ফিচার ডেস্ক
“শেখ মুজিবের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
মুজিব ভাইয়ের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
বাঁশের লাঠি তৈরি করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।
স্বাধীন করো স্বাধীন করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।”
মুহুর্মুহু উচ্চারিত এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনাকীর্ণ মঞ্চে আরোহণ করেন। ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে মাত্র ১৮ মিনিটের সংক্ষিপ্ত পরিসরের সেদিনকার ভাষণের প্রতিটি বাক্য, এমনকি প্রতিটি শব্দই ছিল ব্যাপক অর্থবোধক ও তাৎপর্যপূর্ণ। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে মূলত স্বাধীনতার ঘোষণাই দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা এবং শব্দপ্রয়োগে তার বিচক্ষণতার প্রতিফলন ঘটেছিল সেদিনকার ভাষণে। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি শুধু তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসের একটি শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এ কারণেই বিশ্বের সেরা দশ ভাষণের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধবাদীদের অনেকেই বলে থাকেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেননি। যারা এসব বলেন তারা শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতার খাতিরেই এসব কথা বলে থাকেন। কারণ তারা ভুলে যান সেদিনকার সার্বিক পরিস্থিতির কথা। সেদিন যে অখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতরে থেকেই তিনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন সে কথা ভুলে যান এসব সমালোচক। এমনকি এ কথাটিও তারা সুকৌশলে এড়িয়ে যান যে সেদিন বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মুক্তির সংগ্রামের কথা যখন বলা হয়, স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা যখন বলা হয়, তখন কারও বুঝতে বাকি থাকে না, এই সংগ্রামের পরিণতি বাঙালির মুক্তি, এই সংগ্রামের পরিণতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণ পর্যালোচনার আগে সেদিন কোন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তিনি এই ভাষণ দিয়েছিলেন তা কিছুটা পর্যালোচনার দাবি রাখে। ১৯৭০-এর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে। ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসনেই জয় পায় আওয়ামী লীগ। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। প্রাদেশিক পরিষদের ৭টি এবং জাতীয় পরিষদের ১০টি মহিলা আসনেও আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। সর্বমোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অপরদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মাত্র ৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের হাতে তখন পাকিস্তান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো এবং পাকিস্তানি সামরিক চক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তাস্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১লা মার্চ আকস্মিক এক বেতার ঘোষণায় ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সেদিন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে বাংলাদেশ। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন অবস্থা ধারণ করে যে, জনগণের দাবি ৬-দফা থেকে সরে এসে এক দফায় মিলিত হয়। তারই প্রতিফলন ঘটে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুরুর পূর্ব মুহূর্তের স্লোগানে।
আপাতদৃষ্টিতে এ ঘটনা পরস্পরবিরোধী মনে হতে পারে যে, শেখ মুজিব যখন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছিলেন তখন তার অনুসারী ছাত্র নেতৃত্ব সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। আসলে বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা আর ছাত্রদের এক দফা একে অপরের পরিপূরক ছিল। বঙ্গবন্ধু তার নিজের অবস্থান থেকে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারছিলেন না, সে জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন ছিল ছাত্রদেরকে তার সহায়ক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে। অন্যদিকে ছাত্রদেরও বঙ্গবন্ধুকে প্রয়োজন ছিল তাদের ছত্রচ্ছায়া রূপে। ছাত্র নেতৃত্বের কাছ থেকে তিনি গর্বের সাথে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে বাঙালি জাতীয়তাবাদী উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। মূলত তারই ইঙ্গিতে ছাত্ররা স্বাধীন বাংলাদেশের একটি পতাকা তৈরি করে এবং ৭১ সালের ২রা মার্চ সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করে। ছাত্ররা সে পতাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিলে তিনি সেটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে উত্তোলন করেন। এ ছাড়া একটি জাতীয় সংগীতও নির্বাচন করা হয়; বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’। ৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দেবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তার এ ঘোষণা শোনার পর নেতাকর্মীরা আরও আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তার আগে ৪ঠা মার্চ থেকে ৬ই মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান তিনি। পুরো জাতি তার এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কারণ সেদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন এদেশবাসীর একমাত্র নেতা। তার নির্দেশে সরকারের সব সিদ্ধান্ত এবং আদেশ তারা অবলীলায় উপেক্ষা করতে থাকে।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় কী ধরনের বক্তব্য দেওয়া হবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়ে আগের দিন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে একপক্ষ চান বঙ্গবন্ধু যেন জনসভায় সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। ছাত্রলীগও চাচ্ছিল সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা। অন্যপক্ষ স্বাধীনতার সরাসরি ঘোষণা পরিহার করে আলোচনার পথ খোলা রাখার পক্ষে মত প্রদান করে। পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সদর দপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে এই মেসেজ দেওয়া হয় যে, ৭ই মার্চ যেন কোনোভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণা না করা হয়। অন্যদিকে বেগম ফজিলাতুন নেছা সেদিন বলেছিলেন, মনে রেখো তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলির নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায় সেটা দেখা তোমার কাজ। কাজেই তোমার মনে যা আসবে তাই তুমি বলবা, আর কারও কোনো পরামর্শ দরকার নাই। তুমি মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যেটা আসবে, সেটা তুমি বলবা। বঙ্গবন্ধু সেদিন তা-ই করেছিলেন। তার মনে যা এসেছিল তা-ই তিনি বলেছিলেন সেদিন।
পাকিস্তানিদের কঠিন মনোভাব প্রকাশের জন্য সেদিন জনসভাকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাজপথে কামান বসানো হয়। প্রস্তুত রাখা হয় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও। অন্যদিকে রেসকোর্সে উপস্থিত দশ লাখ লোকই শুধু নয়, সারা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তার দিকে তাকিয়ে আছে কী ঘোষণা দেন তাদের মহান নেতা। তাদের আগামী দিনের জন্য কী নির্দশনা দেন বঙ্গবন্ধু।
বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার একমাত্র ভরসাস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঞ্চে উঠে প্রথমে সংক্ষেপে আন্দোলনের পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ এখানে বাংলাদেশের মানুষের শোষণ-বঞ্চনা এবং রক্তদানের কথা উল্লেখ করে মূলত বিশ্ববাসীর কাছেও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্ট হয়েছে। এরপর বাঙালির অধিকারের কথা বলা হয়েছে, বলা হয়েছে তাদের মুক্তির কথা। কারণ দেশের মানুষ কী চায় তা বঙ্গবন্ধুর মতো আর কেউ জানতেন না, অনুধাবন করতেন না। আর এই মুক্তি মানেই তো স্বাধীনতা। এরপরই তিনি বলেন, ‘কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ২৩ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’
বঙ্গবন্ধু আসন্ন আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অল্প কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির প্রতি পাকিস্তানিদের সমস্ত অনিয়ম-অত্যাচারের কাহিনি স্পষ্ট করে তোলেন। তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে ১০ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন আমরা মেনে নিলাম। তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসব। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব, এমনকি আমি এও পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব। জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরও আলোচনা হবে। তারপরে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, তাদের সঙ্গে আলাপ করলাম আপনারা আসুন, বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরি করব। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসে তাহলে কসাইখানা হবে অ্যাসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলা দেওয়া হবে। যদি কেউ অ্যাসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলি চলবে। তারপরে হঠাৎ ১ তারিখে অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো। ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে আমি যাব। ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্ধ করে দেয়ার পরে এদেশের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল।’ এই অংশটুকু বর্ণনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করে দেন যে এরপরে একটি জাতির আন্দোলন করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। এরপরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য স্থির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। কী পেলাম আমরা? আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী-নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে, তার বুকের ওপরে হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু, আমরা বাঙ্গালীরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’
রেসকোর্সে উপস্থিত দশ লাখ লোকের মুহুর্মুহু ধিক্কারধ্বনির মধ্যে তিনি বলতে থাকেন, ‘টেলিফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের ওপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি নাকি স্বীকার করেছি যে ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স হবে। আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি, কিসের রাউন্ড টেবিল, কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাদের সঙ্গে বসব? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের ওপরে দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভায়েরা আমার, ২৫ তারিখ অ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি, ওই শহীদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছে, আমার দাবি মানতে হবে। প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ উচ্চ বা নিচু নিনাদে, কোনোটি বজ্রকণ্ঠে এমনভাবে ঘোষণা হতে থাকে যে কোনো আবৃত্তিশিল্পী কঠোর অনুশীলনেও এমন নিখুঁতভাবে বক্তব্যটি দিতে পারবেন না। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু তার স্বতঃপ্রবৃত্ততার কারণে, হৃদয়ের গভীর থেকে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের কারণে। এরপর তিনি আন্দোলন প্রসঙ্গে অত্যন্ত কঠোরভাবে বলেন, ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ যেহেতু বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণমানুষের নেতা, তাই তার চিন্তা থেকে দেশের প্রতিটি মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা বাদ যায় না। তিনি ঘোষণা করেন, ‘গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে সেইজন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, ঘোড়াগাড়ি, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে- শুধু, সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।’
মূলত বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার মাধ্যমে ওই দিন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর শাসন কায়েম হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন।’ বঙ্গবন্ধু জানতেন বাংলাদেশের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতেই হবে। তাই তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের আদেশ দেন সেদিন। এ ছাড়া পাকিস্তানিরা যে বাঙালির ওপর সামরিক আক্রমণ চালাবে, দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু তা খুব সহজেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এমনকি তিনি এটাও আঁচ করতে পারেন যে তাকে হয় হত্যা করা হবে, নয় বন্দি করা হবে। তাই তিনি বলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।’ এ কথার মাধ্যমে তিনি মূলত গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনাই দিয়েছিলেন। তার এই ঘোষণাই পুরো জাতিকে বলে দেয়, আগামীতে তাদের কী করণীয়। তারা বুঝে ফেলে মুক্তিযুদ্ধ আসন্ন এবং সে পরিস্থিতিতে তাদের কী করতে হবে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনে বলেন, ‘তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।’ এরপর তিনি সরাসরি আদেশ দেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে, খাজনা ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।’ এ সময় তিনি সবাইকে সাবধান করে দেন এই বলে, ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙ্গালী-ননবাঙ্গালী যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর, আমাদের যেন বদনাম না হয়।’ এই ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাই বলে দেয় তিনি কতটা দূরদর্শী ছিলেন। পরিস্থিতি তিনি আগাম কতটা আঁচ করতে পারতেন।
বাঙালির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যদি এদেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙ্গালীরা বুঝেসুঝে কাজ করবেন।’ এই ‘বুঝেশুনে কাজ করবেন’ শব্দগুলোর মাধ্যমে তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কী করতে হবে তা সবার উপরে ছেড়ে দিলেও এরপরের বাক্যেই তিনি এটাকে স্পষ্ট করে দেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ মূলত এর পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্দেশের আর কিছু বাকি থাকে না। সবশেষে তিনি এই বলে বক্তব্য শেষ করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
এখানে একটি বিষয় খেয়াল করার মতো। তিনি মুক্তির সংগ্রামের কথা বলেছেন, একই সঙ্গে স্বাধীনতার সংগ্রামের কথাও বলেছেন। কিন্তু তিনি মুক্তির সংগ্রামের কথাটি আগে উল্লেখ করেছেন, এবং স্বাধীনতা শব্দটি পরে। কারণ তিনি জানতেন, যদি আগে স্বাধীনতার সংগ্রাম উল্লেখ করেন, তবে জনগণ উল্লাসে ফেটে পড়বে, যার জন্য পরবর্তী মুক্তির সংগ্রাম কথাটি আর শোনা যাবে না। কিন্তু তিনি জোর দিচ্ছেন দুটির ওপরই। যেমনি মুক্তির, তেমনি স্বাধীনতার।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু কেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে তিনি নিজেই দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের ১৮ই জানুয়ারি তিনি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিশ্বকে তাদের আমি এটা বলার সুযোগ দিতে চাইনি যে, মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আঘাত হানা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি চাইছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক এবং জনগণ তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকুক।’
ইতিহাস প্রমাণ করে, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করে সঠিক কাজটিই করেছেন। এটি করলে তাকে দেশদ্রোহী বলে বিচারের সম্মুখীন করা পাকিস্তানিদের জন্য সহজ হতো। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও একটি যুগান্তকারী দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার সমার্থ। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে তার ৭ই মার্চের ভাষণে।’
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন মানব জাতির পদপ্রদর্শক। তার সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয় সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে।’ কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’ মার্শাল টিটো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এই ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রমাণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানিদের কোনো রকম বৈধতা নেই। পূর্ব পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশ।’ দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল।’ গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরূক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’
একই সঙ্গে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের অনেক বিশ্লেষণ করেছে। নিউজউইক পত্রিকা লিখেছে, ‘৭ মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি পান।’ টাইম ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলও ছিল।’ বিবিসি বলেছে, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে জন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ অ্যাড্রেসের সঙ্গে তুলনীয় এই ভাষণটি। যেখানে তিনি একাধারে বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক।’ রয়টার্স লিখেছে, ‘বিশ্বের ইতিহাসে এ রকম আর একটি পরিকল্পিত এবং বিন্যস্ত ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একই সঙ্গে বিপ্লবের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’ এএফপি বলেছে, ‘৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তিনি বাঙালিকে যুদ্ধের নির্দেশনাও দিয়ে যান। ওই দিনই আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’ দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক ঘোষণা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে ওই ভাষণেরই আলোকে।’ আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা হয়, ‘উত্তাল জনস্রোতের মাঝে এ রকম একটি ভারসাম্যপূর্ণ, দিকনির্দেশনামূলক ভাষণই শেখ মুজিবকে অনন্য এক ভাবমূর্তি দিয়েছে। দিয়েছে অনন্য মহান নেতার মর্যাদা।’
এসব অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলোকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে সংরক্ষণ করে থাকে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন এই ভাষণ স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে, তেমনি পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন বিশ্ব ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষিত থাকবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই