বুধবার করোনোয় দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে প্রাণঘাতী এ রোগে এই দিন মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে ছিল ব্রাজিল।
বৈশ্বিক করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ রোগে প্রতিদিনের আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যা বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়া, মঙ্গলবার থেকে বুধবার- ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে আরও বেড়েছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার।
ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭১১ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৫৩৯ জনের।
আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্বে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ২৭০ জন এবং মারা গিয়েছিলেন ৮ হাজার ৮২৪ জন।
অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪২ হাজার ৪৪১ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৮৫ জন।
বুধবার করোনায় বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে এই দিন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৮ জন।
দৈনিক মৃত্যুর তালিকায় ব্রাজিলের পরেই অবস্থান করছে করোনার এশীয় উপকেন্দ্র (এপিসেন্টার) হিসেবে সদ্য পরিচিতি পাওয়া দেশ ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে বুধবার করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন।
এদিকে, গত বছর মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক মাস ধরে অনেক কমে এসেছিল সংক্রমণ ও মৃতের হার। কিন্তু সম্প্রতি আবার দেশটিতে বাড়ছে প্রাণঘাতী এ রোগে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৫২৫ জন এবং এ রোগে মারা গেছেন ৪১৬ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক সংক্রমণের হিসেবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে বুধবার বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে ব্রাজিলের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এদিন দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৮৪ জন।
করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। বুধবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ১০৪ জন এবং মারা গেছেন ৭৩ জন।
যুক্তরাজ্যের পরেই এই তালিকায় অবস্থান করছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে থাকা দেশ ভারত। বুধবার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৬৯৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫১০ জনের।
৩৩ হাজার ৭৭২ জন নতুন আক্রান্ত রোগী নিয়ে তালিকায় ৫ম স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া।
এছাড়া বুধবার বিশ্বের আরও যেসব দেশে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর ঊর্ধ্বমূখি প্রবণতা দেখা গেছে সে দেশসমূহ হলো- স্পেন (নতুন আক্রান্ত ৩০ হাজার ৫৮৭, মৃত্যু ১৮), ইরান (নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ৩৩৯, মৃত্যু ২১৩), রাশিয়া (নতুন আক্রান্ত ২৩ হাজার ২৩ হাজার ৭০৪, মৃত্যু ৭৮৩), ফ্রান্স (নতুন আক্রান্ত ২১ হাজার ৫৩৯, মৃত্যু ৩৯) ও দক্ষিণ আফ্রিকা (নতুন আক্রান্ত ১৬ হাজার ২৪০, মৃত্যু ৫১৬)।
দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে বেড়েছে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা। ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের চার্ট বলছে, বুধবার বিশ্বে মোট সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৯ জন।
সক্রিয় এই রোগীদের মধ্যে করোনার মৃদু উপসর্গ বহন করছেন ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৫ জন এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন ৮২ হাজার ১৫৪ জন।
আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্বে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৮ জন।
তবে সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়লেও ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে বেড়েছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা লোকজনের সংখ্যা। বুধবার বিশ্বে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৬৪ জন। আগের দিন মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৯ জন।
২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৯ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫ জন, মারা গেছেন মোট ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৫৮২ জন।
অন্যদিকে, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৯৬ হাজার ৪ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে সাধারণভাবে এই ভাইরাসটি পরিচিতি পায় নতুন বা নভেল করোনাভাইরাস নামে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছে উহানেই। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তখন জানানো হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাওয়ায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে ওই বছর ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।