প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তৈরি করা টিকাগুলো কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে এমনটা বলা যাচ্ছে না। গবেষকদের বের করা টিকাগুলোর প্রত্যেকটিরই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত ফাইজার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়, এমন সংবাদ গতকালই প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে ক্রমেই খারাপের দিকেই যাচ্ছে। টিকার এমন জটিলতার মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের কভিড-১৯ টিকার মিশ্রণ দিয়ে নতুন একটি টিকা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে চীন।
সম্প্রতি চীনের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একজন বিভিন্ন টিকার মিশ্রণের বিষয়টি একটি সেমিনারে উল্লেখ করেন। চায়না মিডিয়া দ্য পেপারে দেশটির সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান গাও ফুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, বিবদমান টিকাগুলোর কার্যকারিতার হার অতটা উচ্চ না হওয়ায় কর্র্তৃপক্ষ বিকল্প ভাবনা ভাবছে। গাও ফুর এ মন্তব্যের ফলে বোঝা যাচ্ছে চীনের তৈরি করা টিকাগুলোও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তেমন ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এর আগে চীনের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তাকে তাদের উদ্ভাবিত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। উল্টো চীনের করোনা পলিসি ও টিকা নিয়ে সমালোচনা করায় অনেককে রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণের শিকার হতে দেখা গেছে।
গত বছর টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে চীন ১৬১ মিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদন করেছে। এ টিকাগুলোর অধিকাংশই দেশটি নিজেদের জনগণের ওপর প্রয়োগ করেছে। দেশটি আশা করছে আগামী জুনের মধ্যে তাদের ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন জনগোষ্ঠীকে দুই ডোজ টিকা দিতে পারবে। যদিও চীনে এখন করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। বিভিন্ন শহরগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
চীনা কর্মকর্তা গাও এর আগেও একবার সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘কভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকানোর একমাত্র ও অন্যতম উপায় টিকা।’ কিন্তু বর্তমানে টিকার যে বাস্তবতা তাতে গাওয়ের ওই বক্তব্য যে ঠিক নয় তাই বোঝা যাচ্ছে। তারপরও চীন দেশবাসীকে ত্রুটিযুক্ত এ টিকা দেওয়ার প্রকল্প চালিয়ে যাবে। গত শনিবার চেংদুতে হওয়া সম্মেলনে গাও আরও বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেহেতু টিকাগুলো উৎপাদিত হচ্ছে, ফলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিকল্প পরিকল্পনা প্রয়োজন।
বিভিন্ন টিকার মিশ্রণ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা কাজ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত এমন টিকার মিশ্রণের ফলাফল কী হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি কোনোপক্ষ। তবে বিজ্ঞানীরা টিকার মিশ্রণ নিয়ে কাজ করলেও প্রচালিত পন্থায় টিকা গবেষণা এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মডার্না মূলত একই প্রযুক্তি (এমআরএনএ) ব্যবহার করে টিকা তৈরি করছে।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৩ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ১১২। এর মধ্যে ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।