Image default
ইতিহাস

ম্যারাথন রেস এর ইতিহাস

বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, মানুষের শরীর দৌড়ানোর জন্য উপযুক্ত নয়। সর্বোপরি, মানুষ দু’পেয়ে প্রাণী; চিতা, বনবিড়াল, হরিণ ছাড়াও প্রাণী জগতের অন্যান্য দ্রুতগতি সম্পন্ন জন্তুদের মতো চার পায়ে দৌড়ানোর সুবিধা মানুষের নেই। তাছাড়া, সময়ের সাথে সাথে মানবজাতি বেশ বিকশিত হয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় অগ্রসরের পরিমাণ এত বেশি যে, দ্রুত হাঁটা-চলার পরিমাণ বেশ কম বললেই চলে। এছাড়াও, শিকারের অস্ত্রশস্ত্রের কল্যাণে মানুষ প্রয়োজনে খুব সহজেই দ্রুতগতি সম্পন্ন শিকারের পিছু নিতে পারে। লম্বা দূরত্বের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেন, অটোমোবাইল, এরোপ্লেন সহ নানা ধরনের যান-বাহনের সুবিধা তো আছেই। এমনকি, দুই ঘর দূরত্বের প্রতিবেশী, সহপাঠী, সহকর্মীরাও প্রয়োজনে একে অপরের কাছে না গিয়ে ফোন-কল, টেক্সট-মেসেজ, ই-মেইল সহ নানা সুবিধার মাধ্যমে কথাবার্তা সেরে নেয় খুব সহজেই।

তবে পৃথিবীর পুরো জনসংখ্যার একটি অংশ উপরোক্ত মতবাদকে ভুল প্রমাণ করে লম্বা দূরত্বের দৌড়ে নিজেদের সম্পৃক্ততাকে এতটাই উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে, ৪২.২ কিলোমিটার টানা দৌড়ানোর মতো যন্ত্রণাদায়ক কাজটি তারা করে যাচ্ছে আনন্দে সাথে। কেউ কেউ আবার এই দূরত্ব টপকিয়ে নাম লেখাচ্ছে পঞ্চাশ কিলোমিটারের ঘরে, কেউ আবার একশত কিলোমিটার ছাড়িয়ে একশত মাইল, এমনকি আটচল্লিশ ঘণ্টা থেকে ছয়দিনের দৌড়ে অংশগ্রহণ করে পাড়ি দিচ্ছে শত শত মাইল। মানুষের মাঝে এই প্রাণোচ্ছল, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সহজেই ভেঙে না পড়া অংশটিই পৃথিবীব্যাপী ‘ম্যারাথনার’ হিসেবে এবং দূরপাল্লার দৌড়ের এই ইভেন্টটি ‘ম্যারাথন’ হিসেবে পরিচিত।

ম্যারাথনের ইতিহাস
ছবি : roar.media

কিন্তু কীভাবে এলো আজকের ম্যারাথন? ঘটনা, দুর্ঘটনা সহ ম্যারাথনের বিভিন্ন জানা-অজানা দিক নিয়েই আজকের লেখা।

ম্যারাথন কি

ম্যারাথন (ইংরেজি: Marathon) দূরপাল্লার দৌড় খেলাবিশেষ। দাপ্তরিকভাবে এ দৌড়ের দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২.১৯৫ কিলোমিটার বা 26মাইল ৩৮৫ গজ। সচরাচর খেলা পরিচালনায় রাস্তা ব্যবহার করা হয় বিধায় এটি রোড রেস বা রাস্তায় দৌড় খেলা নামে পরিচিত। প্রাচীন গ্রীক সৈনিক ফেইডিপ্পিডেস কর্তৃক ম্যারাথনের যুদ্ধ জয়ের সংবাদ বহন করে দৌড়ে এথেন্স নগরে নিয়ে এসেছিলেন। ম্যারাথনের যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ দৌড়ের নামকরণ করা হয় ম্যারাথন দৌড়।

১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় ম্যারাথন খেলা শুরু থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু ১৯২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ খেলার সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না। প্রতি বছর বিশ্বে গড়ে পাঁচ শতাধিক ম্যারাথন ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ খেলায় বিপুলসংখ্যক ক্রীড়াপ্রেমী সৌখিন দৌড়বিদগণ অংশ নিয়ে থাকেন। ক্ষুদ্রতম ম্যারাথন হিসেবে বিবেচিত স্ট্যানলী ম্যারাথনে শুধুমাত্র কয়েক ডজন প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেন। কিন্তু বৃহৎ পরিসরের ম্যারাথনে দশ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করতে পারেন।

ম্যারাথনের ইতিহাস

গ্রীক বার্তাবাহক ফেইডিপ্পিডেস নামীয় ব্যক্তির সৌজন্যে ম্যারাথন নামটি এসেছে। লৌকিক উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে ম্যারাথনের যুদ্ধের ময়দান থেকে এথেন্সে প্রেরণ করা হয়েছিল। পারস্যদের পরাজয়ের সংবাদ ঘোষণা করার জন্যই যুদ্ধরত অবস্থা থেকে তাকে প্রেরণ করা হয়। খ্রীষ্ট-পূর্ব ৪৯০ সালের আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে ম্যারাথনের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি পুরোটা দূরত্ব এক দৌড়ে, কোথাও নামে থেকে শুধুমাত্র νικωμεν’ (নিকোমেন), আমরা জয়ী হয়েছি বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। এথেন্সবাসীর কাছে সংবাদটি প্রদান করেই ভূপাতিত হন ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

ম্যারাথনের ইতিহাস
ছবি : roar.media

কিন্তু পৌরাণিক উপাখ্যানে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গ্রীকো-পার্সিয়ান যুদ্ধের প্রধান উৎসস্থলরূপে গ্রীক ইতিহাসবিদ হিরোডোটাস ফেইডিপ্পিডেসকে এথেন্স থেকে স্পার্টায় দৌড়ে বার্তা প্রদানের কথা বলেছেন। সেখানে তিনি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার কথা তুলে ধরে ২৪০ কিলোমিটার বা ১৫০ মাইলব্যাপী রাস্তা অতিক্রমের ঘটনা বর্ণনা করেন।

সেই কালে যুদ্ধ চলাকালে গ্রিক সৈন্যরা পদাতিক দ্রুতগামী বার্তাবাহকদের উপর নির্ভর করতো। ঐ সমস্ত বার্তাবাহকেরা দুর্গম এলাকা, পাহাড়ি ভূখণ্ডগুলোতে বার্তা আদান-প্রদান করা সহ কূটনৈতিকের ভূমিকা পালনে দক্ষ ছিল। জেফ গ্যালোওয়ের মতে, তারা শুধু বার্তা আদান-প্রদানই করতো না, সাথে সাথে মূল পয়েন্টগুলোর উপর গুরুত্ব দিয়ে পুরো বার্তাটি প্রাপকের কাছে ব্যাখ্যা করা, প্রত্যুত্তর দেওয়ার সময় প্রাপকের চেহারারা অভিব্যক্তি, কণ্ঠের আবেগের বর্ণনাও গ্রিক সেনাপ্রধানদের কাছে পৌঁছে দিতো।

ম্যারাথন রেস এর ইতিহাস
ছবি : iffleyroad.com

সময়টা খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ সাল। পার্সিয়ানদের সাথে গ্রিকদের যুদ্ধ চলাকালে ম্যারাথন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত দুর্গ থেকে পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য গ্রিসের দক্ষিণে অবস্থিত স্পার্টার দিকে বার্তাবাহক হিসেবে ফেইডিপ্পিডেস(Pheidippides)কে পাঠানো হয়। সে সময় স্পার্টা ডোরীয় গ্রিক সামরিক সাম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পুরো দেড় দিন টানা দৌড়ে ফেইডিপ্পিডেস স্পার্টায় পৌঁছলেও স্পার্টানদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য না পেয়ে হতাশার সাথে ম্যারাথনে ফিরে আসেন। এসেই শুনতে পান, বিশাল পার্সিয়ান সৈন্যদলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ম্যারাথনের যোদ্ধারা বড় জয় নিশ্চিত করেছে। কিংবদন্তি অনুসারে, এ সংবাদ এথেন্সে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফেইডিপ্পিডেসকে আবার রাস্তায় নামতে হয়। তিনি প্রায় ২৬ মাইল পুরোদমে দৌড়ে শহরের কেন্দ্রে পৌঁছান এবং “নানিকাক্যাম্যান” বা “আমরা বিজয়ী হয়েছি” বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

১৮৯৬ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত আধুনিক সময়ের প্রথম অলিম্পিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম অ্যাথলেটিক ইভেন্ট হিসেবে ম্যারাথনের যাত্রা শুরু হয়। অলিম্পিকের মূল পরিকল্পনাকারী ব্যারন পিয়েরে ডি কুবার্তো হলেও, বার্তাবাহক ফেইডিপ্পিডেসের স্মরণে অলিম্পিকের মূল ক্রীড়াগুলোর অংশ হিসেবে ম্যারাথন থেকে এথেন্স শহরের কেন্দ্রে দূরপাল্লার দৌড়ের রেসটি অলিম্পিকের সহ-সংগঠক মিশেল ব্রেআল যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। ম্যারাথন এবং এথেন্স, এই দুই শহরের কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব যদিও প্রায় ত্রিশ মাইল, ফেইডিপ্পিডেসের সেই কিংবদন্তিতুল্য ট্র্যাকটি ছিল একুশ থেকে ছাব্বিশ মাইলের মতো। সেই বিবেচনায় অলিম্পিকের কর্তৃপক্ষ প্রথম ম্যারাথনের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ধার্য করেন, যা প্রায় ২৪.৮৫ মাইলের সমান।

নিজেদের দেশে নিজেদের আত্মত্যাগী পূর্বপুরুষের স্মরণে শুরু হওয়া ম্যারাথনের প্রথম আসরে নিজেদের অংশগ্রহণকারীদের প্রথম অবস্থান নিশ্চিত করার ব্যাপারে গ্রিকরা ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী দলটি বেশ যত্ন সহকারে বাছাই করা হয় মূল ইভেন্টের জন্য, নির্ধারিত ম্যারাথন থেকে এথেন্সের সেই ট্রেকে কয়েকটি ট্রায়াল রেসের মাধ্যমে। ১৮৯৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম ট্রায়াল রেসের দ্রুততম ফিনিশার ছিলেন চরিলাওস ভিসিলাকস(Charilaos Vasilakos)। তিনি ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিটে তার রেস শেষ করেন। কিন্তু ১৮৯৬ সালের ১০ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক ম্যারাথনের মূল ইভেন্টে মাত্র ২ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে ফিনিশ-লাইন স্পর্শ করে ইতিহাস গড়েন স্পিরিডোন লৌইস(Spyridon Louis)। তিনি ট্রায়াল রেসের দ্বিতীয় দফায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, অলিম্পিকের মূল ইভেন্টের রেস চলাকালে লৌইস মাঝপথে পিকেরমি গ্রামে থেমে এক মগ ওয়াইন পান করতে করতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনিই আজকের রেস জিততে যাচ্ছেন। মূল ইভেন্টে ভিসিলাকসের অবস্থান ছিল দ্বিতীয় এবং পঁচিশজন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে মাত্র নয়জন ফিনিশিং লাইনে পৌঁছতে পেরেছিলেন।

দূরত্ব নিয়ে যত দ্বন্দ্ব

সময়টা খ্রিস্টপূর্ব ৪৯২ সালের ঘটনা, পারস্য সম্রাট দারায়ুসের নাম তখন বিশ্বের সবার মুখে মুখে। এশিয়ার অধিকাংশ স্থান তার অধীনে চলে এসেছে, এবার চোখ ইউরোপের দিকে। গ্রীসের কিছু অংশ দখল করেছেন। ক্রমে এগিয়ে যাবেন বিশ্বজয়ের পথে।কিন্তু হঠাৎই বাধাপ্রাপ্ত হলেন সম্রাট দারায়ুস, গ্রীসের অন্তর্ভুক্ত কিছু নগররাষ্ট্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে তার বিরুদ্ধে। তারা পারস্য সম্রাটের দখলদারিত্ব মেনে নেবে না। শুনে তো সম্রাট রেগেমেগে আগুন, কার এত সাহস যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে?

তিনি জানতে পারলেন এথেন্স হলো এই বিদ্রোহের নাটেরগুরু যারা অন্য নগররাষ্ট্রগুলোকেও উৎসাহিত করছে দারায়ুসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। সম্রাট সিদ্ধান্ত নিলেন নগররাষ্ট্রগুলোকে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। প্রথমে দারায়ুস তার প্রতিনিধিকে পাঠালেন বিদ্রোহী নগরগুলোতে যেন তারা সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়, নয়তো তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। দারায়ুসের এ ঘোষণায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মধ্যে, অনেক রাষ্ট্র বশ্যতা স্বীকারও করে নেয়। কিন্তু কোনো কোনো নগররাষ্ট্র এই পরাধীনতার শৃঙ্খলে নিজেদের আবদ্ধ করতে চায়নি। এদের মধ্যে এথেন্স ও স্পার্টা অন্যতম। তাই তারা নগরপ্রধানদের নির্দেশে দারায়ুসের দূতকে কূপে নিক্ষেপ করে হত্যা করে।

এই ঘটনা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে তোলে পারস্য সম্রাটকে, প্রতিশোধের নেশায় তিনি উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। গড়ে তোলেন ৬০০ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে এক বিশাল নৌবহর যার সৈন্য-সামন্ত, মাঝি-মাল্লার সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার। এই নৌবহর নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন এথেন্সের দিকে। কিন্তু দমলো না এথেন্স, যে করেই হোক স্বাধীনতার রঙিন সূর্যকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল এথেন্সবাসী। আলোচনায় বসেন নগরের বিজ্ঞ পণ্ডিতবর্গ, সমরবিদগণ ও সাধারণ নগরবাসীরা। তারা ভাবতে লাগলেন, মাত্র নব্বইটা যুদ্ধ জাহাজ আর স্বল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে অত বড় পারস্য বাহিনীর মোকাবেলা কি আদৌ সম্ভব হবে? এদিকে পারস্য বাহিনী এথেন্স থেকে ছাব্বিশ মাইল দূরে ম্যারাথন উপসাগরের পাশে নোঙর ফেলেছে, যেকোনো মূল্যে তারা এথেন্সকে কব্জায় আনতে প্রস্তুত।

ম্যারাথন রেস এর ইতিহাস
ছবি : roar.media

সিদ্ধান্ত হলো সাহায্যের জন্য দূত পাঠানো হবে স্পার্টার রাজার কাছে-পাঠানো হলো বিশ্বস্ত প্রতিনিধি ফিডিপাইডিসকে। কিন্তু বাধ সাধলো স্পার্টার আদিবাসীদের অতিরিক্ত ধর্মভীরুতা। তাদের মতে পূর্ণিমার আগে যুদ্ধে যাত্রা অমঙ্গল। তাই পারস্যের সম্রাটের বিরুদ্ধে এথেন্সকে সহযোগিতা করতে আপত্তি না থাকলেও পূর্ণিমার আগে তারা কোনো সাহায্য পাঠাতে পারবে না।

এদিকে ম্যারাথন উপসাগর থেকে যেকোনো সময় আক্রমণ হানতে পারে পারস্য বাহিনী। তাই এথেন্সবাসীকে যা করার পূর্ণিমার আগেই করতে হবে কেননা তখন ছিল কেবল নবমী তিথি। অতএব স্পার্টার কাছ থেকে সাহায্যের আশায় বসে থাকা বোকামি হবে, ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল দূত ফিডিপাইডিস। চিন্তার ভাঁজ গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকলো এথেন্সবাসীর কপালে। তারা জানত দারায়ুস বাহিনী তাদেরকে পূর্ণিমার আগেই আক্রমণ করবে। তাই মাত্র নয় হাজার সৈন্য এবং সামান্য কিছু যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে তারা রওনা দিলো ম্যারাথন প্রান্তরে। এথেন্স বাহিনীর যুদ্ধ সরঞ্জাম ও সৈন্য সংখ্যা কম থাকলেও যুদ্ধ কৌশলে তারা ছিল অতুলনীয়। তারা জানতো এথেন্সকে আক্রমণের সুযোগ দিলে সেই আক্রমণ এথেন্সবাসী সহ্য করতে পারবে না। তাই তারা আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ করতে ম্যারাথন প্রান্তরে রওনা দিয়েছে। দেশপ্রেমের সঞ্জীবনী শক্তিতে বলীয়ান এথেন্স বাহিনী নানা পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-বন-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আগাতে থাকল। ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ম্যারাথন উপসাগরে শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। যেখানে বিরাট পারস্য বাহিনীর প্রতিপক্ষ ক্ষুদ্র এথেন্স বাহিনী। অতর্কিত আক্রমণের মুখে হতবিহ্বল হয়ে যায় দারিয়ুসের সৈনিকরা, যুদ্ধে তাদের পরাজয় ঘটে। পরাজয়ের কলঙ্ক গায়ে নিয়ে দেশে ফিরে যায় তারা। পেছনে ফেলে যায় বহু যোদ্ধার লাশ। অন্যদিকে এত অল্প সংখ্যক সরঞ্জাম আর সৈন্য নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে এথেন্স যোদ্ধারা। মাতৃভূমি রক্ষার এই মহা আনন্দের সংবাদ দ্রুত পৌঁছানো দরকার উদ্বিগ্ন নগরবাসীর কাছে। এবারও দায়িত্ব নেন দেশপ্রেমিক দূত ফিডিপাইডিস।

ম্যারাথন থেকে ছাব্বিশ মাইল দূরের এথেন্স নগরীর দিকে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে যেন উড়ে চলে আসেন এথেন্সে। দেশে পৌঁছে নগরবাসীদের জানালেন স্বাধীনতা রক্ষার সুসংবাদ জানায় ফিডিপাইডিস। কিন্তু দীর্ঘ পথচলায় ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন তিনি, লুটিয়ে পড়লেন মাটির ওপরে, চির নিদ্রায় শায়িত হলেন স্বাধীন এথেন্সের বুকে। দেশের প্রতি ফিডিপাইডিসের এই আত্মত্যাগের পবিত্র স্মৃতি রংক্ষার্থে অলিম্পিক গেমসে চালু হয় ম্যারাথন রেস ইভেন্ট যার পরিধি ছাব্বিশ মাইল।

আধুনিক অলিম্পিক

ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় ম্যারাথন দৌড়কে ক্রীড়াবিষয়রূপে অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রস্তাবনায় তুলে ধরা হয়। উদ্যোক্তা এবং সংগঠকগণ এ বৃহৎ জনপ্রিয় ক্রীড়াকে প্রাচীন গ্রীসের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মাইকেল ব্রিল ম্যারাথন দৌড়কে এথেন্সে ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়াসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করতে সচেষ্ট হন।

আধুনিক অলিম্পিক ম্যারাথন
ছবি : athleticsweekly.com

মাইকেল ব্রিলের এ পরিকল্পনাটি গ্রীকদের পাশাপাশি আধুনিক অলিম্পিকের জনক পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ বেশ সমর্থন করেন। এর প্রেক্ষাপটে গ্রীস ১০ মার্চ, ১৮৯৬ সালে অলিম্পিক ম্যারাথনে দৌড়বিদ মনোনয়নের জন্য প্যান হেলেনিক গেমস ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে চেরিলাউস ভ্যাসিলাকোস নামীয় গ্রীক ক্রীড়াবিদ ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট সময় নিয়ে জয়ী হন। এ দৌড়টিই ছিল বিশ্বের প্রথম ম্যারাথন দৌড়। ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম অলিম্পিক ম্যারাথন ক্রীড়া ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্পাইরিডন স্পাইরোজ লুইস নামীয় গ্রীক পানিবাহক ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তখন ম্যারাথন দৌড়ের ব্যাপ্তি ছিল ২৫ মাইল। ২০০৮ সালের অলিম্পিক ম্যারাথনে স্যামুয়েল ওয়ানজিরু স্বর্ণপদক জয় করেন

বোস্টন ম্যারাথন এবং ম্যারাথনে নারীদের অংশগ্রহণ

আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম আসরের রেশ কাটতে না কাটতেই বোস্টন অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের হাত ধরে ১৮৯৭ সালের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ‘বোস্টন ম্যারাথন’। এযাবতকালের সবচাইতে পুরনো এবং জমজমাট ম্যারাথনের আসর হিসেবে পরিচিত ম্যারাথন ইভেন্টের প্রথম আসরে অংশগ্রহণকারী ছিল মাত্র ১৫ জন। অ্যাশল্যান্ডের ম্যাটকাফ মিল থেকে বোস্টনের আরভিংটন ওভাল পর্যন্ত মাত্র ২ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডে ২৪.৫ মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে বোস্টন ম্যারাথনের প্রথম আসরের প্রথম ফিনিশার হিসেবে ইতিহাস গড়েন নিউ ইয়র্কের জন জে. ম্যাকডারমট।

বোস্টন ম্যারাথন এবং ম্যারাথনে নারীদের অংশগ্রহণ
ছবি : roar.media

মাত্র পনেরোজন ম্যারাথনার নিয়ে শুরু হওয়া বোস্টন ম্যারাথনের শতবর্ষ উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৩৬,৭৪৮ জন। যার মধ্যে ৩৫,৮৬৮ জনই ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করা সহ ৩৮,৭০৮ মানুষের সমাগম গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া বোস্টন ম্যারাথনের পুরো ২৬.১৯৫ মাইল গতিপথ ধরে সম্মিলিত দর্শকের সংখ্যা ৫ লক্ষেরও উপরে। বছর বছর এর পরিমাণ বেড়েই চলছে।

প্রত্যেক বছর দাতব্য সংস্থাগুলোর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ফান্ড উত্তোলন, ১৯৭৫ সালে বোস্টন ম্যারাথনে হুইলচেয়ার শাখার সংযোগ সহ বোস্টন ম্যারাথনেই সর্বপ্রথম নারী অংশগ্রহণকারীর আগমন ঘটে। ১৯৬৬ সালের পূর্বে পৃথিবীব্যাপী অনুষ্ঠিত সবগুলো ম্যারাথন ইভেন্টই পুরুষদের জন্য ছিল। কিন্তু ১৯৬৬ সালের আসরে প্রথম নারী হিসেবে রবার্তা ববি গিব (Roberta Bobbi Gibb) ম্যারাথনে অংশ গ্রহণ করেন এবং প্রথম নারী ম্যারাথন ফিনিশার হিসেবে ইতিহাস পাতায় নাম লেখান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল বিব-নাম্বার ছাড়াই তিনি রেস চালিয়ে যান।

বোস্টন ম্যারাথন এবং ম্যারাথনে নারীদের অংশগ্রহণ
ছবি : roar.media

অপরদিকে, ক্যাথরিন সুইৎজার প্রথম অফিসিয়ালি নথিভুক্ত নারী ম্যারাথনার হিসেবে ১৯৬৭ সালের ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেন। যদিও, তিনি বিব-নাম্বার সংগ্রহ করেছিলেন একজন পুরুষের পরিচয় দিয়ে, কিন্তু রেসের সময় তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হোন। সে সময় ভলান্টিয়ারদের দ্বারা জোরপূর্বক রেসের গতিপথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাকে। তবে ক্যাথরিনের বন্ধু থমাস মিলার সাথে থাকায় সে যাত্রায় তিনি রেস চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান এবং দ্বিতীয় নারী ফিনিশার হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে, দ্য অ্যামেচার অ্যাথলেটিক্স ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে নারী অংশগ্রহণকারীদের ম্যারাথনে দৌড়ানোর সুযোগ দেয়। ১৯৭২ সালে, অর্থাৎ অফিসিয়ালি নথিভুক্ত হয়ে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করার প্রথম বছরে নারী অংশগ্রহণকারী সংখ্যা ছিল আটজন এবং এই আটজনই পুরো রেস শেষ করেন। প্রথম অফিসিয়াল নারী চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ট্রফি ছিনিয়ে নেন নিনা কুস্কসিক।

বোস্টন ম্যারাথন বম্বিং

শত বছরের উপর চলে আসা জনপ্রিয় বোস্টন ম্যারাথনে ইতিহাস গড়া নানান ঘটনা ঘটলেও বোস্টন ম্যারাথন বম্বিং ছিল এমন একটি ট্র্যাজেডি, যা কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ১১৬তম আসরে ফিনিশ-লাইনের মাত্র ১৯০ মিটার দূরত্বে বাড়িতে তৈরি প্রেশার-কুকার বোম বিস্ফোরিত হয়ে তিনজন মারা যায়, আহত হয় কয়েক শত মানুষ এবং ষোলজনের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায়।

বোস্টন ম্যারাথন বম্বিং
ছবি : reuters.com

ঘটনায় দোষী হিসেবে পুলিশ জোখার সারনায়েভ এবং তামেরনাল সারনায়েভ নামের দুজন চেচেন বংশদ্ভূত ভাইকে চিহ্নিত করে। পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বোমা হামলায় মূল পরিকল্পনাকারী তামেরনাল মারা গেলেও পুলিশের হাতে তার ভাই সারনায়েভ ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

আলট্রা-ম্যারাথন ও অন্যান্য

দূরপাল্লার দৌড়ে আগ্রহ আছে, ম্যারাথন শব্দটার সাথে পরিচিত অধিকাংশ মানুষই হাফ, আলট্রা, আলট্রা-ট্রেইল, স্টেজ-ম্যারাথনের মতো শব্দগুলোর সাথে পরিচিত। কেউ কেউ আবার এগুলোর নাম শুনলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। কেননা, শব্দগুলো সাথে ২১.১ কিলোমিটার থেকে কয়েকশ কিলোমিটার টানা দৌড়ের সম্পর্ক রয়েছে, যা শুধু অনেকের জন্য দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। সে যা-ই হোক, কারো কারো কাছে ম্যারাথনের এই টার্মগুলো বেশ গোলমেলে হলেও নামগুলো থেকেই অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়।

আলট্রা-ম্যারাথন ও অন্যান্য
ছবি : roar.media

হাফ-ম্যারাথন মূলত মূল ম্যারাথনের অর্ধেক দূরত্ব; অর্থাৎ, প্রায় ২১.১ কিলোমিটার বা ১৩.১ মাইলের রেস। সাধারণত, মূল ম্যারাথনের প্রস্তুতিলগ্নে অধিকাংশ ম্যারাথনারই এই দূরত্বের দৌড়ের মহড়া দিয়ে থাকেন। তাছাড়া, ফান্ড তোলা, স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এনডুরেন্স ইভেন্ট হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে এনডুরেন্স ইভেন্টগুলো এখনো বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেনি, সেখানে এই দূরত্বের রেস বেশ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে বিডিরানার আয়োজিত ঢাকা হাফ-ম্যারাথনের সাথে সাথে থাউজেন্ড মাইল এক্সপিডিশন, দ্য বিগ বাংলা রান, কম্পাস সহ আরো কয়েকটি প্রফিট, নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন হাফ ম্যারাথন বন্দোবস্ত করে থাকে। চায়নার দ্য গ্রেট ওয়াল হাফ, লন্ডনের রয়াল পার্কস হাফ-ম্যারাথন, গ্রিসের এথেন্স হাফ-ম্যারাথন, সাউথ আফ্রিকার সাফারি হাফ-ম্যারাথন পৃথিবীব্যাপী বেশ জনপ্রিয়।

অপরদিকে আলট্রা-ম্যারাথন হচ্ছে প্রচলিত ম্যারাথন থেকে দূরত্ব বেশি, এমন যেকোনো ম্যারাথন। প্রচলিত আলট্রা-ম্যারাথনের ইভেন্টগুলো পঞ্চাশ কিলোমিটার থেকে শুরু করে একশত মাইল পর্যন্ত দূরত্বের হয়ে থাকে। এই দূরত্ব ছাড়িয়ে আরো পথ পাড়ি দেওয়ার রেকর্ডও অনেকগুলো। অন্যদিকে, দূরত্ব হিসেব না করে, সময়ের উপর নির্ভর করেও আলট্রা-ম্যারাথনের ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ধরনের ইভেন্টগুলোই স্টেজ-ম্যারাথন হিসেবে খ্যাত। এগুলোকে শুধু দৌড়ের ক্যাটাগরিতে না ফেলে একপ্রকার অ্যাডভেঞ্চার হিসেবেই ভালো মানায়। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ইভেন্টগুলো রোড-রেস থেকে ট্রেইল-রেসেই বেশি হয়ে থাকে; অর্থাৎ লম্বা দূরত্ব দৌড়ানোর সাথে সাথে ম্যারাথনারদের হাই-অল্টিটিউডে হাইকিংয়ের কাজও করা লাগে। এ ধরনের ম্যারাথনগুলোই মূলত ট্রেইল-ম্যারাথন হিসেবে পরিচিত।

ট্রেইল-ম্যারাথন
ছবি : suunto.com

পুরুষদের মাঝে স্টেজ-ম্যারাথনের আটচল্লিশ ঘণ্টা ক্যাটাগরিতে ট্র্যাক এবং রোড ভেন্যুতে যথাক্রমে ৪৭৩.৪৯৫ কিলোমিটার এবং ৪৩৩.০৯৫ কিলোমিটার দৌড়ানোর বিশ্ব রেকর্ডটি গ্রিক দৌড়বিদ ইয়াননিস কোরাসের। অপরদিকে, মহিলা ক্যাটাগরিতে ট্র্যাক ভেন্যুতে জাপানি দৌড়বিদ সুমি ইনাজিকির রেকর্ড ৩৯৭.১০৩ কিলোমিটার এবং রোড ভেন্যুতে পোলিশ দৌড়বিদ প্যাটরিকা বেরেজনওসকার পুরো ৪০১ কিলোমিটার দৌড়ানোর রেকর্ডটি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।

ডেথ ভ্যালিতে প্রায় পঞ্চান্ন ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৩৫ মাইলের ‘ব্যাডওয়াটার আল্ট্রা-ম্যারাথন’, দক্ষিণ মেরুতে মাইনাস পঁচিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘অ্যান্টারটিক আইস ম্যারাথন’ সহ পৃথিবীব্যাপী ম্যারাথন, আল্ট্রা-ম্যারাথনের কাঠিন্যে এত ভিন্নতা রয়েছে যে, দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের মন-মানসিকতার মানুষেরাই এ ধরনের ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের সাহস করে। কিন্তু চ্যালেঞ্জে ভরা এসব এনডুরেন্স ইভেন্টে মানুষ কেন অংশগ্রহণ করে? প্রতিটি স্বতন্ত্র দৌড়বিদের স্বতন্ত্র উত্তর থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে ঘুমহীন ৮০ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটে টানা ৫৬০ কিলোমিটার দৌড়ে আলোচিত হওয়া, একনাগাড়ে পঞ্চাশ দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব রেকর্ড করা, ‘আল্ট্রা-ম্যারাথন ম্যান’ খ্যাত বিখ্যাত দৌড়বিদ ডিন কারনাযেস বলেন,

“আমি দৌড়াই, কেননা আমার পদচিহ্ন বিবর্ণ হতে হতে আমি হয়তো গুটিকয়েক মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যেতে পারবো, যারা সহজ পথ এড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেইল দিয়ে ছুটবে, পায়ের পর পা ফেলে আমার মতো একই গন্তব্যে পৌঁছবে। আমি দৌড়াই, কেননা এটি সব সময় আমায় ঠিক ঐখানটায় পৌঁছে দেয়, যেখানে আমি যেতে চাই। ”

সূত্র : উইকিপিডিয়া , রোয়ার মিডিয়া , নিউজ ভিউ

Related posts

কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী ‘সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ’

লেমন কাওসার

নৌকার প্রথম নির্বাচন জয়

News Desk

পনেরোই আগস্টের সকালে কী ঘটেছিলো

News Desk

Leave a Comment