ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ২৭০তম দিনে গতকাল ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭শর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। গত রবিবার দিবাগত রাতে এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ কথা জানান।
নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি : এদিকে এক সাক্ষাৎকারে প্রভাবশালী রুশ সিনেটর সেন কনস্ট্যান্টিন কোসাচেভ বলেছেন, ইউক্রেনের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পরই কেবল দেশটির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ সম্ভব। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন সেন কনস্ট্যান্টিন কোসাচেভ। তিনি বলেন, কিয়েভের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে তিনি ভালো কিছু আশা করেন না। তারা তাদের নিজেদের আগের কর্মকাণ্ড ও আদর্শে আটকে আছে। আমার বিশ্বাস, ইউক্রেনে ক্ষমতার পরিবর্তনের পরই সম্ভাব্য স্বাভাবিকীকরণ ঘটতে পারে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক বলেছেন, পশ্চিমারা দেশগুলো ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে এটি হবে এমন একটি পদক্ষেপ- যা আত্মসমর্পণের শামিল। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার অর্থ হবে নিজের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারকারী দেশকে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাদের সে হারিয়েছে। রাশিয়া কিয়েভকে শান্তি আলোচনার জন্য কোনো প্রত্যক্ষ প্রস্তাব দেয়নি বলেও জানান তিনি।
আগুন নিয়ে খেলা : আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, এখনো ঝাপোরিঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রের একটি অংশ রাশিয়ার দখলে। গত শনিবার বিস্ফোরণ হয়েছে সেই অংশেই। বিস্ফোরণের ফলে ওই অংশের কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্ল্যান্টের কিছু যন্ত্রপাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু বর্জ্যরে অংশে কোনো ক্ষতি হয়নি। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, যারাই এ ঘটনার পেছনে থাকে তারা আগুন নিয়ে খেলছে। এখনই এই ধরনের হামলা বন্ধ করা দরকার। যে কোনো দিন এর থেকে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে। পরমাণু রিঅ্যাক্টরের ক্ষতি হলে গোটা এলাকায় তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে।
বস্তুত, এর আগেও একাধিকবার ওই পরমাণু কেন্দ্রে বিস্ফোরণ হয়েছে। দুটি চুল্লি বিস্ফোরণের জন্য বন্ধও রাখতে হয়েছিল। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়ার সেনারা ঢাল হিসেবে ওই পরমাণু কেন্দ্রটি ব্যবহার করছে। তারা ওই কেন্দ্রটিকে নিজেদের ঘাঁটি বানিয়েছে।
আইএইএ ফের জানিয়েছে, পরমাণু কেন্দ্রের চারপাশে একটি সেফটি জোন তৈরি করা দরকার। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কাছে এই প্রস্তাব একাধিকবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশই তাতে সম্পূর্ণ সায় দেয়নি। সর্বশেষ হামলার পর তা দ্রুত করা দরকার বলে আএইএ প্রধান মন্তব্য করেছেন।
রাশিয়ার সামরিক মন্ত্রণালয় এদিনের আক্রমণের জন্য কিয়েভকে দায়ী করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন বারবার পরমাণু কেন্দ্রটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইউক্রেন অবশ্য হামলার দায় নিতে চায়নি। ঘটনার জন্য তারা রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলেছে। তাদের দাবি, বরাবরই রাশিয়া ওই পরমাণু কেন্দ্রের সামনে হামলা চালাচ্ছে। ঝাপোরিঝিয়া ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ এই কেন্দ্রটি থেকে বিতরণ করা হয়। তবে রাশিয়া অভিযান শুরু করার পর ধীরে ধীরে এই কেন্দ্রের উৎপাদন কমেছে। রাশিয়া কেন্দ্রটি দখল করে নিয়েছে।
কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতিকে পুতিনের শুভেচ্ছা : কাজাখস্তানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ রবিবারের নির্বাচনে ৮১.৩১% ভোট পেয়ে পুনরায় জয়ী হওয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান নুরলান আবদিরভ গতকাল সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন।
ক্রিমিয়া রাশিয়ারই থাকবে : ইউক্রেনের কাছে ক্রিমিয়া আক্রমণ করার সম্পদ নেই, অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এই দুঃসাহসিক কাজে কিয়েভকে সাহায্য করবে না। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক ফেডারেশন কাউন্সিলের কমিটির চেয়ারম্যান ভিক্টর বোন্ডারেভ গতকাল সোমবার এ কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া ২০১৪ সালের বসন্তে ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করে। এটি আমাদের অঞ্চল। এর জনগণ আমাদের দেশের সঙ্গে একত্রে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের ফেব্রুয়ারি ২০১৪ এর পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের ঘোষণা তাদের নিজেদের সঙ্গে ফ্লার্ট (ভনিতা) করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি আরো বলেন, ক্রিমিয়া চিরকাল রাশিয়ার সঙ্গে থাকবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের প্রধান আন্দ্রে ইয়ারমাক এর আগে ক্রিমিয়ায় একটি আসন্ন হামলার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তা কবে থেকে শুরু হতে পারে তা উল্লেখ করেননি। শনিবার, ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ভøাদিমির গ্যাভ্রিলভ স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইউক্রেনীয় সেনারা ডিসেম্বরের মধ্যে ক্রিমিয়ায় থাকবে এবং আগামী বসন্তের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হবে।
ন্যাটোর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া : ন্যাটো কর্মকর্তাদের প্রতি ইউক্রেনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (এলপিআর) গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে স্বাতোভো এবং ক্রেমেনায়া শহরের কাছাকাছি অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রমাণ রয়েছে। এলপিআর পিপলস মিলিশিয়া অফিসার আন্দ্রে মারাচকো গতকাল বলেছেন, ন্যাটোর ঊর্ধ্বতনদের কাছে যখন তাদের দৈনিক বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয়, তখন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হন।
ইউক্রেন কি যুদ্ধাপরাধ করছে : ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটসের চিকিৎসাবিষয়ক উপদেষ্টা রোহিণী হার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোনো যোদ্ধা যদি তার অস্ত্র সমর্পণ করেন অথবা তার কাছে আত্মরক্ষা করার মতো কোনো অবলম্বন না থাকে, তিনি আত্মসমর্পণকারী বলে বিবেচিত হন, তাহলে তাকে হত্যা কিংবা আঘাত করাটা আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাত আইনের লঙ্ঘন। ইউক্রেনের সৈন্যরা আত্মসমর্পণকারী রুশ সৈন্যদের সঙ্গে সেই আচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমকে