ইসরায়েলে নতুন সরকার গঠনের প্রশ্নে আগামী ১৪ জুনের মধ্যে দেশটির আইন পরিষদ নেসেটে আস্থাভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেসেটের স্পিকার ইয়ারিভ লেভিন এই তথ্য জানান। তবে আস্থাভোট অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কোনো দিন বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়নি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন সরকার গঠনে নেসেট সদস্যদের আস্থাভোট নেয়া হচ্ছে। ভোটে নতুন সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারলে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসনামলের অবসান হবে।
বিবৃতিতে নেসেট স্পিকার জানান, বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ তাকে ও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টকে একটি জোট গঠনের কথা জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন নির্ধারিত সময়সীমায় ১৪ জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আস্থাভোটে জোটের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হলে আগের সমঝোতা অনুযায়ী রক্ষণশীল ইয়ামিনা দলের প্রধান নাফতালি বেনেতের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হবে। অপরদিকে লাপিদ-বেনেতের জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে দুই বছরের মধ্যে পঞ্চম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে যাবে ইসরায়েল।
এর আগে ইসরায়েলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় গত ২৩ মার্চ দুই বছরের মধ্যে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই নির্বাচনেও কোনো দল বা জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ১২০ আসনবিশিষ্ট আইন পরিষদ নেসেটের ৬১ সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। প্রথম দফা আলোচনার পর নেসেটের ৫২ সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সুপারিশ করায় এপ্রিলের শুরুতে তাকে সরকার গঠনের জন্য প্রথম মনোনয়ন দেন রিভলিন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত না হলেও ওই সময় এটিই ছিল সর্বোচ্চ মনোনয়ন।
কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে নেতানিয়াহুকে সমর্থন করা জিউনিস্ট পার্টি কোনো আরব দলের সাথে সরকার গঠনের অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি সরকার গঠনে ব্যর্থ হন। নেতানিয়াহুর ব্যর্থতার পর ৫ মে নতুন করে নেসেট সদস্যদের সাথে আলোচনা করেন প্রেসিডেন্ট রিভলিন। নতুন আলোচনায় রক্ষণশীল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেতের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৫৬ সদস্যের সুপারিশ পান ইয়েশ আতিদ দলের প্রধান ইয়ায়ির লাপিদ। ২ জুন সরকার গঠনে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার সামান্য আগে ইয়ায়ির লাপিদ সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। নাফতালি বেনেত ছাড়াো অন্য আরো ছয়টি দলের প্রধানের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠনের এই ঘোষণা দেন তিনি।
সমঝোতা অনুসারে ইসরায়েলের নতুন গঠিত হতে যাওয়া সরকারের প্রথম দফায় বেনেত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পরে ইয়ায়ির লাপিদ তার কাছ থেকে সরকারের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এদিকে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে লাপিদ-বেনেতের জোট সরকার গঠনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি একে নির্বাচনী জালিয়াতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলে সরকার গঠনের এই নাটকিয়তার মধ্যেই ১২ বছরের ক্ষমতাসীন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার শুনানি চলছে। মার্চে নির্বাচনের কারণে স্থগিত থাকার পর এপ্রিলে এই শুনানি আবার শুরু হয়।
২০১৯ সালে গঠিত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, সম্পদশালী বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার ও মিডিয়া টাইকুনদের কাছে প্রশংসামূলক কভারেজের বিনিময়ে তিনি তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। নেতানিয়াহু এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
সূত্র : আলজাজিরা