ন্যাটোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মিরচা জুয়ানা
ইউক্রেনের যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারে এবং তার জন্য পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোটকে প্রস্তুত হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন ন্যাটোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মিরচা জুয়ানা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ৬৪তম দিনে মি জুয়ানা বিবিসিকে বলেন, “এটা এখন পরিষ্কার যে এই যুদ্ধের জন্য আগামি কয়েকটা দিন এবং কয়েকটি সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চলতে পারে…মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর – কয়েকটি বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করবে।”
ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, যতদিনই এই যুদ্ধ চলুক না কেন, শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনই এই যুদ্ধে জয়ী হবে। “সম্ভবত রণাঙ্গনেই এই যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে এবং আশা করা করা যায় ইউক্রেনই ঐ যুদ্ধে জিতবে,” বলেন তিনি।
পরপর দ্বিতীয় দিনের মত ন্যাটো জোটের পক্ষ থেকে বলা হলো যে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। ন্যাটো জোটের মহাসচিব ইয়েন স্টোলটেনবার্গও বৃহস্পতিবার বলেন, “দীর্ঘ একটি যুদ্ধের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
ব্রাসেলসে এক যুব সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ চলতে থাকবে সে সম্ভাবনা এখন প্রবল … মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।”
ন্যাটো মহাসচিব বলেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সাহায্য জুগিয়ে যেতে ন্যাটো প্রস্তুত, এবং ন্যাটো দেশগুলো যে মানের অস্ত্র ব্যবহার করে তেমন অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ন্যাটো জোটের পক্ষ থেকে এখন স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সহজে থামবে না।
বিশ্লেষকরা প্রধানত দুটো কারণের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন :
এক: যুদ্ধ বন্ধে তুরস্কের মধ্যস্থতায় যে মীমাংসা আলোচনা শুরু হয়েছিল তা কার্যত এখন থেমে গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ গত কয়েকদিন ধরে আঙ্কারা, মস্কো এবং কিয়েভ সফর শেষ করার পর শান্তি প্রক্রিয়ায় এই অনিশ্চয়তায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
দুই: যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কিছু ন্যাটো শরিক দেশের মধ্যে এই মনোভাব জোরদার হচ্ছে যে রাশিয়াকে এই যুদ্ধে হারাতে হবে, এবং তারা মনে করছে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলে সেটা সম্ভব।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বুধবার স্পষ্ট করে বলেছেন রাশিয়াকে ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে হবে, এমনকি ক্রাইমিয়াও ছাড়তে হবে।
ন্যাটো জোটের সদস্য এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কায়া কালাস শুক্রবার একই কথা বলেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, “যদি কোনো শান্তি চুক্তি হয়, তাহলে রাশিয়াকে তার পুরনো সীমানায় ফিরে যেতে হবে। তাহলেই এই আগ্রাসনের পরিণতি তারা বুঝবে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও এখন বারবার জোর গলায় বলছেন রাশিয়াকে তিনি এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। এপ্রিলের ১০ তারিখে তিনি বলেন, মি. পুতিনের সঙ্গে মীমাংসা আলোচনা তিনি চিরতরে প্রত্যাখ্যান করবেন যদি রাশিয়া ডনবাসে স্বাধীনতার জন্য গণভোটের কোনো উদ্যোগ নেয়।
অন্যদিকে মি. পুতিন বদ্ধপরিকর যে পুরো ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ তিনি চান। ডনবাস ছাড়াও ইউক্রেনের দক্ষিণের কিছু অংশ নেওয়ার জন্য তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন।
এ নিয়ে যে তিনি পিছু হটবেন না তা তিনি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের কিয়েভ সফরের সময় ঐ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আরেকবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
তার অর্থ, মীমাংসার সম্ভাবনা দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে এই ধারণা জোরদার হচ্ছে যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসা শেষ হওয়ার নয়।
ডি-ইভূ