প্রবল বন্যার তোড়ে ভেঙে পড়ছে ঘর, ধেয়ে আসছে ধসে পড়া কাদামাটির স্রোত। এ অবস্থায় সবাই যার যার প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। কিন্তু পৃথিবী মায়েরা একটু অন্যরকমই হন! তারা চরম বিপদের মুহূর্তেও নিজের চেয়ে সন্তানের দিকেই নজর দেন বেশি। সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টায় হাসিমুখে বিসর্জন দেন আপন প্রাণ। এমন ঘটনার নজির হয়তো নতুন নয়। তবে প্রতিটি ঘটনাই নতুন করে বুঝিয়ে দেয়- মায়ের ভালোবাসা কী জিনিস! এই তালিকায় নতুন করে নাম লেখালেন চীনের এক মা
গত বুধবার চীনের বন্যা কবলিত হেনান প্রদেশের ওয়াংজংডিয়ান গ্রামে বন্যা-ভূমিধসে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ওই ধ্বংসস্তূপ আর কাদামাটির নিচে আটকা থেকেও অলৌকিকভাবে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে তিন-চার মাসের ওই শিশুটি। ঝাও নামে এক ব্যক্তি সাউদার্ন মেট্রোপলিস ডেইলিকে বলেন, আমি শিশুটির আওয়াজ শুনতে পাই। আর ওই মুহূর্তেই উদ্ধারকারীরা পৌঁছে বাচ্চাটিকে বাঁচায়। তাকে তার মা উঁচু জায়গায় ছুড়ে ফেলেছিল।
বাচ্চাটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।পরে বৃহস্পতিবার শিশুটির মাকেও খুঁজে পাওয়া যায়, তবে প্রাণহীন অবস্থায়। উদ্ধারকারীরা বেইজিং ইয়ুথ ডেইলকে জানিয়েছেন, তারা যখন ওই নারীর মরদেহ খুঁজে পান, তখন সেটি এমন অবস্থায় ছিল যেন, তিনি কোনো কিছু উপরের দিকে তুলে ধরে রেখেছেন।
ইয়াং নামে এক উদ্ধারকর্মী বলেন, ঠিক ভয়ংকর মুহূর্তটিতেই তিনি (মা) তার সন্তানকে উপরে তুলে ধরেন, এ কারণেই বাচ্চা মেয়েটি বেঁচে গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ওই নারী ও শিশুর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি। গত কয়েকদিন ধরে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের জেরে হেনান প্রদেশে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে অন্তত ৩৩ জন মারা গেছে, নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে দুই লাখেরও বেশি মানুষকে।
বন্যার তোড়ে বড়বড় রাস্তাঘাট যেন নদীতে রূপান্তরিত হয়েছে। গাড়ি, বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপ, এমনকি মানুষও বন্যার প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। প্রাদেশিক রাজধানী ঝেংঝুতে গত মঙ্গলবার একটি সাবওয়ে লাইনে বন্যার পানি ঢুকে অন্তত ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলটিতে শুক্রবারও উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।