যুগে যুগে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি থেকে মানবসভ্যতা এগিয়ে নিতে অনন্য অবদান রেখেছে। প্রতিটি ধর্ম নারীদের অধিকার ও সম্মানের কথা বলে। নারীদের অধিকারবঞ্চিত করা আইনের চোখে অপরাধ। নারী মানে সহজ-সরল এমনটায় ধারণা সবার। একটু কোমল, শান্ত হবে নারীদের ব্যবহার এমনটাই ভাবে প্রায় সবাই। নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালবাস ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও কম নেই। নারী যদি হয়ে উঠে হিংস্র বা কুখ্যাত কোন খুনি, তাহলে স্বভাবতই আমাদের মনে সেগুলো ভয়াবহ চিত্র হিসেবেই দাগ কাটবে। এই পৃথিবীতে এমন নারী রয়েছেন যাদের নৃশংসতা ও হিংস্রতা হার মানিয়েছে সবকিছুকে। তাদের গল্প কেড়ে নেয় রাতের ঘুম। যারা কুখ্যাত নারী হিসেবেই বিশ্বে পরিচিত। তাদের গা শিউরানো ইতিহাস আপনাকে চমকে দেবে। সে রকমই কয়েকজন নারীর লোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরা হলো।
ক্যাথেরিন নাইট
বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম একজন নারী হিসেবেই গণ্য করা হয় অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণকারী নারী ক্যাথরিন নাইটকে, যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় মৃত্যুর বিধান না থাকায়। তার বাবাও ছিলেন একজন মদ্যপ। প্রকাশ্য তিনি তার স্ত্রীকে দিনে ১০ বার পর্যন্ত ধর্ষণ করেছিলেন। বাবার মতো অন্যায়ের পথে মেয়েও নেমেছিলেন। ক্যাথরিন তার প্রথম স্বামীর দাঁত উপড়ে ফেলার পর তার হিংস্রতার প্রমাণ আসতে শুরু করে। যখন দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় তখন তিনি তার স্বামীর আট সপ্তাহ বয়সী একটি কুকুরের জিহ্বা কেটে নেন এবং পরে কুকুরের চোখ তুলে ফেলেন। কয়েক মাস পরে জন চার্লস প্রাইস নামে একজনের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রাইস অনেক ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন। ক্যাথরিনের হিংস্রতা সম্বন্ধে আগে থেকেই প্রাইস অবহিত ছিলেন। প্রাইসের সঙ্গে সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই ক্যাথরিন। একপর্যায়ে ক্যাথরিন ৩৭ বার ছুরিকাঘাতে প্রাইসকে হত্যা করে। এরপর প্রাইসের মৃতদেহের চামড়া ছাড়িয়ে বেডরুমের দরজার পেছনের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, প্রাইসের মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে সেটা দিয়ে স্যুপ রান্না করে বাচ্চাদের জন্য রেখে বাইরে চলে যান ক্যাথরিন। কিন্তু বাচ্চারা বাড়ি ফেরার আগেই পুলিশ এসে হতভাগ্য প্রাইসের মরদেহ উদ্ধার করে। তখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় তাকে প্যারল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এলিজাবেথ ব্যাথোরী
পৃথিবীর ভয়ানক মহিলাদের সম্পর্কে বলতে গেলেই যার নাম প্রথমে আসে তিনি হলেন এলিজাবেথ বাথোরী। ভদ্রমহিলা হাঙ্গেরির বিখ্যাত ব্যাথোরি পরিবারে ১৫৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এলিজাবেথকে পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার হিসেবে ধরা হয়। ১৫৭৫ সালে ফেরেন্স নাডাসডি নামের এক ব্যাক্তির সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর এলিজাবেথের স্বামী হাঙ্গেরীর সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যুদ্ধে চলে যান। এরপর থেকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব ও শাসনভার তার কাঁধে এসে পড়ে। স্বামীর অবর্তমানে তিনি একাই ব্যবসাসহ সবকিছু দেখাশোনা করতেন।
বেশ চড়া বেতন দিয়ে তিনি বাসায় কুমারী মেয়েদের কাজের লোক হিসেবে রাখতেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যে মেয়েই কাজের জন্য বাড়ির ভেতর যায় সে আর ফিরে আসে না। পড়ে জানা যায়, এলিজাবেথ তার ত্বক ভালো রাখার জন্য কুমারী মেয়েদের রক্ত দিয়ে স্নান করতেন। রক্ত দিয়ে গোছল করার আগে তিনি মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন এবং এসময় তিনি মেয়েদের চিৎকার উপভোগ করতেন। প্রায় ২৫ বছর এভাবে চলার পর রাজা ম্যাথিয়াস ব্যাপারটা জানতে পারেন। এরপর এলিজাবেথের বাসা থেকে মৃত, অর্ধমৃত মেয়ে উদ্ধার করা হয়। এই ২৫ বছরে এলিজাবেথ প্রায় ৬৪০ জন কুমারী মেয়েকে খুন করেন। ১৬১৪ সালে ৪ বছর গৃহবন্দী অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আর এভাবে শেষ হয় এলিজাবেথ ব্যাথোরী নামে এক কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের উপখ্যান। গৃহবন্ধী ছিলেন কিন্তু উঁচু সামাজিক মর্যাদার কারণে প্রকাশ্য বিচারের সম্মুখিন হতে হয়নি তাকে।
ইরমা গ্রেস
ভদ্রমহিলা ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন হিটলারের রাভেন্সব্রুক ক্যাম্পের সুপারভাইজার। এরপর সেখান থেকে বদলী হয়ে আসেন আউসুইটয ক্যাম্পে। সেখানে তিনি দায়িত্ব পান ৩০,০০০ বন্দী ইহুদী নারীর। তার কাজের মধ্যে ছিল পোষা কুকুর দিয়ে নারী হত্যা, বিকৃত যৌনাচার, লাইন ধরে নারীদের দাঁড় করিয়ে গুলি প্রাকটিস, অবাধ্য বন্দীদের গ্যাস চেম্বারে প্রেরণ।
তার এই রকম হত্যাজজ্ঞের জন্য তিনি “Bitch of Belsen” নামে ব্যাপক পরিচিতি পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যু কার্যকর করা হয়।
ইলসে কোচ
ভদ্রমহিলা ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কার্ল কোচের স্ত্রী। স্বামীর ক্ষমতা ছাড়াও তিনি নিজে ছিলেন বুচেনওয়ার্ল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সুপারভাইজার। সেই সুবাদে সেখানকার বন্দীদের মধ্যে যাদের শরীরে ট্যাটু আঁকা থাকতো তাদের আর যাদের চামড়া সুন্দর তাদের আলাদা করে রাখতেন।
তারপর যাদের শরীরে ট্যাটু থাকতো তাদের খুন করে ট্যাটুটি চামড়া সহ কেটে সংরক্ষণ করতেন। শুধু তাই না শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও তিনি সংগ্রহ করতেন। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় শখ ছিল সুন্দর চামড়াওয়ালা বন্দীদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভার, সাইড ল্যাম্প, বালিশের কভারসহ অন্যান্য জিনিস বানানো।
১৯৪৭ সালের ৩০শে জুন তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। কুখ্যাত এই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৪৩ সালের ২৪শে অগাস্ট। কিন্তু প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালের ৩০শে জুন আমেরিকান সৈন্যরা তাকে আবার গ্রেফতার করে। শুরু হয় তার বিচার। এবার তার কুকীর্তির প্রমাণ পাওয়া যায় আর পাওয়া যায় তার সেই মানুষের চামড়ার তৈরি জিনিসপত্র। ১৯৪৭ সালের ৩০শে জুন তার যাবজ্জীবন জেল হয়। জেলে থাকাকালীন ১৯৬৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় এই বিকৃত মস্তিস্কের মহিলা।
মেরি এন কটন
ব্রিটেনের প্রথম মহিলা ক্রমিক খুনি, ১৮৩২ সালে ডার্হাম কাউন্টির ল’মোর্সলে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। ২০ বছর বয়সে উইলিয়াম মউব্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ডেবনের প্লেমাউথ অঞ্চলে সংসার শুরু করেন। এই দম্পতি ৫ সন্তানের জন্ম দেয়, যাদের মধ্যে ৪ জনই মারা যায়। উত্তর পশ্চিমের দিকে সরে গেলেও দুঃখ তাদের পিছু ছাড়ল না।
সন্তানদের পিছু পিছু উইলিয়ামও মারা যায় ১৮৬৫ সালে। তার অবশিষ্ট দুই সন্তানের একজন ও তার ২য় স্বামী জর্জও একই রোগে মারা যায়। তারপর তার পরবর্তী সময়ে তার আরও বারো সন্তান, তিন স্বামী এক বন্ধু, এক প্রেমিক সকলেই একই রোগ অর্থাৎ পাকস্থলীর প্রদাহজনিত জ্বরে মারা যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিকরা আবিস্কার করে সকলকে সে আর্সেনিক বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে এবং এই অপরাধে ২৪ মার্চ ১৮৭৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বেলে গানিস
৬ ফুট উচ্চতার ৯০ কেজি ওজন বিশিষ্ট এই নারী আমেরিকার অন্যতম ভয়ংকর একজন সিরিয়াল খুনি। নরওয়ের বংশোদ্ভুত এই শক্তিশালী নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে তার দুই স্বামী ও সকল সন্তানদের খুন করার অভিযোগ আসে।
খুনের কারণ খুব সহজ, লাইফ ইন্স্যুরেন্সের টাকা উত্তোলনের সুবিধার্থেই সে এসব খুন করে। এভাবে সে প্রায় শতাধিক ইন্স্যুরেন্স পলিসি উত্তোলন করে। তার অতিমানবীয় অবয়বের জন্য আমেরিকার অপরাধ ইতিহাসে তাকে নারী ‘ব্লুবিয়ার্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়
বিভারলি এলিট
জন্ম ১৯৬৮ সালে যিনি ব্রিটেনের সবচেয়ে পরিচিত সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে একজন ছিলেন। বিভারলি একজন নার্স ছিলেন তিনি ৪ টি শিশুকে মার্ডার করেছিলেন এবং ৫টি শিশুকে ভয়াবহভাবে আহত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৩ টি শিশুকে ৫৮ দিন ধরে অত্যাচার করেছিলেন ধরা খাওয়ার আগ পর্যন্ত।
যেহেতু তিনি একজন নার্স ছিলেন তাই এই কাজটা তিনি বেশ সহজেই করতে পারতেন। তবে ঠিক কি কারণে তিনি শিশুদের এমন নির্মমভাবে খুন করতেন তা জানা যায় নি। ধারণা করা হয় তার মেন্টাল ডিসঅর্ডার ছিলো।
জেন টপান
১৯০১ সালে জেন টপান স্বীকার করেন যে তিনি ৩১টি খুনের জন্য দায়ী। তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত একজন নার্স যিনি রোগীদের অজান্তে তাদের ওপর বিভিন্ন বিপদজনক পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন। তিনি অবৈধভাবে রোগীদের মরফিন এবং অ্যাট্রোপিন দিয়ে তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে এভাবে রোগীদের মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যেতে দেখে তিনি এক ধরণের উত্তেজনা অনুভব করতেন। হাসপাতাল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাবার পরে আসলে তিনি খুন করা শুরু করেন।
বিষ প্রয়োগে প্রথমে নিজের বাড়িওয়ালাকে খুন করেন, এরপর নিজের পালক বোনকে। বোনের স্বামীকে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে তাকেও বিষ প্রয়োগ করেন এবং তারপর তাকে সারিয়ে তোলার চেস্তা করেন। একজন বৃদ্ধ রোগীকে বিষ দেবার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি সব স্বীকার করেন। তাকে অপ্রকৃতিস্থ রায় দেওয়া হয় এবং মানসিক রোগের এক প্রতিষ্ঠানে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।
রোজমেরি পাউলিন রোজ ওয়েস্ট
১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া একজন বৃটিশ সিরিয়াল কিলার, যিনি রোজ নামে পরিচিত। রোজের বাবা ছিলেন একজন সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত। রোজের বয়স যখন ১৬ তখন থেকে বাবা তার ওপর চরমভাবে এবং প্রতিনিয়তই যৌন নির্যাতন চালাত। অন্যদিকে রোজের হিংস্রতাও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। তার নৃশংসতার হাত থেকে নিজের কন্যা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। তার ভয়ঙ্কর কীর্তিকলাপের জন্য ব্রিটেনের ২৫ গ্লুচেস্টার ক্রওয়েলের বাড়িটি হাউস অব হরর নামে পরিচিত।
এই সিরিয়াল কিলার মহিলার স্বামীও তাকে কিলিংয়ের কাজে সহযোগিতা করতো। দুজনকেই পরবর্তীতে মানসিকভাবে বিকৃত হিসেবে অভিহিত করা হয়। রাতের অন্ধকারে শিকারের সন্ধানে বের হতেন রোজ। তারপর সুন্দর স্বাস্থ্যবান কোন ছেলেকে ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন। প্রথমে ছেলেটি যৌন নিপীড়নের শিকার হতো রোজ এবং তার স্বামীর হাতে। এরপর ছেলেটিকে খুন করত তারা। ধারণা করা হয়, মানসিক বিকারগ্রস্ত রোজের হাতে ১২টিরও বেশি খুন হয়েছে।
দারিয়া সাল্টিকোভা
দারিয়া সাল্টিকোভা রাশিয়ার সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক বিকৃত মস্তিষ্কের নারী। এই নারী বেঁচে ছিলেন ১৭৩০-১৮০১ সাল পর্যন্ত। তিনি শতাধিক দাস-দাসীকে হত্যা করেন। তাকে প্রায় সময় হাঙ্গেরির ‘ব্লাড কাউন্টেস’ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। তার নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাদ যায়নি দুধের শিশুটিও। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হত ছোট্ট সেই শিশুকে। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই মজা লুটতেন বর্বরতম এই নারী। রানী হয়েও রাজ্যবাসীর রক্ষক না হয়ে তিনি ছিলেন ভক্ষক। তার ভয়ে কাঁপত গোটা মস্কোবাসী।
আজো ইতিহাসে এক সিরিয়াল কিলার হিসেবে তার পরিচিতি। যিনি মানুষকে হত্যা করে বড়ই আনন্দ পেতেন। মৃত্যু যন্ত্রণায় যখন সবাই কাতরাতো এই নারী তখন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতেন। ক্রীতদাসদের কাউকে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দিতেন আবার কাউকে গরম পানিতে। রাশিয়ার এক উচ্চ বংশীয় নারী ছিলেন তিনি। নিজের অন্তরের জ্বালা মেটাতে তিনি সুন্দরী নারী কিংবা কিশোরীদেরকে এভাবেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেন। কারণ তিনি ব্যক্তিজীবনে সুখী ছিলেন না। অতীতে তিনিও একজন প্রেমপিয়াসী রমণী ছিলেন। অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী ছিলেন। সাল্টিকোভার সেই কোমল মনকে কঠিন করে দিয়েছিল তারই প্রেমিক!
ফুলন দেবী
তার পরিচিতি দস্যুরানী হিসেবে। কুখ্যাত খুনির তালিকায় তার নামটা না এলেও পারত। কারণ প্রথম জীবনের বঞ্চনা এবং পরের জীবনের বিদ্রোহ তার প্রতি মানুষের একটা সহমর্মিতা তৈরি করেছে। এরপরও কেবল প্রতিশোধের নেশায় একের পর এক মানুষ হত্যা দস্যুরানী ফুলন দেবীকে ইতিহাসের অন্যতম খুনি হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার জন্ম ১৯৬৩ সালে ভারতের এক নিচু পরিবারে। দারিদ্র্য এবং সামাজিক কারণে জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রামের মুখোমুখি হয় ফুলন। মাত্র এগারো বছর বয়সে বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ফুলনের গ্রাম এবং আশপাশের একাধিক গ্রামে ঠাকুর বংশের জমিদারী ছিল। আর জমিদারের লোকরা প্রায়ই গ্রামের দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফসল নিয়ে নিত এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাত। ফুলন এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে দখলকারীদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঠাকুররা তাকে ধরে নিয়ে যায় বেমাই নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে।
এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ঠাকুর ও তার লোকরা ফুলনকে গণধর্ষণ করে। প্রতি রাতেই ফুলন জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলত এ পাশবিকতা। ১৬ দিনের মাথায় এক রাতে নির্যাতন শেষে তারা ফুলনকে মৃত মনে করে ফেলে রাখে। আর প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ফুলন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন ফুলনের বয়স ছিল মাত্র সতেরো। পালিয়েও রক্ষা পেলেন না ফুলন। আরেকবার ধরা পড়লেন এক দস্যুদলের হাতে। দস্যুদের নেতা বাবুর নজর পড়ে ফুলনের ওপর। সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ফুলনের ওপর। কিন্তু আরেক দস্যু এতে বাধা হয়ে দাঁড়াল। বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করে সে। এরপর ফুলনের সঙ্গে বিক্রমের বিয়ে হয় এবং শুরু হয় ফুলনের নতুন জীবন। রাইফেল চালানো শিখে পুরোদস্তুর দস্যু হয়ে ওঠে। ফুলন তার আলাদা বাহিনী নিয়ে প্রথম হামলা চালায় তার সাবেক স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখে।
গেসচে গটফ্রাইড
এই জার্মান সিরিয়াল কিলারকে জনসমক্ষে ১৮৩১ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই নারী বিষ প্রয়োগে তার সন্তানদের, বাবা-মাকে, তার দুই স্বামী এবং এক বন্ধুকে হত্যা করেন। তিনি সেবিকা হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন।
তার এই হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের আগে সবাই তাকে ‘ব্রিমেনের দেবদূত’ বলে ডাকতেন। যাদের সেবা করতেন তাদের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মারতেন গেসচে।
অ্যামেলিয়া ডাইয়ের
ব্রিটেনের এই নারীকে একটি খুনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু তিনি শত শত শিশুকে মেরে ফেলিছিলেন। একটি শিশু হাসপাতালে কাজ করেতেন। সেই সুবাদে শিশুদের কাছে পেতেন। বিভিন্ন তদন্তে ধারণা করা হয়, তার হাতে ৪০০ শিশু প্রাণ হারায়।
ইতিহাসের ভয়ংকরতম সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে তিনি একজন। ১৮৯৬ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মারিয়া সোয়ানেনবার্গ
এই ডাচ সিরিয়াল কিলারের জীবনকাল ছিল ১৮৩৯-১৯১৫ পর্যন্ত। নিজের পরিবারের সদস্যসহ ডজন ডজন খুন করে গেছেন তিনি। ধারণা করা হয়, তার হাতে খুন হয় ৬০ জনের বেশি মানুষ।
১৮৮০ এর দশকে বিষাক্ত আর্সেনিকের প্রয়োগে একের পর এক মানুষ মারতে থাকেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০২ জন। মারা যান ২৭ জন। নিজের মাকেও মেরে ফেলেছিলেন আর্সেনিকের প্রয়োগে।
হেলেন জেগাদো
এই ফ্রেঞ্চ নারী বেঁচেছিলেন ১৮০৩-১৮৫২ সালের মধ্যে। তিনিও আর্সেনিকের মাধ্যমে ৩৬ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেন। বিশেষজ্ঞরা তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে মনে করতেন। পরে তাকে ১৮৫২ সালে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তথ্য সূত্রঃ বিবিসি নিউজ , ডেইলি হান্ট