Image default
আন্তর্জাতিক

সৌদি আরবে রীতি ভেঙে কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন আজ

মসজিদ আল হারামে অবস্থিত কাবা শরিফ। ফাইল ছবি

মুসলিমদের পবিত্র দুই মসজিদ- মক্কার মসজিদ আল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববী পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার মক্কায় কাবার গিলাফ পরিবর্তন করা হচ্ছে।

এতদিন এটি ঈদ উল আযহার আগে হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন করা হতো। কিন্তু এবার হজ্বের সময়ে ঐতিহ্য অনুযায়ী অর্থাৎ নয় জিলহজ তারিখে গিলাফ পরিবর্তন করা হয়নি। খবর বিবিসির।

ঢাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারি বিবিসি বাংলাকে বলছেন এবার রেওয়াজের ব্যতিক্রম করা হচ্ছে কারণ সেদেশের সরকার হিজরি সনকে গুরুত্ব দিয়ে গিলাফ পরিবর্তন করার কথা বলেছে।

তিনি বলেন, হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনই হাজীদের উপস্থিতিতে গিলাফ পরিবর্তন করাটাই ছিলো দীর্ঘকালের রেওয়াজ।

হজ্বের সময় নতুন গিলাফ দেয়ার পর পুরনো গিলাফ সাধারণত মুসলিম দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদকে উপহার হিসেবে দিয়ে সম্মানিত করা হতো। এবার কি করা হবে জানিনা। কারণ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কোন কিছু মুসলিম বিশ্বকে জানানো হয়নি, বলছিলেন তিনি।

সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক রুমী সাঈদ বলছেন ১ মুহররমে গিলাফ পরিবর্তনের ঘোষণা সরকারি ওয়েবসাইটে বিশেষ করে দুই প্রধান মসজিদের পরিচালনা কর্তৃপক্ষ পহেলা মুহররমে গিলাফ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চলতি মাসের শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলো।

গিলাফ কী? কাবার গিলাফ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ইসলাম-পূর্ব সময়ে ইয়েমেনের বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ সর্বপ্রথম কাবা শরিফকে গিলাফ দিয়ে ঢাকেন এবং এজন্য তিনি ইয়েমেনের কাপড় ব্যবহার করেছেন।

মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কাবাকে লাল ও সাদা কাপড়ে ঢেকে দেন। পরে বিভিন্ন সময়ে সাদা রংয়ের গিলাফ, লাল গিলাফ, হলুদ গিলাফ ও সবুজ গিলাফ ব্যবহার করা হয়েছে। আর এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কালো গিলাফ। যদিও গিলাফ নিয়ে এ সব তথ্য সম্পর্কে ভিন্নমতও আছে।

সৌদি পত্রিকা আরব নিউজের খবর অনুযায়ী কাবার গিলাফ এবারের ঈদুল আযহার প্রথম দিনেই দুই পবিত্র মসজিদের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই কর্তৃপক্ষের প্রধান শেষ আব্দুল রহমান আল সুদাইসের নেতৃত্বে দেড়শতাধিক ব্যক্তি গিলাফ পরিবর্তনের কাজে অংশ নেয়ার কথা। এই গিলাফ হলো একটি বস্ত্র খণ্ড। ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা কিসওয়া’ কাবার গিলাফ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান।

১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এক লাখ বর্গমিটারের এই কমপ্লেক্স একসময় ‘কিসওয়া ফ্যাক্টরি’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ২০১৭ সালে রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে এই নাম পরিবর্তন করে কমপ্লেক্সটির ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়।

৬৫৮ বর্গমিটারের গিলাফটি তৈরিতে ৬৭০ কেজি কালো রেশম ব্যবহার করা হয়। ৪৭টি কাপড়ের টুকরোকে বিশেষ মেশিনে সেলাই করা হয়। এরপর কালো গিলাফের গায়ে মেশিনের ছাপ দিয়ে লেখা হয় আল্লাহর নাম ও গুণাবলি।

আরব নিউজের তথ্য অনুযায়ী এরপর গিলাফটি গিল্ডিং অ্যান্ড এম্ব্রয়ডারি বিভাগে যায়। সেখানেই ক্যালিগ্রাফির ও শিল্পীরা গিলাফের চারদিকের সোনালি বেল্ট ও কাবার দরজার পর্দা তৈরি করেন।

২৩ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫০ জনের বেশি দক্ষ শিল্পী তাতে কোরআনের আয়াত ও অন্যান্য দোয়া এম্ব্রয়ডারি করেন। এ কাজে একশ কেজি খাঁটি রুপা এবং ১২০ কেজি সোনার প্রলেপযুক্ত রৌপ্য সুতা ব্যবহৃত হয়। গিলাফে আরবি ভাষায় ‘মক্কা আল-মুকাররম’, চলতি সন ও সৌদি বাদশাহর নাম যুক্ত করা হয়।

কাবার গিলাফ আছে বায়তুল মোকাররমেও

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারি বলেন, আগে হজ্বের মূল অনুষ্ঠানের দিন গিলাফ পরিবর্তন করে পুরনো গিলাফ দিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সম্মানিত করা হতো।

এমনকি অনেক মসজিদেও এ উপহার দেয়া হতো। বাংলাদেশের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদও কাবার গিলাফ এসেছিলো, বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, কাবার সম্মানেই এটা করা হতো, যা ছিলো মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য।

Source link

Related posts

ফিলিস্তিনি কিশোরকে গুলি করে মারল ইসরায়েলি সেনারা

News Desk

পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন ঘাঁটি তৈরি হবে না: ইমরান খান

News Desk

বিশ্বের দীর্ঘতম ১০ মেট্রোরেল রয়েছে যেসব শহরে

News Desk

Leave a Comment