Image default
আন্তর্জাতিক

আড়াই লাখ টাকার ফল খেয়ে কালো টাকা সাদা করতেন পার্থ

পার্থ চট্টোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই দাবি করেছেন যে উদ্ধার হওয়া বিপুল টাকা তার নয়। এবার মুখ খুললেন বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে ইডি ৫০ কোটি নগদ উদ্ধার করেছে। কেন এত টাকা ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে? কীভাবে এই টাকা এল? তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জোকার ইএসআই হাসপাতালে ঢোকার সময় অর্পিতা বললেন, ‘এই টাকা আমার নয়। আমার অনুপস্থিতিতে এবং আমার অজান্তে ফ্ল্যাটে টাকা ঢোকানো হয়েছে।’

এই প্রথম নয়। এর আগেও অর্পিতা দাবি করেছিলেন যে, তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ৫০ কোটি টাকা তাঁর নয়। ফ্ল্যাটের যে ঘরগুলি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে সেখানে নাকি তিনি প্রবেশই করতেন না।

নতুন করে অর্পিতার দাবি ঘিরে শোরগোল পড়েছে। তার ফ্ল্যাটে বিপুল অর্থ মজুত হল, কিন্তু তিনিই জানেন না। তাহলে কে বা কারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত? জোকা ইএসআইতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের তা স্পষ্ট করেননি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।

অর্পিতার এ দিনের দাবি ঘিরে রাজনৈতিক তর্কও তুঙ্গে। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দুর্নীতিতে দাবার বোড়ে অর্পিতা। তাহলে কারা এর জন্য দায়ী? পার্থবাবুর দাবি তারও ওই টাকা নয়। আসলে ইডি তদন্ত করতেই সব ফাঁস হচ্ছে। এখন দোষ ঢাকতে নানা দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এতে কোনও লাভ নেই।’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘এখন বলে কোনও লাভ নেই। আইন আইনের পথে চলবে। আগে বললেন না কেন সেটাই প্রশ্ন। দুর্নীতি করলে তৃণমূল বরদাস্ত করবে না।’

গত ২২ জুলাই রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত তল্লাশিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর দিন কয়েক বাদে বাদে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে মেলে ২৮ কোটি টাকা। এছাড়াও সোনা, রূপো ও বহু নথি উদ্ধার করেছে ইডি গোয়েন্দারা। পেশায় মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতার কাছে কোথা থেকে বিপুল এই অর্থ এলো? তা নিয়েই প্রশ্ন।

অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতার

ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার পাহাড়ের নেপথ্যে অজানা রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে যার উত্তর মিলতে পারে অর্পিতার ডায়েরি থেকে। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ৩টি ডায়েরি পেয়েছে ইডি।

ইডি সূত্রে খবর, ২টি ডায়েরি থেকে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। কোটি কোটি টাকার হিসেব রয়েছে ওই ডায়েরিগুলিতে। ডায়েরির তথ্য তদন্তকে নতুন মোড় দিতে পারে মনে করা হচ্ছে।

টাকা কে নিয়ে আসত, কোথা থেকে আসত, সে সবের উল্লেখ রয়েছে ডায়েরিগুলিতে। শুধু টাকা অর্পিতার ফ্ল্যাটে আসত না, সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়েও যাওয়া হত। ওই ডায়েরির লেখা অর্পিতার কী না, তা নিশ্চিত করতে হাতের লেখা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে।

ইডি সূত্রে খবর, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে একটি কালো রঙের ডায়েরি থেকে। ওই ডায়েরিটির ওপরে লেখা রয়েছে, ‘‌ডিপার্টমেন্ট অফ হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড স্কুল এডুকেশন, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।’‌ ডায়েরিটির ৪০টি পাতা টাকার হিসেবে-নিকেশ ও তথ্য লিখে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট থেকে ইডির বাজেয়াপ্ত করা জিনিসের তালিকায় এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ওই কালো ডায়েরি। এছাড়াও মিলেছে অন্য একটি ডায়েরি ও একটি ছোট ডায়েরি। যাতে লেখা বিভিন্ন তথ্য, ফোন নম্বর ইডিকে সঠিক তদন্তে পথ দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

খাদ্যরসিক পার্থর ফলাহারেও যে দুর্নীতির গন্ধ থাকবে তা বলাও নাকি কঠিন নয়। অন্তত তেমন গন্ধ পাচ্ছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সূত্রে খবর, পার্থবাবু মাসে ফলের জন্য যে টাকা খরচ করতেন তা অস্বাভাবিক। জানা যাচ্ছে, দৈনিক সাত থেকে আট হাজার টাকার ফল আনতে দিতেন পার্থবাবু। তা আসত নিউ মার্কেট থেকে।

ইডি কর্তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মানুষ নিজে খেয়ে, লোককে খাইয়ে কতটাকার ফল খেতে পারেন? এমনতো নয় যে পার্থ শুধু ফল খেয়েই দিন কাটান! তাহলে কী?

কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির সন্দেহ, দুর্নীতির টাকা ওই ভাবে সাদা করতেন পার্থ। কম পয়সার ফল কিনে বেশি বিল করাতেন। জানা যাচ্ছে, পার্থবাবুর বাড়িতে দৈনিক ফল পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি একজনের মারফতই হতো। নিউ মার্কেটের যে যে দোকান থেকে ফল আসত সেই সেই দোকানগুলির মালিকদের এবার ইডি জেরা করতে পারে বলে খবর।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পার্থ ও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে জোকা ইএসআই হাসপাতালে। আগামীকাল বুধবার দুজনকেই আদালতে তোলার কথা। ইডি ফের দু’জনকে আরও কিছুদিনের জন্য হেফাজতে চাইতে পারে বলে খবর। অর্পিতার নামে যেখানে যেখানে সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি সেখানে তাঁকে নিয়ে গিয়ে আরও কিছু তথ্য জানতে জানতে চান তদন্তকারীরা। সেইসব জমি বা বাড়ি আগে যাদের ছিল তাঁদের থেকে যখন অর্পিতা কিনেছিলেন তা যথাযথ ভাবে হয়েছিল কিনা সে ব্যাপারেও স্পষ্ট ছবি পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

Source link

Related posts

করোনায় আরও ১ হাজার ১৮১ জনের মৃত্যু

News Desk

Murder case at Pune: দোকানের মালকিনকে পুড়িয়ে মারতে গিয়ে মৃত সহকর্মী নিজেও, আহত এক

News Desk

দ. এশিয়ায় টিকার সরবরাহ আগামী সপ্তাহে শুরু হবে: অ্যাস্ট্রাজেনেকা

News Desk

Leave a Comment