পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ভাগ্য নির্ধারণী অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে অবশেষে হেরে গেলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। হারালেন প্রধানমন্ত্রীত্বের মসনদ। ইমরানের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৭৪টি। প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ইতিহাসে সৃষ্টি হলো এক নতুন নজির। এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারালেন।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ২টার দিকে পাকিস্তান পালার্মেন্টে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। রাতের অন্ধকারের মতোই ইমরানের রাজনৈতিক জীবনেও নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। এখন আরও বিপদ তাড়া করবে তাকে। পড়তে হবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মুখে। এরই মধ্যে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান খান। এদিকে নিজেদের জয়ে সংসদে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। খবর ডন, জিও নিউজ, আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি ও বিবিসির।
এর আগে মাঝরাতে ভোট শুরু হয়েই চার মিনিটের জন্য স্থগিত হয় অধিবেশনের অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া। দিনভর নাটকীয়তার পর শনিবার মাঝরাতে অনুষ্ঠিত হয় এই ভোট। তবে ভোট শুরুর আগে পদত্যাগ করেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার।
অনাস্থা ভোটের আগমুহূর্তে ইমরান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি একা হলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন। আগে যেমন সবকিছুতে জয়ী হয়েছেন, এবারও তিনি হারবেন না। বিদেশি ষড়যন্ত্রের কাছে পাকিনস্তানকে তিনি হারতে দেবেন না। এ সময় তিনি তার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মাঠে নেমে আসারও আহ্বান জানান। তবে শেষরক্ষা হলো না ইমরান খানের।
এর আগে ১৯৮৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো আর ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে উভয়েই সেই ভোটে জিতে ক্ষমতায় টিকে গিয়েছিলেন।
ভোটাভুটি এই অধিবেশন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (এন) আয়াজ সাদিক পরিচালনা করেন। ভোটাভুটি শুরুর কয়েক মিনিট আগে স্পিকার আসাদ কাইসার নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে তিনি পারবেন না। পরে তিনি জানান জাতীয় পরিষদের চলমান সেশন প্যানেল চেয়ারম্যান আয়াজ সাদিক পরিচালনা করবেন।
সারাদিনে তিনবার মুলতবির পর চতুর্থ দফায় সংসদ অধিবেশন বসার কথা ছিল রাত সাড়ে দশটায়। তবে অধিবেশন শুরু হয় অনেক বিলম্বে। এর আগে শোনা যায় ইমরানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট ও সংসদের স্পিকার বিরোধী দলগুলোর চাপে ও আইনি জটিলতায় কঠোর পরিণতি ভোগের ভয় থেকে রাজি হন অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠানে। এর আগে দিনভর নাটকীয়তার পর রাতে ইমরান খান নিজের বাসভবনে দলীয় মন্ত্রীদের নিয়ে এক জরুরি সভা ডাকেন। অন্যদিকে বিরোধীদের প্রবল হই হট্টগোলের মধ্যেই পাকিস্তানের সংসদ অধিবেশন রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেয়া হয়। ফলে অনাস্থা ভোট নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। অনেকেই আশংকা করছিলেন, আজ রাতে হয়তো অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হবে না। শেষমুহূর্তেও ইমরানের সরকার অনাস্থা ভোট এড়ানোর কৌশল খুঁজতে কোনো চেষ্টাই বাদ রাখেননি। তাছাড়া ইমরান ঘনিষ্ঠ সংসদ স্পিকার নিজেই ভোট হতে দিতে চাননি। সময় পার করে দিতে ইমরানের দলীয় এমপি মন্ত্রিরাও দীর্ঘ বক্তৃতা করার কৌশল নেন। এভাবে দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলে খবর আসে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ফলে বেশ অনিশ্চয়তা চলছিল অনাস্থা ভোট ঘিরে।
শনিবার রাতে অনাস্থা ভোট প্রশ্নে অধিবেশন চলাকালে পকিস্তান সংসদ এলাকার নিরাপত্তায় সংসদীয় সেনারা। ছবি: সংগৃহীত
এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের সাংসদদের একাংশ স্পিকারের কাছে আবেদন জানান যেনো অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হয়। বিরোধী নেত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফও টুইট করে দ্রুত ভোটাভুটির দাবি জানান।
এদিন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে গত ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এতে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়ে পাকিস্তান।
এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের শরণাপন্ন হন। টানা পাঁচ দিনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটভোটি করে এর সুরাহার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ।