জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কিয়েভ সফরকালে সেখানে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এ হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে হেয় করার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন। খবর বিবিসির।
রাশিয়াকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নতুন করে বিশাল পরিমাণ সামরিক ও মানবিক সাহায্য ঘোষণার দেওয়ার দিনই কিয়েভে হামলা চালানো হলো। ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাশিয়া এ হামলা চালায়। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতবাক হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। কিয়েভে হামলায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
কিয়েভের শেভচেঙ্কো জেলার একটি ২৫ তলা ভবনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। রয়টার্সের প্রতিনিধি দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এ হামলা নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
কিয়েভ দখল করতে না পেরে এপ্রিলের শুরুতে কিয়েভের কাছ থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে জড়ো করে ক্রেমলিন। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের মিত্রদের শীর্ষ কর্মকর্তারা কিয়েভ সফর করছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিবের বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার অস্ত্রের মুখে ইউক্রেনের ঝুঁকির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
গুতেরেস পর্তুগিজ সম্প্রচারমাধ্যম আরটিপিকে বলেছেন, ‘কিয়েভে হামলায় আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। আমি সেখানে সফর করছিলাম বলে নয়, বরং ইউক্রেনীয়দের কাছে এটি পবিত্র নগরী।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মহাসচিব ও সফরসঙ্গীরা যেখানে ছিলেন, তার খুব কাছেই হামলা হয়েছে। তবে হামলাস্থলের কতটা কাছে তাঁদের অবস্থান ছিল, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।
কিয়েভে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রেডিও লিবার্টির এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম ভিরা হাইরিস। তাঁর বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। গতকাল সকালে তাঁর লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউক্রেনে মানবিক ত্রাণসহায়তা ও উদ্ধার করিডর তৈরির জন্য গুতেরেস প্রথম রাশিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি ইউক্রেনে এসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বোরোদিয়াঙ্কা শহরে যান গুতেরেস। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিজের পরিবার এমন পরিস্থিতিতে থাকলে কেমন লাগত, তা অনুভব করতে পারছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেন গুতেরেস।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে আমাদের সতর্ক অবস্থা থেকে সরে আসা উচিত নয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, এমন ভাবাও উচিত নয়।’
তবে গুতেরেস–জেলেনস্কির বৈঠকের মূল বিষয় ছিল মারিউপোল শহরে আজভস্টাল স্টিল কারখানায় আটকে পড়া সেনা ও বেসামরিক লোকজনকে উদ্ধার করা। পুতিন জাতিসংঘ ও রেডক্রসের সঙ্গে আলোচনায় ওই এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আজভস্টাল স্টিল কারখানায় আটকে পড়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে বন্দী করতে চান রুশ সেনারা। পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা, মারিউপোলসহ ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের এই লড়াই দেশটিতে যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করবে।
রুশ সেনারা বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। সেখানে ২০১৪ সাল থেকে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রুশ সেনারা গত মার্চ মাসে দখল করা দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, দনবাস অঞ্চলেও হামলা জোরদার করেছে রুশ সেনারা। তারা সবদিক থেকেই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তীব্র লড়াই চলাকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ নিজেদের ব্যাপক সামরিক শক্তি হারানোর কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, রাশিয়ারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনে হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়ার অভিযোগ, পশ্চিমা সামরিক জোট এক অর্থে তাদের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ করছে। রাশিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কিছু পশ্চিমা কূটনীতিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। একই সঙ্গে পুতিন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের বিষয়ে বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ করলেও তার চড়া মূল্য দিতে হবে।
অন্যদিকে শিগগিরই ইউক্রেন যুদ্ধ থামছে না বলে মন্তব্য করেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর উপমহাসচিব মার্সিয়া জিওআনা। তিনি বলেন, এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারে।
আল–জাজিরা বলছে, যুদ্ধ দ্রুত থামাতে ও সমঝোতার জন্য জি–২০ সম্মেলনে পুতিন ও জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সম্মেলনের সভাপতি দেশ ইন্দোনেশিয়া।