ‘আপ’ বিরোধিতায় স্পষ্ট, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সম্ভাব্য উত্থান তাদের তটস্থ রেখেছে। কেজরিওয়ালকে আক্রমণের নবতম হাতিয়ার সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ।

এত আত্মঘাতী গোল সত্ত্বেও কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখলে প্রাচীনতম দলটি ধড়ে প্রাণ পাবে। না হলে নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার বহর বাড়বে। ‘আপ’ সরকার গড়লে জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প হওয়ার দাবি জানাবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিজেপি প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনি। তাঁরা খুশি হবে সরকার গঠনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ ৫৯–এর ধারেকাছে কেউ না পৌঁছালে। রাজ্যটি সীমান্তবর্তী। সরকার গঠনে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে কে বলতে পারে, ‘জাতীয় স্বার্থে’ বিজেপি পাঞ্জাবে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করবে না? পাঞ্জাবের ভোট সম্ভাবনার একাধিক দরজা খুলে দিতে পারে।

 

Related posts

যে শর্তে মালয়েশিয়ায় কোয়ারেন্টিন ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে

News Desk

বিধিনিষেধ মানাতে সেনা নামাচ্ছে পাকিস্তান

News Desk

করোনা টিকার পেটেন্ট উন্মুক্ত করায় সায় যুক্তরাষ্ট্রের

News Desk

Leave a Comment