ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) জানিয়েছে, আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে সূর্য থেকে দূরত্বের বিচারে সৌরমণ্ডলের পঞ্চম গ্রহ মঙ্গলে বিশাল এক সমুদ্র ছিল। সেই সমুদ্রের গভীরতা ছিল অন্তত ৩০০ মিটার বা ১ হাজার ফুট।
অর্থাৎ, ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহেও ছিল একটি প্রকাণ্ড আদিম সমুদ্র; কিন্তু গ্রহটির জম্মের মাত্র ১ কোটি বছরের মধ্যেই সেই সমুদ্র ধ্বংস হয় এবং গ্রহটির সব পানি মহাশূন্যে হারিয়ে যায়।
বিভিন্ন গ্রহাণুর লাগাতার আঘাতই এই গ্রহটির পানি হারিয়ে যাওয়ার প্রধান এবং একমাত্র কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সাম্প্রতিক এক গবেষণাটি গত ১৭ নভেম্বর ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িকীতে প্রকাশিতও হয়েছে।
এছাড়া নাসার সেন্টার ফর স্টার অ্যান্ড প্ল্যানেট ফরমেশন বিভাগের বিজ্ঞানী ও মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কিত গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মার্টিন বিজ্জারো সোমবার এক বিবৃতিতে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে কাছাকাছি সময়েই গ্রহ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল পৃথিবী ও মঙ্গল এবং উভয় গ্রহেই ছিল আদিম সমুদ্র; কিন্তু মঙ্গলগ্রহের ওপর একের পর এক গ্রহাণুর আঘাত আসতে থাকে এবং উদ্ভবের মাত্র ১ কোটি বছরের মধ্যেই মঙ্গলের সব পানি হারিয়ে যায়। ওই সময় যেসব গ্রহাণু মঙ্গলে আঘাত করেছি, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই ছিল বরফের তৈরি কিংবা বরফে পরিপূর্ণ।’
বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সেই আদিম সমুদ্রের; কারণ সেই সমুদ্রে ছিল জীবদেহ বা প্রাণের মূল উপাদান অ্যামিনো এসিড। পৃথিবীতে প্রথম যে এককোষী প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছিল— তা ছিল মূলত সেই অ্যামিনো এসিডের বিবর্তিত ও ঘনীভূত রূপ।
নাসার গবেষণায় জানা গেছে, মঙ্গলের আদিম সমুদ্রেও অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু অগণিত গ্রহাণুর আঘাতে সমুদ্রের পানি মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ায় সৌরমণ্ডলের ‘লাল গ্রহে’ আর প্রাণের বিকাশ ঘটেনি। তবে উদ্ভব কেবল মঙ্গল গ্রহই যে গ্রহাণুর আঘাত সহ্য করেছে— এমন নয়। উদ্ভব হওয়ার এক কোটি বছর পর মঙ্গলের আয়তনের সমান একটি গ্রহের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল পৃথিবীরও। ওই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর খানিকটা অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশ্বকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। সেই বিচ্ছিন্ন অংশটিই আমাদের কাছে ‘চাঁদ’ নামে পরিচিত বলে জানায় সংস্থাটি।
কেএইচ