সবথেকে জনপ্রিয় ও রোমাঞ্চকর খেলা গুলির মধ্যে ক্রিকেট এর নাম সবার উর্ধ্বে।ক্রিকেট খেলাকে একটি শারীরিক এবং মানসিক উভয় খেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । তবে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠে যে ক্রিকেট খেলার ইতিহাস কি? বা কোথায় থেকে এই ক্রিকেট খেলাটির উৎপতি হলো।

ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি কিভাবে হয় ও তার ইতিহাস কি?

যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে। মূলতঃ দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডে শুরু হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি ইংল্যাণ্ডের জাতীয় খেলায় পরিণত হয় এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের দরবারে এই রোমাঞ্চকর ও জনপ্রিয় খেলা দেওয়ার কৃতিত্ব গ্রেট ব্রিটেনের। এই কারনে জন্য গ্রেট ব্রিটেনকে ক্রিকেটের জনক বলা হয়।১৮৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও ইতিহাস স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবলের ঠিক পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত। এই খেলার বিশ্বব্যাপী প্রশাসনের দায়িত্বে আছে একশোর বেশি সদস্যযুক্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, যদিও এর মধ্যে শুধু বারোটি সদস্য দেশই টেস্ট ক্রিকেট খেলে।এছাড়া ইংল্যান্ড এর সেই সময়কার উপনিবেশ দেশগুলো যেমন – ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদিতে এই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলাটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

১৮৩৬ সালের ৩রা আগস্ট, হ্যাম্পটন কোর্ট গ্রিনে রয়্যাল অ্যামেচার সোসাইটির সদস্যদের মধ্যে খেলা ক্রিকেটের প্রথম গ্র্যান্ড ম্যাচ
১৮৩৬ সালের ৩রা আগস্ট, হ্যাম্পটন কোর্ট গ্রিনে রয়্যাল অ্যামেচার সোসাইটির সদস্যদের মধ্যে খেলা ক্রিকেটের প্রথম গ্র্যান্ড ম্যাচ
উৎস

সম্ভবত স্যাক্সন অথবা নরম্যানদের সময়ে উইল্ড-এ বসবাসকারী শিশুরা ক্রিকেট খেলা চালু করেছিলো। উইল্ড দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের কেন্ট এবং সাসেক্স-এর মধ্যবর্তী একটি ঘন অরণ্য। ক্রিকেট খেলার সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লিখিত তারিখ সোমবার, ১৭ই জানুয়ারি, ১৫৯৭ খ্রীস্টাব্দ (“পুরোনো পদ্ধতির” জুলিয়ান তারিখ; বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ)।

সম্ভবত ক্রিকেট খেলা উদ্ভূত হয়েছিলো বোলস খেলা থেকে। যেহেতু বোলস একটু পুরানো খেলা, তাই মনে করা হয় বলটিকে তার লক্ষ্যের আগে ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে থামিয়ে সেটিকে আঘাত করে দূরে পাঠানো থেকেই ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি। খেলা শুরু হয় মেষ-চারিত কোনো মাঠ বা ফাঁকা জায়গায়, মূল সরঞ্জামের মধ্যে বল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ভেড়ার দলা পাকানো পশম (বা এমনকি একটি পাথর অথবা একটি ছোটো কাঠের ডেলা); ব্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয় একট লাঠি বা একটি বাঁকা দণ্ড বা খামারবাড়ির কোনও যন্ত্র; উইকেট হিসাবে একটি বসার টুল বা গাছের গোড়ার শিকড় অথবা কোনো দরজা (যেমন একটি উইকেট দরজা)।

“ক্রিকেট” নামের উৎপত্তি

“ক্রিকেট” নামটির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে অনেক শব্দের কথাই ধরা হয়। সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লেখে এটাকে ক্রেকেট বলা হয়। এমনও হতে পারে, নামটি এসেছে মধ্য ওলন্দাজ ভাষা ক্রিক (ইংরেজি krick(-e)) থেকে, যার অর্থ দণ্ড; অথবা পুরাতন ইংরেজি ভাষার শব্দ ক্রিক (ইংরেজি cricc) বা ক্রাইক (ইংরেজি cryce) থেকে, যার অর্থ পঙ্গু লোকের বগলে লাগিয়ে চলবার লাঠি বা ছড়ি, অথবা ফরাসি ভাষা ক্রিকোয়েট (ইংরেজি criquet) থেকে, যার অর্থ কাঠের থাম। ক্রিকস্টোয়েল (ইংরেজি krickstoel) একটি মধ্য ওলন্দাজ ভাষা যার অর্থ একটি দীর্ঘ নিচু বসার টুল যেগুলি গীর্জায় নতজানু হওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়; এটা অনেকটা প্রারম্ভিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত দীর্ঘ নিচু উইকেটের মত যাতে দুটি স্টাম্প ব্যবহার করা হত। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ভাষা বিশেষজ্ঞ হেইনার গিলমেইস্টার-এর মতে, “ক্রিকেট” শব্দটির উৎপত্তি হকির মধ্য ওলন্দাজ শব্দ মেট দে (ক্রিক্ কেট্ (ইংরেজি krik ket)) সেন (অর্থাৎ “দণ্ড নিয়ে তাড়া”) থেকে।
আরো সম্ভবত, ক্রিকেটের পরিভাষাগুলি গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের সেই সময়কার ভাষা থেকে এবং ফ্লেন্ডার্স দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে, বিশেষত যখন দেশটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে ডাচি অব্ বার্গাণ্ডির অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন দক্ষিণ ইংল্যাণ্ডের কথ্য ভাষায় অনেক মধ্য ওলন্দাজ শব্দ প্রবেশ করেছে।

সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক

ইংরেজ গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার অনেক উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এটা ইঙ্গিত করে যে, ক্রিকেট খেলাটি প্রাপ্তবয়স্কদের খেলারূপে গণ্য হয়েছিল যাতে যাজক দল অংশগ্রহণ করতো, তবে সেই সময়ে প্রাদেশিক পর্যায়ের কোনো দলের প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে, এই খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক প্রসারণশীল জুয়াখেলার কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যা পুরো অষ্টাদশ শতাব্দী ধরে এই খেলাটিকে বৈশিষ্টমন্ডিত করে। তবে, সাধারণত এটা বিশ্বাস করা হয় যে, গ্রামীণ ক্রিকেট শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, কিন্তু কাউন্টি (প্রাদেশিক) ক্রিকেট বা এই খেলায় লগ্নী তখনও শুরু হয়নি।

মেরিলিবোন মাঠের রয়্যাল একাডেমি ক্লাবের ক্রিকেটের একটি গেম, এখন রিজেন্টস পার্ক নামে পরিচিত ১৭৯০-১৭৯৯
মেরিলিবোন মাঠের রয়্যাল একাডেমি ক্লাবের ক্রিকেটের একটি গেম, এখন রিজেন্টস পার্ক নামে পরিচিত ১৭৯০-১৭৯৯
কমনওয়েল্থ্

১৬৪৮ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন পিউরিটান সরকার “বেআইনি সমাবেশগুলি” কঠোর হাতে দমন করেছিল, বিশেষ করে যেসব খেলায় প্রচুর কর্কশ আওয়াজ হয় যেমন ফুটবল। সাব্বাথ (রবিবার) বিষয়ে যে প্রথা ছিল, সেই আইন চাইছিলো তার চেয়ে আরো কঠোর কোনো রীতি। যেহেতু নিম্নবর্গের মানুষদের কাছে সাব্বাথ(রবিবার)-ই একমাত্র অবসর সময় ছিল তাই কমনওয়েল্থের সময় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিলো। যাইহোক, এই খেলা কিছু বৈতনিক বিদ্যালয় যেমন উইনচেস্টার এবং সেন্ট পলস-এ জাঁকজমকভাবে বেড়ে উঠেছিলো। অলিভার ক্রনওয়েলের শাসনকালে ক্রিকেটকে যে নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিলো এর কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই, তবে সরকারি বিরতির সময়ে কিছু প্রমাণ আছে যেটা নির্দেশ করে যে এটা কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল কারণ তারা খেলাটিকে “সাব্বাথ (রবিবার) লঙ্ঘনের” কারণ হিসাবে দেখেনি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে সাধারণভাবে আভিজাত্যরা ঐ মুহূর্তে গ্রাম্য খেলায় জড়িত থাকার মাধ্যমে ক্রিকেটকে গ্রহণযোগ্য করেছিলেন।

জুয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচার

১৬৬০ সালের restoration এর ঘটনার পরই মূলত ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে এবং ধারণা করা হয় ঐ সময়েই খেলাটি সর্বপ্রথম জুয়াড়িদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ১৬৬৪ সালে ইংল্যান্ডের কাভালিয়ের (restoration এর ঘটনার পর গঠিত সর্বপ্রথম সংসদ) সংসদে “The Gaming Act 1664” পাস হয়, যে আইনে বাজির সর্বোচ্চ সীমা ১০০ পাউন্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়, তৎকালীন সময়ে যেটা বেশ বড় অঙ্কই ছিল।তৎকালীন ১০০ পাউন্ড বর্তমানের ১৫০০০ পাউন্ডের সমান। ১৭ শতকের শেষ দিকে ক্রিকেট অনেক জনপ্রিয় একটি খেলায় পরিণত হয়। ১৬৯৭ সালে সাসেক্সে অনুষ্ঠিত একটি “দুর্দান্ত ম্যাচ ” এর উল্লেখ সংবাদপত্রে পাওয়া যায়, যে ম্যাচে প্রতি দলে ১১ জন করে খেলেছিল এবং উভয়পক্ষের জন্য বাজির দর ছিল ৫০ গিনি।

১৬৯৬ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃতি পাওয়ার পর সর্বপ্রথম খবরের কাগজে ক্রিকেটের সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু ক্রিকেট সম্পর্কে নিয়মিত ও বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ প্রকাশিত হওয়া শুরু হয় আরও অনেকদিন পরে। ১৮ শতকের প্রথমার্ধে গণমাধ্যমগুলো খেলাটির ভিতরের বিষয়ের চেয়ে বাজি ও জুয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশেই বেশি আগ্রহী ছিল।

১৮২০-এর দশকে শেফিল্ডের ডারনালে একটি ক্রিকেট ম্যাচ।
১৮২০-এর দশকে শেফিল্ডের ডারনালে একটি ক্রিকেট ম্যাচ।
পৃষ্ঠপোষকতা এবং খেলোয়াড়

জুয়ার হাত ধরেই খেলাটির শুরুর দিকের পৃষ্ঠপোষকদের আবির্ভাব ঘটে। কারণ অনেক জুয়ারিই নিজেদের দল গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে চেয়েছিলেন এবং ধারণা করা হয় যে ১৬৬০ সালের restoration এর ঘটনার পরেই প্রথম “কাউন্টি দল” গঠিত হয়, বিশেষত যখন অভিজাত সদস্যরা পেশাদার হিসাবে গ্রাম ক্রিকেট থেকে “স্থানীয় বিশেষজ্ঞ” নিয়োগ করছিলেন। যতদূর জানা যায়, ১৭০৯ সালে দলগুলো প্রথম কাউন্টি নাম ব্যবহার শুরু করে। ১৬৯৭ সালের ম্যাচে সাসেক্সের বিরুদ্ধে সম্ভবত অন্য আরেকটি কাউন্টি অংশগ্রহণ করেছিল।

প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন একদল অভিজাত এবং ব্যবসায়ী যারা ১৭২৫ সাল থেকেই সক্রিয় ছিলেন, যে সময় থেকে পৃষ্ঠপোষকদের প্রভাবে ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়। এদের মধ্যে ছিলেন রিচমন্ডের ২য় ডিউক, স্যার উইলিয়াম গেইজ, অ্যালেন ব্রডরিক এবং এডউইন স্টিড । প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে থমাস ওয়েইমার্ক এর ন্যায় কোনো একক খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশিত হয়।

ইংল্যাণ্ডের বাইরে ক্রিকেটের প্রসার

১৭ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহের মাধ্যমেই প্রথম উত্তর আমেরিকায় ক্রিকেট পরিচিতি লাভ করে। তখনো সম্ভবত ইংল্যান্ডের উত্তরে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮ শতকের শেষ দিকে এটি বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। উপনিবেশবাদীদের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকদের মাধ্যমে ভারতে শতাব্দীর প্রথমার্ধে খেলাটি পরিচিতি লাভ করে। ১৭৮৮ সালে উপনিবেশ স্থাপনের পর পরই অস্ট্রেলিয়াতে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট প্রবেশ করে।

উচ্চ শ্রেণির মানুষদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কানাডায় ক্রিকেট কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮৬০-১৯৬০ সালের মধ্যে কানাডায় খেলাটির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, যা অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্পূর্ণ বিপরীত। কানাডার সাধারণ মানুষদের মধ্যেও খেলাটি জনপ্রিয়তা পায়নি। গ্রীষ্মকালে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে খেলাটিকে বেসবলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে থাকা কানাডার সৈন্যরা ক্রিকেটের বদলে বেসবল খেলেছিলো।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইতিহাস

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ব প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ ১৮৪৪ সালে কানাডা এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খেলা হয়, এই ম্যাচটি ভার্জিনিয়া নামে একটি জায়গায় খেলা হয়েছিল। প্রথম দিকে ক্রিকেট খেলায় একটি ওভারে মাত্র ৪টি বল থাকত, কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে এক ওভারে ছয়টি বল করার নিয়ম সংশোধন করে এই নিয়মটি চালু করা হয়।১৮৫৯ সালে, শীর্ষস্থানীয় ইংরেজ পেশাদারদের একটি ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে উত্তর আমেরিকায় যায়।১৮৬২ সালে প্রথম কোনো ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়ায় যায়। ১৮৬৮ সালের মে এবং অক্টোবরের মধ্যে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের একটি দল বিদেশে ভ্রমণকারী প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল হিসেবে ইংল্যান্ড সফর করেছিল।১৮৭৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী একটি ইংল্যান্ড দল পুরো অস্ট্রেলিয়ান একাদশের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ খেলেছিল যা এখন সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচ হিসাবে বিবেচিত। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ানরা প্রথমবার ইংল্যান্ড সফর করে এবং এই সফরের সাফল্য ভবিষ্যতে অনুরূপ উদ্যোগের জনপ্রিয় চাহিদা নিশ্চিত করে। ১৮৭৮ সালে কোনও টেস্ট খেলা হয়নি তবে এরপরে আরো অনেক দেশ খেলা শুরু করে এবং ১৮৮২ সালে ওভালে টানটান উত্তেজনায় অস্ট্রেলিয়ার জয় অ্যাশেজ সিরিজের জন্ম দেয়।প্রথম অস্ট্রেলিয়ান সফরকারী দল (১৮৭৮) নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সামনে
১৮৮৯ সালে সাউথ আফ্রিকা তৃতীয় টেস্ট খেলুড়ে দেশে পরিণত হয়।প্রথম আন্তর্জাতিক অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচটি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ১৫ মার্চ ১৮৭৭ থেকে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলা হয়েছিল। এই টেস্ট ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রান এ জয় পায় ।

ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার সূচনা

১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই টেস্ট ম্যাচের প্রথম তিন দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ার তিন দিনই কোনও বল না করেই খেলাটি বাতিল করতে হয়েছিল। এটি দর্শকদের মধ্যে প্রচুর অসন্তোষ এবং হতাশার অনুভূতি তৈরি করেছিল। দর্শকদের হতাশা দেখে আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৪০-৪০ ওভারের একটি ম্যাচ খেলা হবে এবং প্রতি ওভারে চারটি বলের পরিবর্তে আটটি বল করা হবে। অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচটি ৫ উইকেটে জিতেছে। দর্শকরা এই ম্যাচটি দেখে খুব খুশি ও আনন্দিত হয়েছিল এবং মনে করা হয় যে ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ এর ধারণা এই খেলার পর থেকে শুরু হয়।প্রথম দিনগুলিতে ওয়ানডে ক্রিকেট ছিল ৬০ ওভারের। তবে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই নিয়মটি নিয়ম পরিবর্তন করে ৫০ ওভারের করা হয়।সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ইডেন পার্ক ইন অকল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে প্রথম খেলা হয়েছিল।

ক্রিকেটের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত একাধিক বিশ্বমানের ক্রিকেটার জন্ম দিয়েছে। তাদের মধ্যে সবথেকে উলেখযোগ্য নামগুলি হলো স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কার, অ্যালান বর্ডার, ডেনিস লিলি, শচীন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, মুত্তিয়া মুরালিধরন, প্রমুখ।

টেস্ট ক্রিকেটের বিকাশ

১৯০৯ সালে যখন ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (শুরুতে এই নামেই পরিচিত ছিল) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন শুধু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এর সদস্য ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ‍ (১৯২৮), নিউজিল্যান্ড (১৯৩০) ও ভারত (১৯৩২) এবং যুদ্ধের পরে পাকিস্তান (১৯৫২) টেস্ট দল হিসেবে অধিভুক্ত হয়। আইসিসির বেশ কয়েকটি অনুমোদিত সদস্য দেশ নিয়োগের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাটির বিকাশ ঘটেছিলো এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তিকে এদের মধ্যে তিনটি দেশ পূর্ণ সদস্য হয়েছে: শ্রীলঙ্কা (১৯৮২), জিম্বাবুয়ে (১৯৯২) এবং বাংলাদেশ (২০০০)। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান টেস্ট সদস্যভুক্ত হয়। টেস্ট ক্রিকেট বিশ শতক জুড়ে সর্বোচ্চ স্তরের খেলা হিসাবে থেকে যায় তবে এটির সমস্যা ছিল যেমনঃ ১৯৩৩-৩৩ এর কুখ্যাত “বডিলাইন সিরিজে” ডগলাস জারডিনের ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যানের রান ক্ষুধাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য তথাকথিত “লেগ থিওরি” ব্যবহার করে।

ক্রিকেটারদের সাথে জেনেভার প্লেইন ডি প্লেইনপ্লেইসের দৃশ্য, ১৮১৭
ক্রিকেটারদের সাথে জেনেভার প্লেইন ডি প্লেইনপ্লেইসের দৃশ্য, ১৮১৭
ভারতের ক্রিকেট খেলার সূচনার ইতিহাস

ভারত ছিল ইংল্যান্ডের উপনিবেশ। ইংল্যান্ড ভারতের ক্রিকেটকে জনপ্রিয় ও প্রবর্তনের কৃতিত্ব ছিলেন, ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকদের দ্বারা ভারতে প্রথম ক্রিকেট খেলার সূচনার হয়েছিল।ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ১৮৬৪ সালে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইতে আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছিল।
ভারত লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচটি ২৫ – ২৮ জুন ১৯৩২ সালে খেলেছিল। এই ম্যাচে ভারতকে পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ভারতের মোট টেস্ট ম্যাচ ব্যাপারে বলা যায়, ভারত এখন পর্যন্ত ৫৩৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে ভারত ১৫২ টিতে বিজয় এবং ১৬৫ টিতে পরাজিত হয়েছে। একই সাথে ২১ টেস্টটি টেস্ট ম্যাচ ড্র হয়েছিল এবং একটি টাই হয়েছিল।

ক্রিকেট খেলার প্রকার
টেস্ট ক্রিকেট খেলার ইতিহাস

ক্রিকেট খেলার শুরুর প্রথম দিনগুলিতে কেবল মাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলা হত, সেই সময় টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীরা পছন্দ করতো ও বেশ জনপ্রিয়ও ছিল। তবে বর্তমনে টেস্ট খেলার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে এর বৃহত্তম কারণ হল এই ম্যাচটি ৫ দিন চলে আজ ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটে রোমাঞ্চ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে মানুষ ক্রিকেট এর অন্যান্য ফর্ম্যাটে ওয়ানডে ও T ২০ ক্রিকেটের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে অনুষ্ঠানিকভাবে এই ফর্ম্যাটের প্রথম ম্যাচটি ১৮৭৭ সালে ১৫থেকে ১৯ মার্চ খেলা হয়েছিল। ক্রিকেটের এই রূপটি অগনিত মহান ব্যক্তিত্বদের নিজের পরিচয় দিয়েছে যেমন – শচীন তেন্ডুলকর, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, রিকি পন্টিং, ডেনিস লিলি, কপিল দেব প্রমুখ।

ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার ইতিহাস

এই ফর্ম্যাটটি বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত। ক্রিকেটের প্রথম দিনগুলিতে এই ফর্ম্যাটে ম্যাচ খেলা হত না। তবে এই ফর্ম্যাটের প্রথম ম্যাচটি ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি খেলেছিল। ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটে ম্যাচটি ৫০-৫০ ওভারের।
এই ফর্ম্যাটে, প্রতিটি দল ৫০ টি ওভার খেলার সুযোগ পায়। প্রথম দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে যত রান করে এবং দ্বিতীয় দল যদি ৫০ ওভারে লক্ষ্য অর্জন করে, তবে দ্বিতীয় দলটি বিজয়ী ঘোষিত হয়। তবে অন্য দল যদি রানের লক্ষ্য পূরণ করতে না সক্ষম হয় তবে প্রথম দিনেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এই ফর্ম্যাটটি শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, বিরাট কোহলি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মহিলা জয়াবর্ধনে, মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রমুখ অনেক কিংবদন্তী হিসাবে তার পরিচয় দিয়েছে। ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটে সর্বাধিক ব্যক্তিগত রান এবং সেঞ্চুরির রেকর্ড শচীন টেন্ডুলকারের নামে, যাকে ক্রিকেটের ঈশ্বর বলা হয়।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার ইতিহাস

এটি ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাট, কারণ এতে কেবল ২০-২০ ওভার খেলা হয়। তবে এই গেমটি আজকের দিনে সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি ফরম্যাটে। এই ফর্ম্যাটটির উৎপত্তি ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে, প্রতিটি দল ২০ ওভার খেলার সুযোগ পায়। ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, বিরাট কোহলি, মার্টিন গাপটিল ইত্যাদি অনেক গ্রেট এই ফরম্যাটে উঠে এসেছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাসন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় সংকট দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ ও জাতিগত বৈষম্যমূলক নীতি। ১৯৬১ সালের পরে দক্ষিণ আফ্রিকা কমনওয়েলথ অফ নেশনস ত্যাগ করার ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে শুরু করে, তাই ওই সময়ের নিয়ম অনুসারে, তার ক্রিকেট বোর্ডকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ছাড়তে হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করার ফলে (কারণ ইংল্যান্ড দলে বাসিল ডি অলিভেইরা নামক সংকর বর্ণের এক খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন) বর্ণবাদ সম্পর্কে ক্রিকেটের বিরোধিতা তীব্রতর হয়। ১৯৭০ সালে, আইসিসি সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

সেরা খেলোয়াড়দের জন্য শীর্ষ-স্তরের প্রতিযোগিতা শুরু করতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তথাকথিত “বিদ্রোহী ট্যুর” তহবিল শুরু করে, আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দেরকে দল গঠনের জন্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য প্রচুর অর্থের অফার দেয়। আইসিসির প্রতিক্রিয়া ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করতে রাজি হওয়া যেকোনো বিদ্রোহী ক্রিকেটারকে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া। সত্তরের দশকে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক অনেক কম হওয়ায় অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, বিশেষত যেসব খেলোয়াড় তাদের ক্যারিয়ারের অন্তিম পর্যায়ে ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে বিদ্রোহী সফর অব্যাহত থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে অগ্রগতি হয় এবং স্পষ্ট হয়ে যায় যে বর্ণবাদ শেষ হচ্ছে। ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে (যা তখন নেলসন ম্যান্ডেলার অধীনে “রেইনবো নেশন” হিসেবে পরিচিত ছিল) আন্তর্জাতিক খেলায় পুনরায় স্বাগত জানানো হয়েছিল।

বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট

শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের অর্থের সমস্যা ১৯৭৭ সালের আরও একটি ক্রিকেটীয় সঙ্কটের মূল কারণ ছিল, যখন অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কেরি প্যাকার টিভি অধিকার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ঝুঁকছেন। খেলোয়াড়দের দেওয়া কম পারিশ্রমিকের সুযোগ নিয়ে প্যাকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাঠামোর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ক্রিকেট লিগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি সেরা খেলোয়াড়কে স্বাক্ষর করিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়োগ দিয়েছিলো এবং তাদের বিশ্ব-মানের অন্যান্য খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষতা প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়। এই বিদ্বেষটি কেবল ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং “বিদ্রোহী” খেলোয়াড়দের প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছিল। যদিও অনেকে দেখতে পেলেন যে তাদের জাতীয় দলগুলি তাদের ছাড়া এগিয়ে গেছে। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে খেলোয়াড়ের উচ্চতর বেতন এবং রঙিন কিট এবং রাতের ম্যাচের মতো উদ্ভাবন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 

১৮৫৯ সালের আমেরিকাগামী ইংরেজ ক্রিকেট দল
১৮৫৯ সালের আমেরিকাগামী ইংরেজ ক্রিকেট দল
একবিংশ শতাব্দীর ক্রিকেট

২০০১ সালের জুনে, আইসিসি একটি “টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিল” প্রবর্তন করে এবং ২০০২ সালের অক্টোবরে একটি “ওয়ানডে আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ সারণী”। আইসিসি র‍্যাঙ্কিং থেকে বুঝা যায়, বিভিন্ন ক্রিকেট ফর্ম্যাটগুলি বেশিরভাগ প্রাক্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দেশগুলিতে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস সহ নতুন অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে, আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তিতে পূর্ণ আইসিসির সদস্যপদ প্রাপ্ত দেশগুলির সংখ্যা বারোটিতে উন্নীত হয়েছিল।

বিভিন্ন ফরম্যাটে প্রতিযোগিতায় সক্ষম আরও বেশি জাতীয় দল তৈরি করার লক্ষ্যে আইসিসি তার উন্নয়ন কর্মসূচিটি প্রসারিত করেছে। উন্নয়নের প্রচেষ্টাসমূহ প্রধানত আফ্রিকান ও এশীয় দেশসমূহ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে। ২০০৪ সালে, আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে ১২ টি দেশের কাছে নিয়ে আসে, বেশিরভাগ প্রথমবারের মতো। ক্রিকেটের নতুন উদ্ভাবনটি টি-টোয়েন্টি, যা মূলত সান্ধ্য বিনোদন। এটি এখন পর্যন্ত প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং ম্যাচগুলিতে বড় দর্শক উপস্থিতি আকর্ষণের পাশাপাশি টিভির দর্শকদের হিসাবে ভাল রেটিং অর্জন করেছে। উদ্বোধনী আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতে টি-টোয়েন্টি লিগ গঠন – ২০০৭ সালে শুরু হওয়া অনানুষ্ঠানিক ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ এবং ২০০৮ সালে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ – ক্রিকেটের ভবিষ্যতে তাদের প্রভাব নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক জল্পনা জাগিয়ে তোলে।

মহিলাদের ক্রিকেট

মহিলাদের ক্রিকেট দলগত ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত ক্রিকেটের একধরনের পদ্ধতি। এতে শুধুমাত্র মহিলারাই খেলে থাকেন। রিডিং মার্কারি পত্রিকায় ২৬ জুলাই, ১৭৪৫ তারিখে প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ব্রামলে ও হ্যাম্বলডনের এগারজন মহিলা সাদা পোশাক পরিধান করে খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ১৮৮৭ সালে হোয়াইট হিদার ক্লাব নামে ইয়র্কশায়ারে প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট ক্লাব সম্বন্ধে জানা যায়। তিন বছর পর অরিজিনাল ইংলিশ লেডি ক্রিকেটার্স দল ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করে। ১৮৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মহিলাদের ক্রিকেট লীগ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে মহিলাদের ক্রিকেট দল পাইওনিয়ার্স ক্রিকেট ক্লাব গঠন করা হয়। কানাডার ভিক্টোরিয়ায়ও মহিলাদের ক্রিকেট দল গঠন করা হয় যারা বিকন হিল পার্কে খেলেছিল।

ইতিহাস

১৯৫৮ সালে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল গঠন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল – বিশ্বের সকল মহিলাদের ক্রিকেট দলের মাঝে সম্বন্বয় সাধন করা। মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ইংরেজ মহিলা ক্রিকেট সংস্থার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল। এ সংস্থাটি ৩২ বছর পূর্ব থেকেই একই ধরনের কাজ করতো। ২০০৫ সালে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে একীভূত হয়। এরফলে মহিলাদের ক্রিকেট পরিচালনা ও উন্নয়ন আরও সহজতর হয়।

মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

ডিসেম্বর, ১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম মহিলাদের টেস্ট ম্যাচ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেটারগণ অংশ নিয়েছিলেন। পরের বছর নিউজিল্যান্ড জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল যোগ দেয়। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসের মহিলা ক্রিকেটারগণ দশম মহিলাদের টেস্টভূক্ত দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অংশ নেয়। ১৯৭৩ সাল থেকে মহিলাদের একদিনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এরফলে দ্রুত মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচিতি পেতে থাকে। মহিলাদের ওডিআইয়ের প্রচলনের পর টেস্ট ক্রিকেটের তুলনায় আট গুণ বেশি খেলা হয়। এ পর্যন্ত নয়বার মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের শিরোপাগুলো নিজেদের করে নিয়েছে। ২০০৪ সালে নতুন ধরনের ক্রিকেটের প্রচলন হলে, মহিলাদের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটেরও প্রচলন হয়। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ খেলাটি খুব কমই সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। ২০০৬ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত মাত্র চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরের তিনবছর এটি দ্রুতলয়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০০৭ সালে ৬টি, ২০০৮ সালে ১০টি ও ২০০৯ সালে ত্রিশটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, ২০০৯ সালে মহিলাদের প্রথম বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ICC
ICC
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল

ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথমদিকে ক্রিকেটএর নিয়মকানুন তৈরির জন্য কোনো বিশেষ সংস্থা ছিলোনা তবে সেই স্থনটিকেপূর্ণ করার জন্য ১৫জুন ১৯০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় যাকে অনেকে ICC বলে থাকে। বর্তমানে যার কার্যালয় দুবাইয়ে অবস্থিত।

এই সংস্থাটি ক্রিকেট সম্পর্কিত নিয়মগুলি তৈরি, পরিবর্তন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়বদ্ধ। আম্পায়ার নিজেই আইসিসি নিযুক্ত হন। আমরা যদি টুর্নামেন্টের কথা বলি, আইসিসি দ্বারা বিভিন্ন ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে আইসিসি বিশ্বকাপ, আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মোট ১২ টি দেশের ক্রিকেট দলকে আইসিসি পূর্ণ সদস্যপদ দিয়েছে। এ ছাড়া আইসিসির ৩৮ জন সহযোগী সদস্য রয়েছেন। এই সদস্য দলগুলি কেবল ওয়ানডে খেলতে পারে এবং পরবর্তীকালে এই সদস টিমগুলি ভালো Rank করলে ভবিষতে ইসিসি ম্যাচগুলি খেলতে পারে ।এছাড়াও আইসিসির ৫৭ অনুমোদিত সদস্য রয়েছে। আইসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে।

পূর্ণ সদস্যদের অর্থ এই দলগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটের সকল ফর্ম্যাটে খেলতে পারে। এই সমস্ত দলটি নিম্নরূপ –
ইংল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া,ভারত , দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ,ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ,শ্রীলঙ্কা ,জিম্বাবুয়ে , বাংলাদেশ ,আফগানিস্তান ,আয়ারল্যান্ড

সূত্র : উইকিপিডিয়া,বেঙ্গালিগ্যান

 

 

 

 

 

Related posts

ফুলবাড়ী; আন্দোলনের তীর্থস্থান

News Desk

পনেরোই আগস্টের সকালে কী ঘটেছিলো

News Desk

ভ্যাক্সিনেশনের ধারণা এলো যেভাবে

News Desk

Leave a Comment