মহামারির সময় কাজ বন্ধ। কত ক্ষতি হয়েছে করোনার জেরে লকডাউনের জেরে। আজও ঠিকভাবে খোলেনি স্কুল কলেজ। কিন্তু আইজ্যাক নিউটন সেই সময়কেই কাজে লাগিয়েছিলেন। দুই বছর কলেজে পড়াশোনা বন্ধ ছিল আর সেটাই তাঁর সেরা সময় ছিল। যা আগামী দিনে নিউটনকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী করে তোলে।

নিউটন ট্রিনিটি কলেজ থেকে ১৬৬১ সনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সৎ বাবা মারা যান। এরপর তার মা তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে ক্ষেত-খামারের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত করে দেওয়া। কিন্তু সত্বরই তিনি বুঝতে পারেন যে, খামারের কাজের দিকে নিউটনের কোন ঝোঁক নেই। নিউটনের কাকা উপদেশে তাঁকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কলেজের বিভিন্ন স্থানে ভৃত্যের কাজ করতেন।

মহাবিজ্ঞানী নিউটন
ছবি: roar.media

১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রী লাভের আগেই নিউটন তার বিখ্যাত দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেছিলেন এবং একইসাথে ফ্লাক্সিয়নের পদ্ধতি আবিষ্কার বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন। ট্রিনিটি কলেজের এই দিনগুলো তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৬৬৫ সনে কেমব্রিজ এবং লন্ডনে প্লেগ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। এর ফলে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নিউটন লিংকনশায়ারে তাদের খামর বাড়িতে ফিরে যান। ফিরে এসেও নিউটন থেমে থাকেননি। সেখানে মূলত রসায়ন এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একইসাথে চলতে থাকে তার গাণিতিক অনূধ্যানের প্রকল্পসমূহ। নিউটন তার মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার বিষয়ক দিনপঞ্জির সূচনা চিহ্নিত করেছিলেন এই ১৬৬৬ সনকেই, যে সনে তাকে ট্রিনিটি কলেজ ছেড়ে যেতে হয়েছিল। এ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ‘একই বছরে আমি চাঁদের কক্ষপথে বিস্তৃত অভিকর্ষ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি, চাঁদকে তার নিজ কক্ষপথে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় বল এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে বিরাজমান অভিকর্ষ বলের মধ্যে তুলনা করি এবং এই দুটি বলের মান প্রায় সমান বলে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই।’

একই সময়ে তিনি আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার একটি মৌলিক পরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেন। এই পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনি সাদা আলোর গাঠনিক অংশসমূহ আবিষ্কারে সক্ষম হন। আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার প্রাথমিক এই কাজ সম্বন্ধে নিউটন নিজেই মন্তব্য করেছেন, ‘এই সব কিছু আমি করেছিলাম মাত্র দুই বছর তথা ১৬৬৫ এবং ১৬৬৬ সালের মধ্যে, কারণ আমর জীবনের যেকোন সময়ের তুলনায় ওই সময়ে আমি বিশেষ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে ছিলাম যে পর্যায়ে উদ্ভাবন এবং মনকেন্দ্রিক গণিত ও দর্শন চিন্তার বিকাশ ঘটেছিল।’

https://oli-goli.com/
ছবি: ইন্টারনেট

১৬৬৭ সনে ট্রিনিটি কলেজ পুনরায় খোলা হয়। এবার কলেজ নিউটনকে ফেলো নির্বাচিত করে এবং এর দুই বছর পর অর্থাৎ তার ২৭তম জন্মদিনের কিছুদিন আগে তিনি সেখানকার গণিত বিভাগের লুকাসিয়ান অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৬৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর রচিত পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় বই ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’। ১৬৮৭ সালে স্যার আইজাক নিউটন মহাবিশ্বের যে কোন ‌দুটি বস্তুর মধ্যকার আকর্ষণ বলকে একটি সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন। একে সার্বজনীন আখ‍্যা দেওয়া হয়ে। যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।

তথ্য সূত্র: কলকাতা ২৪x৭, এশিয়ান নেট নিউস বাংলা, উইকিপিডিয়া

Related posts

স্মৃতিচারণ: পটশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তী

News Desk

তারুণ্যের ভাবনায় একুশ ও বাংলা ভাষা

News Desk

যেভাবে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

News Desk

Leave a Comment