ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু পুরোনো। ফিলিস্তিনি ভূমি দখল থেকে শুরু করে ইরান-বিরোধী অবস্থান সবক্ষেত্রেই মার্কিন প্রশাসনের নিষ্কণ্টক সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েলিরা। গত এক যুগ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক হয়ে ওঠে আরও গভীর। বিশেষ করে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু জুটি মধ্যপ্রাচ্যের অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছিল আতঙ্কের নাম। জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে বসার পরেও এর খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

গত মে মাসে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল আবারো আক্রমণ শুরু করলে তাতে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন বাইডেন, এমনকি কয়েক দফায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোনও করেন তিনি। এর মধ্যেই ইসরায়েলের কাছে বিপুল অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় তার প্রশাসন। অথচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মুহূর্তে সেই ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’রই কিনা সমালোচনায় মেতে উঠলেন নেতানিয়াহু!

সম্প্রতি ভার্জিনিয়া-ভিত্তিক নিউজপোর্টাল অ্যাক্সিওসের বরাতে ইয়াহু নিউজ জানিয়েছে, গত রোববার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নতুন জোট সরকারের আস্থা ভোটের আগমুহূর্তে ভাষণ দেন বিরোধী দলীয় নেতা নাফতালি বেনেট ও বিদায়ী সরকারপ্রধান নেতানিয়াহু। এসময় ইরান ইস্যুতে জো বাইডেনকে রীতিমতো তুলোধুনো করেন নেতানিয়াহু।

প্রথমে বেনেট তার বক্তব্যে বলেন, ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে ক্ষমতাধর দেশগুলোর পরমাণু চুক্তি ছিল মস্ত বড় ভুল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ইসরায়েলের প্রতি অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে দুই দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চান এবং বাইডেনের সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ থাকলে তা ‘পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের’ ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।

এর কিছুক্ষণ পরেই কথা বলতে ওঠেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বেনেটকে দুর্বল এবং অবিশ্বস্ত হিসেবে অভিযুক্ত করেন। নেতানিয়াহু দাবি করেন, নাফতালি বেনেট ইরান ইস্যুতে বাইডেনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারবেন না। ইসরায়েলের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বাইডেন প্রশাসন তাকে ইরান ইস্যুতে মতবিরোধ গোপন রাখতে বলেছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। তার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুষম সম্পর্কের চেয়ে ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান এ নেতা। এসময় ইরান পামাণবিক অস্ত্রধর হয়ে ওঠার পথে নিজেকে একমাত্র বাধা হিসেবে তুলে ধরেন নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেন, তার বিদায় ঘিরে ইরানিরা আনন্দ-উল্লাস শুরু করেছেন।

কট্টর ডানপন্থী এ নেতা আরো দাবি করেন, ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসতি স্থাপন স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অগ্রাহ্য করেছিলেন তিনি, এমনকি জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট আবারো খোলার বিষয়ে বাইডেনের পরিকল্পনারও বিরোধিতা করেছিলেন। ওই কনস্যুলেট থেকেই ফিলিস্তিনিদের বিষয়গুলো পরিচালনা করত যুক্তরাষ্ট্র। সেটি বন্ধ করে দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিন নেসেটে বিরোধীদের এত সমালোচনাতেও শেষরক্ষা হয়নি নেতানিয়াহুর। মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। অবশ্য এখনই হালছাড়ার পাত্র নন এ নেতা। ইসরায়েলের নতুন জোট সরকারকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নেতানিয়াহু। তাদের হটিয়ে ‘ধারণার চেয়েও দ্রুত’ ক্ষমতায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ প্রধানমন্ত্রী।

Related posts

ইসলাম নিয়ে কটূক্তি: ক্ষমা চাইলেন বরিস জনসন

News Desk

নির্বাচনী কেন্দ্রে ছুড়ে মারা হলো বিচ্ছিন্ন মাথা

News Desk

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন লিজ ট্রাস

News Desk

Leave a Comment