গত কয়েক মাস ধরেই সৌদি আরব-পাকিস্তান সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ঐতিহ্যগতভাবে দেশ দুটি ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে আসলেও সাম্প্রতিককালে সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এমন সময়ে সৌদি আরব সফরে গেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইমরান খান এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সৌদি সফর করছেন। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানান বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
জেদ্দা বিমানবন্দরে ইমরান খানকে স্বাগত জানান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। মূলত বিগত কয়েক মাস ধরে রিয়াদের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে তা মেরামত করে মিত্রতা পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতেই ইমরানের এই সফর।
পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন শুরু কাশ্মীর ইস্যুতে। ভারতে মোদি সরকার কাশ্মীর দিখণ্ডিত করে রাজ্যের মর্যাদা এবং স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পর পাকিস্তান ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসির) পক্ষ থেকে নিন্দার আহ্বান জানায়।
কিন্তু ইসলামি দেশগুলোর এই জোটের নেতা সৌদি আরব পাকিস্তানের এমন প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এর নেপথ্যে ভারতে রিয়াদের বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টি জড়িত ছিল। কিন্তু সৌদি সাড়া না দেওয়ায় পাকিস্তানের রিয়াদের সমালোচনা করতে শুরু করে দেয়।
রিয়াদও ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ২০১৮ সালে সৌদি আরব পাকস্তানকে যে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় ও আরও ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তেল কেনার ক্রেডিট সুবিধা দেয় তা প্রত্যাহার করে দ্রুত ঋণ শোধ করার তাগাদা দেয়।
পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর। ফলে দ্রুত ঋণ শোধ করার তাগিদ পেয়ে দেশটি তার যোগান পেতে মরিয়া হয়। পরে চীনে ইসলামাবাদকে উদ্ধার করে। বেইজিংয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পাকিস্তান সৌদি আরবের সেই ঋণ পরিশোধ করে।
এরপর সম্পর্ক ঠিক করার জন্য ইমরান খান নানাভাবে চেষ্টা চালাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর প্রধানকে সৌদি আরব সফরে পাঠান। কিন্তু কিন্তু ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইমরান খান সৌদি আসার আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া এসে পৌঁছান। শুক্রবার সকালে তিনি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, আফগানিস্তান শান্তি প্রক্রিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক শান্তির জন্য সহযোগিতা ও আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।